সোনালী আঁশ পাট চাষ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে যশোরের চৌগাছায়। নানা কারণে বিশেষ করে কৃষক নায্যমূল্য না পাওয়া, অনাবৃষ্টি, পাট জাগের যথেষ্ট জায়গা না থাকা প্রভৃতি কারণে তা হ্রাস পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছাতে চলতি বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ হয়েছে মাত্র ১৬শ হেক্টর জমিতে। সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিতে এটি নেহাত কম মনে না হলেও কৃষকরা মনে করছেন নিঃসন্দেহে পাট চাষ কম হয়েছে।
গতকাল উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মাঠেই বিচ্ছিন্নভাবে চাষ করা হয়েছে পাটের। যেসব কৃষক অগ্রিম পাট চাষ করেছেন তাদের পাট ইতোমধ্যে ৩/৪ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়েছে। দীর্ঘদিন তাপপ্রবাহ থাকার পর সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় প্রতিটি পাট ক্ষেত যেন কালো মেঘে ঢেকে গেছে। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ দেখা না দিলে যে সব কৃষক পাট চাষ করেছেন তারা বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
কথা হয় উপজেলার নগরবর্ণী গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, চলতি বছরে দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। প্রচন্ড খরায় পাট সেভাবে বেড়ে ওঠেনি। তবে বৃষ্টি হওয়ায় পাট যেন তার জীবন ফিরে পেয়েছে। জামলতা গ্রামের চাষি আমিনুর রহমান বলেন, তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এখনও খুব ভাল অবস্থায় আছে। জানি না পরে পাটের কপালে কী আছে? তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাট কাটা শুরু হলে দেখা দেয় বৃষ্টির অভাব। সে কারণে জাগ দেয়া নিয়ে পড়তে বিপদে। এই সমস্যায় অনেকে পাট চাষ ছেড়ে দিয়েছেন।
কৃষক পলাশ মন্ডল ও দেবদাশ মন্ডল বলেন, পাট ছিল আমাদের সব থেকে পছন্দের ফসল। কিন্তু নানা কারণে কৃষক এর চাষ কম করে দিয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাট চাষে পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় বেশি। সে অনুযায়ী দাম পাওয়া যায়না। আর জাগ দেয়ার সমস্যা তো আছেই। এসব কৃষক জানান, প্রতি বছর তারা কয়েক বিঘা করে জমিতে পাট চাষ করেন। কিন্তু কমতে কমতে তা এখন ২/৪ বিঘাতে নেমে এসেছে। যার প্রভাব গোটা উপজেলাতে পড়তে শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, এক সময় বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি ছিল পাট। বিদেশে পাটের বাণিজ্যের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। পাটের দড়ি, সুতা ও কাপড় বিদেশে রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হতো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসাইন বলেন, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কমবেশি পাট চাষ হয়েছে। তবে জগদীশপুর, পাতিবিলা, হাকিমপুর, সুখপুকুরিয়া, নারায়নপুর ও স্বরুপদাহ ইউনিয়নে তুলনামূলক কিছুটা বেশি হয়েছে। নানা কারণে কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছে। কৃষক যাতে আবারও পাট চাষে মনোযোগী হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি ।