ঢাকা , রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইবাদতের বসন্তকাল

জিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ ফজিলত

  • ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৪:০৫:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
  • ৭৪ বার পড়া হয়েছে

রমজান মাসকে বলা হয় ইবাদতের বসন্তকাল, এ কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু এর বাইরে যে আরও একটি ইবাদতের বসন্তকাল আছে, সেটা আমরা খুব কম মানুষই জানি। সেই বসন্তকাল হলো যিলহজের প্রথম ১০ দিন। এই দিনগুলো আল্লাহর কাছে এত প্রিয়, এই সময়ের আমলের মাধ্যমে একজন বান্দা অতি সহজে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে উঠতে পারে।

জিলহজের প্রথম দশকের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযিলত
মহান আল্লাহ সূরা ফজরের ২ নম্বর আয়াতে দশ রাতের কসম করেছেন। অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, এখানে ১০ রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ রাত উদ্দেশ্য করে বলা। আর স্বয়ং আল্লাহ যখন কোনো সময়ের কসম খান, সেটার গুরুত্ব যে কতখানি, তার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।

এছাড়া সূরা হজের ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তারা যেন আল্লাহর নাম স্মরণ করে নির্দিষ্ট দিনসমূহে। সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, নির্দিষ্ট দিন বলে এখানে জিলহজ প্রথম দশককে বোঝানো হয়েছে [তাফসিরে ইবনে কাসির, ৫/৪১৫]।

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের নেক আমল আল্লাহর নিকট যত প্রিয়, আর কোনো দিনের আমল তত প্রিয় নয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর পথে জিহাদও কি তার চেয়ে প্রিয় নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর পথে জিহাদও এই দশদিনের নেক আমলের চেয়ে প্রিয়তর নয়, তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে গেল এবং কোনো কিছু নিয়ে আর ফিরে এলো না। [সহিহ বুখারি, ৯৬৯]

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দিনসমূহ হলো যিলহজের প্রথম দশ দিন। [আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, ১৭৮৫]

যিলহজ মাসের তাৎপর্যের বিষয়ে বিশ্ব বিখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ গুরুত্বের কারণ হলো, এই দিনগুলোতে ইসলামের পাঁচটি রুকন বা মৌলিক কাজের সমাহার রয়েছে। যেমন ঈমান ও সালাত অন্য দিনগুলোর মতো এই দিনগুলোতেও বিদ্যমান। যাকাত বছরের অন্য যে কোনো সময়ের মতো এসময়েও আদায় করা যায়। আরাফার দিনে রোযার নির্দেশ থাকায় ইসলামের আরেকটি রুকন রোযার নজীরও এই দশকে পাওয়া যায়। আর পঞ্চম রুকন হজ এই দশকেই পালনযোগ্য। আবার ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কুরবানিও এই সময়ে আদায় করতে হয়।

সুতরাং মাস হিসেবে রমজান আর দিন হিসেবে যিলহজের প্রথম দশক শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ। আর তাই, একজন ঈমানদারের এই দিনগুলোতে ইবাদত-বন্দেগীতে বিশেষভাবে মগ্ন হওয়া উচিত।

যিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ কিছু আমল

কুরআন ও হাদিসের আলোকে এই দশকের বেশ কিছু আমল ও করণীয় আছে :
১. অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির বা স্মরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, যেন তারা তাদের জন্য স্থাপিত কল্যাণসমূহ প্রত্যক্ষ করে এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। [সূরা হজ : ২৮]
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, উক্ত আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলে যিলহজের প্রথম দশককে বোঝানো হয়েছে। [তাফসিরে ইবনে কাসির, ৫/৪১৫]

২. নেক আমল ও ভালো কাজের প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া। কেননা, মহান আল্লাহর নিকট অন্যান্য সময়ের আমলের চেয়ে যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল অধিক প্রিয়।
[সহিহ বুখারি, ৯৬৯; সুনানু আবি দাউদ, ২৪৩৮]

৩. অন্য সময়ের তুলনায় এই দিনগুলোতে পাপকাজ পরিহারে অধিক সচেষ্ট থাকা। [সূরা হজ : ২৮] [সহিহ বুখারি, ৯৬৯]

৪. সামর্থ্যবান হলে হজ করা। কেননা, হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের ওপর হজ ফরয। আবার কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয় মর্মে নবীজী (সা.)-এর সুসংবাদ রয়েছে। [আলে ইমরান, ৯৭। সুনানুত তিরমিযি, ৮১০]

৫. সামর্থ্য থাকলে কুরবানি করা। মহান আল্লাহ বলেন, তুমি নিজ প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করো ও কুরবানি করো। [সুরা কাউসার, ২]

৬. কুরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির কুরবানি করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল, ও অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকা। [সহিহ মুসলিম, ৫০১৫]

