ঢাকা , বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
Logo আসুন সবাই মিলে মিশে কাজ করি: জয়নুল আবদিন Logo ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ হারালে আরো ৫৪ বছর অপেক্ষা করতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা Logo সিঙ্গাপুর থেকে এক কার্গো এলএনজি কিনবে সরকার Logo সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসিকে শক্ত অবস্থানে থাকার আহ্বান মঈন খানের Logo সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপে দেড় লাখ জনসংখ্যার কুরাসাও Logo ফের কমল স্বর্ণের দাম, আজ থেকে কার্যকর Logo শেখ মুজিব দেশকে পাকিস্তানের বদলে ভারত বানিয়েছিল: রাশেদ প্রধান Logo আদানি গ্রুপের সিঙ্গাপুরে সালিশি কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা Logo সংস্কারের একক দাবি সংকীর্ণ মানসিকতা, ৩১ দফায় তা চূড়ান্ত হয়েছে: মির্জা ফখরুল Logo চানখারপুলে ছয় হত্যায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শেষ, জেরা ২৩ নভেম্বর
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ: প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগে একাধিক বাধা

  • মো. শাহজাহান
  • আপডেট সময় ০৮:০৫:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • ৩৩১ বার পড়া হয়েছে

স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (গ্রেড-৪) ও নির্বাহী প্রকৌশলী (গ্রেড-৫) পদে পদোন্নতি-পদায়নে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের স্মারক নং ২৯.০০.০০০০.১৪৩.০৫.০০১.১৫.৮৫ প্রদত্ত নথিতে প্রকৌশলীদের নামের যে তালিকা দেয়া হয়েছে তা প্রহসনমূলক বলে দাবী করেছে ডিপিএইচইর একাধিক প্রকৌশলী।

অভিযোগ অনুযায়ী, তালিকায় এমন কিছু কর্মকর্তার নাম রয়েছে, যাদের পূর্ববর্তী পদে যোগদানের তারিখ বা ব্যাচ অপেক্ষাকৃত সিনিয়র (জ্যেষ্ঠ) কর্মকর্তাদের চেয়ে পরের। অর্থাৎ, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে (সুপারসিড করা হয়েছে)।

