মুন্সীগঞ্জে স্টোরেজগুলোতে পর্যাপ্ত আলু মজুদ থাকা সত্ত্বেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।দেশে চাহিদার চেয়ে বিপুল পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে। তবুও বাজারে এবার আলুর দাম প্রথম থেকেই ঊর্ধ্বমুখী।
দেশের বৃহত উৎপাদনকারী অঞ্চল রাজধানীর কাছের জেলা মুন্সীগঞ্জেই চড়া দামে খেতে হচ্ছে আলু। উত্তোলন মৌসুম শেষে সবেমাত্র ৩ মাসের মধ্যেই খুচরা বাজারে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে থেকে ১৮ টাকা। এ জেলার ৬ টি উপজেলায় এবার বিলম্বে আলু উত্তোলন শুরু হয়। এতে চলতি বছরের ফেব্রæয়ারীর মাঝামাঝিতে জমি থেকে উত্তোলনের কাজ সারেন কৃষককুল। এরপর জমি থেকে মধ্যসত্ব ভোগী ও ব্যবসায়ীরা আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজ গুলোতে বিপুল পরিমানের আলু মজুদ করেন। সেখানে মজুদ করা ওই আলু আপাতত: বাজারে বাজারে আসছে না। ওই আলু বাজারে আসবে বছরের শেষ দিকে। তবে কৃষকের বাড়িতে বিভিন্ন ভাবে সংরক্ষন করা আলুই এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
এরপরও উত্তোলন মৌসুম পেরিয়ে মাস তিনেকে আলু চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। অথচ আগামী আলুর মৌসুম আসতে এখনও বাকী রয়েছে অন্তত ৮ মাস। এক কথায় বলা যায় যে, কোল্ড ষ্টোরেজ ভর্তি আলু থাকলেও বাজারে চড়া দাম দিয়েই ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে তা।
বর্তমানে ভরা মৌসুমে প্রতি কেজি আলু কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। বর্তমান দাম বিবেচনায় মৌসুমের পর আগামী কয়েক মাসে আলুর দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছ।
আজ সোমবার (২০ মে) সকালে সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ শহর বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানিয়েছেন, আলু উত্তোলনের মৌসুমে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝিতে খুচরা বাজারে আলু বিক্রি করেছেন ৩২ টাকা থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। এখন সেই আলু কেজিতে তারা বিক্রি করছেন ৫০ টাকা দরে। তারা কেজিতে ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা লাভে এ আলু বিক্রি করে আসছেন।
এদিকে, অতিবৃষ্টির কারনে আলু রোপনের মৌসুমে প্রথম দফায় এ জেলার কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাদের রোপন করা আলু বীজ জমিতেই পঁচে যায়। পরে দ্বিতীয় দফায় আলু রোপন করেন তারা। এতে আলু রোপনে এবার কৃষকের খরচ বেশি পড়েছে।
জেলা সদরের চরাঞ্চল মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের আমঘাটা গ্রামের চাষী ইব্রাহিম শিকদার জানান, তিনি মৌমুমে ৪০ শতাংশ জমিতে আলু বুনেছেন। এবার তিনি ২৫০ মন আলু পেয়েছেন। মৌসুমের শুরুতে তিনি জমি থেকে মধ্যস্বত্বভোগী বা ব্যবসায়ীদের কাছে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে। এতে কেজি প্রতি আলু বিক্রিতে তিনি পেয়েছেন ৩০ টাকা করে। তবে কেজি প্রতি আলু উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকা।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়ারা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে জমি থেকে আলু কিনে নিয়েছেন। কোল্ড ষ্টোরেজে সংরক্ষন করে সংকট দেখিয়ে পরে তারা বেশি দামে আলু বিক্রি করবেন।
জেলার গজারিয়া উপজেলার বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক জসিম প্রধান বলেন, এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। অতিবৃষ্টির কারণে দু’বার আলু রোপণ করতে হয়েছে। প্রথম দফায় বৃষ্টির কারণে আলু বীজ নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার আলু বীজ রোপন করি। এক মন আলু উৎপাদনে তার স্বাভাবিক খরচ হয়ে থাকে ৬০০ টাকার মতো। কিন্তু দু’দফায় আলু রোপন করায় মন প্রতি খরচ পড়েছে হাজার টাকা। জমি থেকে বস্তা প্রতি আলু বিক্রি করেছি ১ হাজার ৪০০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মো. জাকির হোসাইন জানান, জেলার ৬ টি উপজেলায় এ বছর ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়। এতে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন আলু। এ জেলায় ৬৪ টি কোল্ড স্টোরেজের মধ্যে সচল রয়েছে ৫৮ টি। আরই এ ৫৮ কোল্ড ষ্টোরেজে ৫ লাখ ৭ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষনের ধারন ক্ষমতা রয়েছেন। সেই হিসেবে এবার কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষনের বাইরে থাকছে উৎপাদনের অর্ধেক আলুই। তবে কোল্ড স্টোরেজ সংশ্লিষ্টরা বলছেন ক্ষমতার কম আলু মজুদ করা হয়েছে।
জেলা শহরের উপকন্ঠ মুক্তারপুর এলাকার কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার প্রশান্ত কুমার মন্ডল দুলাল জানান, এ কোল্ড স্টোরেজে ধারনা ক্ষমতা রয়েছে ৮০ হাজার বস্তা আলু। অথচ মজুদ করা হয়েছে সর্বসাকুল্যে ৩২ হাজার বস্তা।
পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকার আবির এগ্রো ফুড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার মাসুদ খান জানান, এ কোল্ড স্টোরেজে ২ লাখ ৮০ হাজার বস্তা ধারন ক্ষমতা থাকলেও মজুদ করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১২ হাজার বস্তা আলু। তিনি বলেন, এবার ব্যবসায়ীরা আলু মজুদ কম করেছেন।
আলু বাজার নিয়ন্ত্রন প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আসিফ আল আজাদ বলেন, আমরা তো আর দাম নির্ধারণ করে দিতে পারি না। তবে আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে আসছি। বাজার গুলোতে আলুসহ সবজি বিক্রেতাদের তাদের দোকানের সামনে বিক্রি মূল্য তালিকা প্রদর্শনের জন্য বলা হচ্ছে। একই সঙ্গে আলু ও অন্যসব সবজির কেনা রশিদ সঙ্গে রাখতে বলেছি।
খুচরা বাজারে দাম বেশি, অথচ কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকারের এ কর্মকর্তা বলেন, উত্তোলন মৌসুম শেষে সবে মাত্র কোল্ড স্টোরেজ গুলোতে আলু মজুদ করা হয়েছে। এরমধ্যেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা দাম নিয়ে অখুশি নন। আর কয়েকদিন গেলে কোল্ড স্টোরেজের আলু বাজারে ছাড়বেন বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।