এ হাদিসে যদিও কুরবানিদাতাকে চুল, নখ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, তবে বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, যাদের কুরবানি করার সামর্থ্য নেই, তারাও ফযিলত পূর্ণ এ আমলটি করতে পারেন। এমনকি শিশুদেরকেও চুল-নখ কাটা থেকে বিরত রাখা উত্তম। [সুনানু আবি দাউদ, ২৭৮৯; আল-মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন, ৭৫২০]

৭. অধিক পরিমাণে সাধারণভাবে তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করা। অর্থাৎ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ পড়া। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর নিকট যিলহজের দশদিনের আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও প্রিয় আমল নেই। অতএব, এ দিনগুলোতে তোমরা অধিক পরিমাণে তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করো। [আল-মুজামুল কাবির, ১১১১৬]

৮. তাশরীকের দিনগুলোতে প্রত্যেক সালাতের শেষ বিশেষভাবে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা। অর্থাৎ ৯ যিলহজ ফজর থেকে ১৩ যিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতি নামাজের পর একবার ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পাঠ করা।
[মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৫৬৩১]

৯. প্রথম নয়দিন সিয়াম পালন করা। কোনো কোনো বর্ণনায় যিলহজের প্রথম ৯ দিনই সিয়াম পালনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। তাছাড়া এই দিনগুলোর নেক কাজ আল্লাহর প্রিয় হওয়ায় এর সব দিনেই নফল সিয়াম রাখা যায়। অনেক ইমামগণও যিলহজের প্রথম নয় দিন সিয়াম পালন করাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

১০. আরাফার দিন বিশেষভাবে রোযা রাখা। কেননা, আরাফার দিনের রোযা রাখলে আশা করা যায় মহান আল্লাহ তার পেছনের এবং সামনের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
[সহিহ মুসলিম, ১১৬২]

১১. ঈদের দিনের সুন্নাহসমূহ পালন করা।

প্রিয় পাঠক, ইবাদতের এই বসন্তকাল আমাদের জীবনে বহুবার এসেছে, আবার চলেও গেছে; কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনগুলোর আবেদন খুব কম মানুষের জীবনেই রেখাপাত করেছে। আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ বিশেষ এক অফার দিলেন আর আমরা তার খবরও রাখলাম না, এরচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কী আছে! আসুন, আমরা ইবাদতের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর কদর করি, আরও একটু আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। যিলহজের যে দশকগুলো অবহেলায় কেটে গেছে, তার জন্য অনুতপ্ত হওয়ার পাশাপাশি এখন থেকে যিলহজের প্রথম দশকের প্রতিটি মুহূর্তকে নেক আমলের মধ্যে অতিবাহিত করি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়ার তাওফিক দান করুন।

শায়খ আহমাদুল্লাহ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও আলোচক।

ইবাদতের বসন্তকাল

জিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ ফজিলত

আপডেট সময় ০৪:০৫:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

রমজান মাসকে বলা হয় ইবাদতের বসন্তকাল, এ কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু এর বাইরে যে আরও একটি ইবাদতের বসন্তকাল আছে, সেটা আমরা খুব কম মানুষই জানি। সেই বসন্তকাল হলো যিলহজের প্রথম ১০ দিন। এই দিনগুলো আল্লাহর কাছে এত প্রিয়, এই সময়ের আমলের মাধ্যমে একজন বান্দা অতি সহজে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে উঠতে পারে।

জিলহজের প্রথম দশকের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযিলত
মহান আল্লাহ সূরা ফজরের ২ নম্বর আয়াতে দশ রাতের কসম করেছেন। অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, এখানে ১০ রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ রাত উদ্দেশ্য করে বলা। আর স্বয়ং আল্লাহ যখন কোনো সময়ের কসম খান, সেটার গুরুত্ব যে কতখানি, তার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।

এছাড়া সূরা হজের ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তারা যেন আল্লাহর নাম স্মরণ করে নির্দিষ্ট দিনসমূহে। সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, নির্দিষ্ট দিন বলে এখানে জিলহজ প্রথম দশককে বোঝানো হয়েছে [তাফসিরে ইবনে কাসির, ৫/৪১৫]।

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের নেক আমল আল্লাহর নিকট যত প্রিয়, আর কোনো দিনের আমল তত প্রিয় নয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর পথে জিহাদও কি তার চেয়ে প্রিয় নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর পথে জিহাদও এই দশদিনের নেক আমলের চেয়ে প্রিয়তর নয়, তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে গেল এবং কোনো কিছু নিয়ে আর ফিরে এলো না। [সহিহ বুখারি, ৯৬৯]

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দিনসমূহ হলো যিলহজের প্রথম দশ দিন। [আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, ১৭৮৫]