সংশ্লিষ্টদের মতে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জটিলতা এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ বিদ্যমান। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (গ্রেড-৪) এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (গ্রেড-৫) পদে পদোন্নতি/বদলি/পদায়ন সংক্রান্ত তালিকায় (প্রদত্ত দাপ্তরিক নথিতে দৃশ্যমান) সরকারি নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা এবং জ্যেষ্ঠতা নীতি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব তালিকার কিছু কর্মকর্তার জ্যেষ্ঠতা প্রকল্পে যোগদানের তারিখ থেকে গণনা করা হয়েছে, যার ফলে পরবর্তীতে সরাসরি বিসিএস-এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা তাদের জ্যেষ্ঠতা হারিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এটি জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে বলে মনে করছে ডিপিএইচইর একাধিক প্রকৌশলী।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্প হতে রাজস্ব বাজেট আত্তীকৃত কর্মকর্তাদের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ক্যাডার নিয়োগ বন্ধ ছিল। ফলে অধিদপ্তরের কাজে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষে প্রকল্পে ডিগ্রি প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরিবিধি অনুযায়ি রাজস্ব বাজেটে অস্থায়িভাবে সৃজনকৃত পদ ও জনবলে ৩ বছরের মধ্যে স্থায়ী করার বিধান থাকলেও প্রশাসনিক দীর্ঘ সূত্রতার কারণে স্থায়ী করতে ৮-৯ বছর সময় অতিবাহিত হয়। ফলে অস্থায়ী রাজস্ব বাজেটে আত্তীকৃত জনবল নিয়মের বেড়াজালে জ্যেষ্ঠতা তালিকায় জুনিয়র হয়ে যাচ্ছে যা বৈষম্যের পর্যায়ে পড়ে। অথচ ৩ বছর পর কর্তৃপক্ষ স্থায়ীকৃত এবং জ্যেষ্ঠতা তালিকায় তাদের অবস্থান উপরে থাকতো। আবার অন্যদিকে কোনোকোনো কর্মকর্তা রাজস্ব বাজেটে পরে আত্তীকৃত হওয়া স্বত্ত্বেও তাদেরকে জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকায় উপরে অবস্থান দেখানো হচ্ছে যা বিধি বহির্ভূত এবং বৈষম্যমূলক।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সরকারি প্রকল্প থেকে সরাসরি রাজস্ব খাতে জনবল নিয়োগ বেশ কয়েক বছর আগে বন্ধ করেছে সরকার। আবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রেও সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা আছে। কিন্তু এসব বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে থাকা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দুটি ধাপে ১৪৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। ওই জনবলের বেশির ভাগ পদই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মিলে এই নিয়োগ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, এর আগে এই জনবল নিয়োগের অনুমতি চাওয়া হলে অর্থ বিভাগ নানা অসংগতি তুলে ধরে সেগুলোর বিষয়ে তথ্য চেয়ে পাঠায়। কিন্তু তথ্য না দিয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবার অর্থ বিভাগসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এবার এই নিয়োগের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনিশ্চয়তায় পড়তে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৮টি প্রকল্পে ৬১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ওই জনবলের মধ্যে ৫৯ জনকে প্রকল্প থেকে সরাসরি রাজস্ব খাতে আত্তীকরণ করা হয়। তবে আত্তীকরণ আদেশ জারির আগে অর্থ বিভাগের সম্মতি নেওয়া হয়নি। তাদের চাকরির ধারাবাহিকতা গণনা করে পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা বাবদ ২৩ কোটি ৬৯ লাখ ৮৩ হাজার ১৩১ টাকা চেয়ে অর্থ বিভাগে সম্প্রতি চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ ছাড়া একই অধিদপ্তরের ‘বাংলাদেশ আর্সেনিক মিটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই’ প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্প থেকে ৮৪ জনকে রাজস্ব খাতে নিয়োগের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। সব মিলিয়ে ১৪৩ জনকে প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়োগ দিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তার অনুমোদন চাইছে।
অর্থ বিভাগ বলছে, এই নিয়োগে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দাবি, এ ক্ষেত্রে আদালতের রায় ছিল। তাই প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এ নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তখন কিছু অসংগতি পেলে অর্থ বিভাগ থেকে ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল আরও কিছু তথ্য চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু ওই চিঠির আর উত্তর পাওয়া যায়নি। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মিলে এ নিয়োগ শেষ করে এখন অনুমোদন চাইছে। ফলে এ নিয়োগের বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে অনুমোদন পাওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা যোগ দেওয়ার পর থেকে একই পদে আছেন। ১২ বছর হয়ে গেল কোনো পদোন্নতি পাননি তাঁরা। অথচ যাঁরা ক্যাডার কর্মকর্তা নন, তাঁরা পদোন্নতি পেয়ে চলেছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্ত করে সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে পিএসসির মাধ্যমে ৩০, ৩১ ও ৩২তম বিসিএসে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

পদোন্নতিবঞ্চিত একাধিক ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি ক্যাডার অধিদপ্তর হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় নন-ক্যাডার ও প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে ক্যাডারভুক্তকরণ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিসিএসে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের ফাঁকে ফাঁকে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। সহকারী প্রকৌশলী পদে অল্পসংখ্যক ক্যাডার ও অধিক সংখ্যক নন-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়ায় ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ অধিদপ্তরে প্রকল্প থেকে আত্তীকৃত, ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের সংমিশ্রণে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পদোন্নতিবঞ্চিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার অভিযোগ, বিগত সরকারের আমলে কিছু প্রভাবশালী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রভাবে বেআইনিভাবে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের একাধিকবার ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমনকি যোগ্যতাসম্পন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে নন-ক্যাডারদের ক্যাডারভুক্তির পাঁচ মাসের মধ্যে তাঁদের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতিও দেওয়া হয়। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এসব অবৈধ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ক্যাডারে বিগত সরকারের আমলে জারি করা ক্যাডারমেন্টের প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে অ্যাডহক, এনক্যাডার, নন-ক্যাডার ও প্রকল্পের কর্মকর্তাদের উচ্চতর পদে পদায়নের সব আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়মিত করা ৩২ জন, ৫৮ জন নন-ক্যাডারসহ মোট ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্তির উদ্দেশ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে। যেখানে ভূতাপেক্ষিক ক্যাডারভুক্তির কোনো নির্দেশনা ছিল না। নিয়োগবিধি সংশোধনে এবং ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) গঠন ও ক্যাডার বিধিমালা, ১৯৮০’ সংশোধনপূর্বক সহকারী প্রকৌশলীর ক্যাডার পদ ৫০টি থেকে ২৩৫টিতে বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনেও কোনো ভূতাপেক্ষিক কার্যকারিতা দেওয়া হয়নি। এমনকি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় উক্ত ৯০ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার পদে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুপারিশ করেনি। বরং বিদ্যমান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার পর উক্ত ৯০ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে ক্যাডারভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে পিএসসি। তা সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০২২ সালে ৯০ কর্মকর্তাকে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে তাঁদের রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডারভুক্ত করে।
ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় থেকে এই ৯০ কর্মকর্তা ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার হয়ে যান ২০২২ সালে এসে। এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। যে সময় থেকে তাঁরা ক্যাডারভুক্ত, সে সময়ে ক্যাডারে পর্যাপ্ত পদই ছিল না। এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিদ্যমান ক্যাডার কর্মকর্তারা জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই ৯০ জনের মধ্যে অনেকে বিসিএস পরীক্ষাই দেননি। আবার কয়েকজন বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেও পদস্বল্পতার কারণে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। অথচ বিসিএস ক্যাডারদের কয়েক মাস আগে অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার পদে যোগদান করে তাঁরা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সিনিয়র হয়ে যান। এ ছাড়া এই অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওই গেজেট প্রকাশের পর থেকে তাঁদের অধীন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার জুনিয়র হয়ে যান।

ক্যাডার কর্মকর্তারা ২৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৯০ জনের এনক্যাডারমেন্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল, এনক্যাডার কর্মকর্তাদের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন সংশোধন ও পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিধিসম্মতভাবে পদোন্নতি প্রদানের দাবি জানান। তাঁরা মনে করেন এ সমস্যার সমাধান করা না হলে, বিদ্যমান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে নতুন যোগদান করা ৩১ জন ও ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে সুপারিশ করা ৫০ জন কর্মকর্তাও পরবর্তী সময় এ বৈষম্যের শিকার হবেন। অধিদপ্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রজ্ঞাপনে ক্যাডারভুক্তির তারিখ নির্দিষ্টকরণ করার দাবি জানান। যাতে নিয়োগবিধি সংশোধন স্বচ্ছ হয় ও পরবর্তী সময় দুর্নীতির প্রভাবমুক্ত থাকে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের এ ষড়যন্ত্রের পেছনে যেসব রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের হাত রয়েছে, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাঁদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তারমতে, আত্তীকৃত কর্মীদের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও বিতর্কবিহীন জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা প্রণয়ন করা, যা ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে যা আগেই করা উচিৎ ছিল। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের প্রথাম কাজ হবে- কাজের চাপ এবং প্রশাসনিক প্রয়োজন অনুযায়ী উচ্চ পদে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের মধ্যে যৌক্তিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

এজেএ

আসুন সবাই মিলে মিশে কাজ করি: জয়নুল আবদিন

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ: প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগে একাধিক বাধা

আপডেট সময় ০৮:০৫:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (গ্রেড-৪) ও নির্বাহী প্রকৌশলী (গ্রেড-৫) পদে পদোন্নতি-পদায়নে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের স্মারক নং ২৯.০০.০০০০.১৪৩.০৫.০০১.১৫.৮৫ প্রদত্ত নথিতে প্রকৌশলীদের নামের যে তালিকা দেয়া হয়েছে তা প্রহসনমূলক বলে দাবী করেছে ডিপিএইচইর একাধিক প্রকৌশলী।

অভিযোগ অনুযায়ী, তালিকায় এমন কিছু কর্মকর্তার নাম রয়েছে, যাদের পূর্ববর্তী পদে যোগদানের তারিখ বা ব্যাচ অপেক্ষাকৃত সিনিয়র (জ্যেষ্ঠ) কর্মকর্তাদের চেয়ে পরের। অর্থাৎ, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে (সুপারসিড করা হয়েছে)।

সংশ্লিষ্টদের মতে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জটিলতা এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ বিদ্যমান। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (গ্রেড-৪) এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (গ্রেড-৫) পদে পদোন্নতি/বদলি/পদায়ন সংক্রান্ত তালিকায় (প্রদত্ত দাপ্তরিক নথিতে দৃশ্যমান) সরকারি নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা এবং জ্যেষ্ঠতা নীতি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব তালিকার কিছু কর্মকর্তার জ্যেষ্ঠতা প্রকল্পে যোগদানের তারিখ থেকে গণনা করা হয়েছে, যার ফলে পরবর্তীতে সরাসরি বিসিএস-এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা তাদের জ্যেষ্ঠতা হারিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এটি জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে বলে মনে করছে ডিপিএইচইর একাধিক প্রকৌশলী।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্প হতে রাজস্ব বাজেট আত্তীকৃত কর্মকর্তাদের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ক্যাডার নিয়োগ বন্ধ ছিল। ফলে অধিদপ্তরের কাজে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষে প্রকল্পে ডিগ্রি প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরিবিধি অনুযায়ি রাজস্ব বাজেটে অস্থায়িভাবে সৃজনকৃত পদ ও জনবলে ৩ বছরের মধ্যে স্থায়ী করার বিধান থাকলেও প্রশাসনিক দীর্ঘ সূত্রতার কারণে স্থায়ী করতে ৮-৯ বছর সময় অতিবাহিত হয়। ফলে অস্থায়ী রাজস্ব বাজেটে আত্তীকৃত জনবল নিয়মের বেড়াজালে জ্যেষ্ঠতা তালিকায় জুনিয়র হয়ে যাচ্ছে যা বৈষম্যের পর্যায়ে পড়ে। অথচ ৩ বছর পর কর্তৃপক্ষ স্থায়ীকৃত এবং জ্যেষ্ঠতা তালিকায় তাদের অবস্থান উপরে থাকতো। আবার অন্যদিকে কোনোকোনো কর্মকর্তা রাজস্ব বাজেটে পরে আত্তীকৃত হওয়া স্বত্ত্বেও তাদেরকে জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকায় উপরে অবস্থান দেখানো হচ্ছে যা বিধি বহির্ভূত এবং বৈষম্যমূলক।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সরকারি প্রকল্প থেকে সরাসরি রাজস্ব খাতে জনবল নিয়োগ বেশ কয়েক বছর আগে বন্ধ করেছে সরকার। আবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রেও সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা আছে। কিন্তু এসব বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে থাকা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দুটি ধাপে ১৪৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। ওই জনবলের বেশির ভাগ পদই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মিলে এই নিয়োগ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, এর আগে এই জনবল নিয়োগের অনুমতি চাওয়া হলে অর্থ বিভাগ নানা অসংগতি তুলে ধরে সেগুলোর বিষয়ে তথ্য চেয়ে পাঠায়। কিন্তু তথ্য না দিয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবার অর্থ বিভাগসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এবার এই নিয়োগের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনিশ্চয়তায় পড়তে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৮টি প্রকল্পে ৬১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ওই জনবলের মধ্যে ৫৯ জনকে প্রকল্প থেকে সরাসরি রাজস্ব খাতে আত্তীকরণ করা হয়। তবে আত্তীকরণ আদেশ জারির আগে অর্থ বিভাগের সম্মতি নেওয়া হয়নি। তাদের চাকরির ধারাবাহিকতা গণনা করে পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা বাবদ ২৩ কোটি ৬৯ লাখ ৮৩ হাজার ১৩১ টাকা চেয়ে অর্থ বিভাগে সম্প্রতি চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ ছাড়া একই অধিদপ্তরের ‘বাংলাদেশ আর্সেনিক মিটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই’ প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্প থেকে ৮৪ জনকে রাজস্ব খাতে নিয়োগের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। সব মিলিয়ে ১৪৩ জনকে প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়োগ দিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তার অনুমোদন চাইছে।
অর্থ বিভাগ বলছে, এই নিয়োগে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দাবি, এ ক্ষেত্রে আদালতের রায় ছিল। তাই প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এ নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তখন কিছু অসংগতি পেলে অর্থ বিভাগ থেকে ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল আরও কিছু তথ্য চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু ওই চিঠির আর উত্তর পাওয়া যায়নি। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মিলে এ নিয়োগ শেষ করে এখন অনুমোদন চাইছে। ফলে এ নিয়োগের বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে অনুমোদন পাওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা যোগ দেওয়ার পর থেকে একই পদে আছেন। ১২ বছর হয়ে গেল কোনো পদোন্নতি পাননি তাঁরা। অথচ যাঁরা ক্যাডার কর্মকর্তা নন, তাঁরা পদোন্নতি পেয়ে চলেছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্ত করে সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে পিএসসির মাধ্যমে ৩০, ৩১ ও ৩২তম বিসিএসে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

