ঢাকা , মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোটকেন্দ্রে পুলিশ-সাংবাদিকের ওপর হামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

গজারিয়ার হোসেন্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকের ওপর হামলা ও মারধরের নেতৃত্ব দেওয়া হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু’কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার (১১ মে) রাত ৮ টার দিকে রাজধানীর শাজাহানপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনারস প্রতীকের প্রার্থী আমিরুল ইসলামের সমর্থক ছিলেন। মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সুপার বলেন, সাংবাদিক ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু পলাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি তিনি রাজধানীর শাহজাহানপুরে একটি বাড়িতে আত্মগোপনে আছেন। শনিবার রাত আটটার দিকে গোয়েন্দা ও থানা পুলিশের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে সেখানে তাকে গ্রেফতার করেছে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম গোলজার হোসেন। তিনি দৈনিক মানবজমিনের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি এবং মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি। গত ৮ মে বুধবার প্রথম ধাপে গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিনে সকালে তাঁর ওপর হামলা হয়।

মামলা এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু, তাঁর ভাই গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইকবাল হক ও ভাতিজা তানভীর হকরা ওই ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন । ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হকের নির্দেশে সোহেলকে মারধর শুরু করেন তাঁর ভাতিজা তানভীর এবং তাঁদের লোকজন।

ওই ঘটনার সময় পাশ থেকে ছবি ও ভিডিও করছিলেন গোলজার হোসেন। পরে তাঁরা গোলজারের ওপর হামলা করেন। তাঁর মুঠোফোন, পকেটে থাকা টাকা, আইডি ও পর্যবেক্ষক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করতে থাকেন। অন্য সাংবাদিকেরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে সাংবাদিকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতর আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁদের মারধরের জন্য তেড়ে আসেন মনিরুল হক ও তাঁর লোকজন। পরে কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে মনিরুল হক ও তাঁর লোকজন সাংবাদিকদের হাত কেটে ফেলার হুমকি দেন।

একই দিন হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দখল, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সীল মারেন মনিরুল হকের লোকজন। পুলিশ বাঁধা দিলে তাদের উপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় মিঠুরা। এতে পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে তারা। এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার পুলিশ এবং সাংবাদিক গোলজার হোসেন আলাদাভাবে বাদী হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হককে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা করে। এ দু’টি মামলা ২১৮ জনকে আসামি করা হয়।

এ দিকে সাংবাদিক গোলজার হোসেনের উপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শনিবার দুপুরে ঘন্টাব্যাপী প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেন সাংবাদিকরা। কর্মসূচিতে সব আসামিদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান জেলার সংবাদ কর্মীরা।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভোটকেন্দ্রে পুলিশ-সাংবাদিকের ওপর হামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

আপডেট সময় ০৮:২৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকের ওপর হামলা ও মারধরের নেতৃত্ব দেওয়া হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু’কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার (১১ মে) রাত ৮ টার দিকে রাজধানীর শাজাহানপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনারস প্রতীকের প্রার্থী আমিরুল ইসলামের সমর্থক ছিলেন। মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সুপার বলেন, সাংবাদিক ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু পলাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি তিনি রাজধানীর শাহজাহানপুরে একটি বাড়িতে আত্মগোপনে আছেন। শনিবার রাত আটটার দিকে গোয়েন্দা ও থানা পুলিশের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে সেখানে তাকে গ্রেফতার করেছে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম গোলজার হোসেন। তিনি দৈনিক মানবজমিনের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি এবং মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি। গত ৮ মে বুধবার প্রথম ধাপে গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিনে সকালে তাঁর ওপর হামলা হয়।

মামলা এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু, তাঁর ভাই গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইকবাল হক ও ভাতিজা তানভীর হকরা ওই ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন । ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হকের নির্দেশে সোহেলকে মারধর শুরু করেন তাঁর ভাতিজা তানভীর এবং তাঁদের লোকজন।

ওই ঘটনার সময় পাশ থেকে ছবি ও ভিডিও করছিলেন গোলজার হোসেন। পরে তাঁরা গোলজারের ওপর হামলা করেন। তাঁর মুঠোফোন, পকেটে থাকা টাকা, আইডি ও পর্যবেক্ষক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করতে থাকেন। অন্য সাংবাদিকেরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে সাংবাদিকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতর আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁদের মারধরের জন্য তেড়ে আসেন মনিরুল হক ও তাঁর লোকজন। পরে কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে মনিরুল হক ও তাঁর লোকজন সাংবাদিকদের হাত কেটে ফেলার হুমকি দেন।

একই দিন হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দখল, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সীল মারেন মনিরুল হকের লোকজন। পুলিশ বাঁধা দিলে তাদের উপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় মিঠুরা। এতে পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে তারা। এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার পুলিশ এবং সাংবাদিক গোলজার হোসেন আলাদাভাবে বাদী হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হককে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা করে। এ দু’টি মামলা ২১৮ জনকে আসামি করা হয়।

এ দিকে সাংবাদিক গোলজার হোসেনের উপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শনিবার দুপুরে ঘন্টাব্যাপী প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেন সাংবাদিকরা। কর্মসূচিতে সব আসামিদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান জেলার সংবাদ কর্মীরা।