পদোন্নতিবঞ্চিত একাধিক ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি ক্যাডার অধিদপ্তর হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় নন-ক্যাডার ও প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে ক্যাডারভুক্তকরণ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিসিএসে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের ফাঁকে ফাঁকে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। সহকারী প্রকৌশলী পদে অল্পসংখ্যক ক্যাডার ও অধিক সংখ্যক নন-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়ায় ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ অধিদপ্তরে প্রকল্প থেকে আত্তীকৃত, ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের সংমিশ্রণে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পদোন্নতিবঞ্চিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার অভিযোগ, বিগত সরকারের আমলে কিছু প্রভাবশালী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রভাবে বেআইনিভাবে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের একাধিকবার ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমনকি যোগ্যতাসম্পন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে নন-ক্যাডারদের ক্যাডারভুক্তির পাঁচ মাসের মধ্যে তাঁদের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতিও দেওয়া হয়। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এসব অবৈধ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ক্যাডারে বিগত সরকারের আমলে জারি করা ক্যাডারমেন্টের প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে অ্যাডহক, এনক্যাডার, নন-ক্যাডার ও প্রকল্পের কর্মকর্তাদের উচ্চতর পদে পদায়নের সব আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়মিত করা ৩২ জন, ৫৮ জন নন-ক্যাডারসহ মোট ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্তির উদ্দেশ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে। যেখানে ভূতাপেক্ষিক ক্যাডারভুক্তির কোনো নির্দেশনা ছিল না। নিয়োগবিধি সংশোধনে এবং ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) গঠন ও ক্যাডার বিধিমালা, ১৯৮০’ সংশোধনপূর্বক সহকারী প্রকৌশলীর ক্যাডার পদ ৫০টি থেকে ২৩৫টিতে বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনেও কোনো ভূতাপেক্ষিক কার্যকারিতা দেওয়া হয়নি। এমনকি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় উক্ত ৯০ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার পদে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুপারিশ করেনি। বরং বিদ্যমান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার পর উক্ত ৯০ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে ক্যাডারভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে পিএসসি। তা সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০২২ সালে ৯০ কর্মকর্তাকে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে তাঁদের রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডারভুক্ত করে।
ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় থেকে এই ৯০ কর্মকর্তা ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার হয়ে যান ২০২২ সালে এসে। এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। যে সময় থেকে তাঁরা ক্যাডারভুক্ত, সে সময়ে ক্যাডারে পর্যাপ্ত পদই ছিল না। এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিদ্যমান ক্যাডার কর্মকর্তারা জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই ৯০ জনের মধ্যে অনেকে বিসিএস পরীক্ষাই দেননি। আবার কয়েকজন বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেও পদস্বল্পতার কারণে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। অথচ বিসিএস ক্যাডারদের কয়েক মাস আগে অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার পদে যোগদান করে তাঁরা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সিনিয়র হয়ে যান। এ ছাড়া এই অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওই গেজেট প্রকাশের পর থেকে তাঁদের অধীন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার জুনিয়র হয়ে যান।

ক্যাডার কর্মকর্তারা ২৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৯০ জনের এনক্যাডারমেন্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল, এনক্যাডার কর্মকর্তাদের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন সংশোধন ও পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিধিসম্মতভাবে পদোন্নতি প্রদানের দাবি জানান। তাঁরা মনে করেন এ সমস্যার সমাধান করা না হলে, বিদ্যমান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে নতুন যোগদান করা ৩১ জন ও ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে সুপারিশ করা ৫০ জন কর্মকর্তাও পরবর্তী সময় এ বৈষম্যের শিকার হবেন। অধিদপ্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রজ্ঞাপনে ক্যাডারভুক্তির তারিখ নির্দিষ্টকরণ করার দাবি জানান। যাতে নিয়োগবিধি সংশোধন স্বচ্ছ হয় ও পরবর্তী সময় দুর্নীতির প্রভাবমুক্ত থাকে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের এ ষড়যন্ত্রের পেছনে যেসব রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের হাত রয়েছে, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাঁদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তারমতে, আত্তীকৃত কর্মীদের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও বিতর্কবিহীন জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা প্রণয়ন করা, যা ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে যা আগেই করা উচিৎ ছিল। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের প্রথাম কাজ হবে- কাজের চাপ এবং প্রশাসনিক প্রয়োজন অনুযায়ী উচ্চ পদে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের মধ্যে যৌক্তিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

এজেএ