যিলহজ মাসের তাৎপর্যের বিষয়ে বিশ্ব বিখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ গুরুত্বের কারণ হলো, এই দিনগুলোতে ইসলামের পাঁচটি রুকন বা মৌলিক কাজের সমাহার রয়েছে। যেমন ঈমান ও সালাত অন্য দিনগুলোর মতো এই দিনগুলোতেও বিদ্যমান। যাকাত বছরের অন্য যে কোনো সময়ের মতো এসময়েও আদায় করা যায়। আরাফার দিনে রোযার নির্দেশ থাকায় ইসলামের আরেকটি রুকন রোযার নজীরও এই দশকে পাওয়া যায়। আর পঞ্চম রুকন হজ এই দশকেই পালনযোগ্য। আবার ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কুরবানিও এই সময়ে আদায় করতে হয়।

সুতরাং মাস হিসেবে রমজান আর দিন হিসেবে যিলহজের প্রথম দশক শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ। আর তাই, একজন ঈমানদারের এই দিনগুলোতে ইবাদত-বন্দেগীতে বিশেষভাবে মগ্ন হওয়া উচিত।

যিলহজের প্রথম দশকের বিশেষ কিছু আমল

কুরআন ও হাদিসের আলোকে এই দশকের বেশ কিছু আমল ও করণীয় আছে :
১. অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির বা স্মরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, যেন তারা তাদের জন্য স্থাপিত কল্যাণসমূহ প্রত্যক্ষ করে এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। [সূরা হজ : ২৮]
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, উক্ত আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলে যিলহজের প্রথম দশককে বোঝানো হয়েছে। [তাফসিরে ইবনে কাসির, ৫/৪১৫]

২. নেক আমল ও ভালো কাজের প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া। কেননা, মহান আল্লাহর নিকট অন্যান্য সময়ের আমলের চেয়ে যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল অধিক প্রিয়।
[সহিহ বুখারি, ৯৬৯; সুনানু আবি দাউদ, ২৪৩৮]

৩. অন্য সময়ের তুলনায় এই দিনগুলোতে পাপকাজ পরিহারে অধিক সচেষ্ট থাকা। [সূরা হজ : ২৮] [সহিহ বুখারি, ৯৬৯]

৪. সামর্থ্যবান হলে হজ করা। কেননা, হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের ওপর হজ ফরয। আবার কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয় মর্মে নবীজী (সা.)-এর সুসংবাদ রয়েছে। [আলে ইমরান, ৯৭। সুনানুত তিরমিযি, ৮১০]

৫. সামর্থ্য থাকলে কুরবানি করা। মহান আল্লাহ বলেন, তুমি নিজ প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করো ও কুরবানি করো। [সুরা কাউসার, ২]

৬. কুরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির কুরবানি করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল, ও অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকা। [সহিহ মুসলিম, ৫০১৫]

এ হাদিসে যদিও কুরবানিদাতাকে চুল, নখ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, তবে বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, যাদের কুরবানি করার সামর্থ্য নেই, তারাও ফযিলত পূর্ণ এ আমলটি করতে পারেন। এমনকি শিশুদেরকেও চুল-নখ কাটা থেকে বিরত রাখা উত্তম। [সুনানু আবি দাউদ, ২৭৮৯; আল-মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন, ৭৫২০]

৭. অধিক পরিমাণে সাধারণভাবে তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করা। অর্থাৎ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ পড়া। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর নিকট যিলহজের দশদিনের আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও প্রিয় আমল নেই। অতএব, এ দিনগুলোতে তোমরা অধিক পরিমাণে তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করো। [আল-মুজামুল কাবির, ১১১১৬]

৮. তাশরীকের দিনগুলোতে প্রত্যেক সালাতের শেষ বিশেষভাবে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা। অর্থাৎ ৯ যিলহজ ফজর থেকে ১৩ যিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতি নামাজের পর একবার ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পাঠ করা।
[মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৫৬৩১]

৯. প্রথম নয়দিন সিয়াম পালন করা। কোনো কোনো বর্ণনায় যিলহজের প্রথম ৯ দিনই সিয়াম পালনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। তাছাড়া এই দিনগুলোর নেক কাজ আল্লাহর প্রিয় হওয়ায় এর সব দিনেই নফল সিয়াম রাখা যায়। অনেক ইমামগণও যিলহজের প্রথম নয় দিন সিয়াম পালন করাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

১০. আরাফার দিন বিশেষভাবে রোযা রাখা। কেননা, আরাফার দিনের রোযা রাখলে আশা করা যায় মহান আল্লাহ তার পেছনের এবং সামনের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
[সহিহ মুসলিম, ১১৬২]

১১. ঈদের দিনের সুন্নাহসমূহ পালন করা।

প্রিয় পাঠক, ইবাদতের এই বসন্তকাল আমাদের জীবনে বহুবার এসেছে, আবার চলেও গেছে; কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনগুলোর আবেদন খুব কম মানুষের জীবনেই রেখাপাত করেছে। আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ বিশেষ এক অফার দিলেন আর আমরা তার খবরও রাখলাম না, এরচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কী আছে! আসুন, আমরা ইবাদতের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর কদর করি, আরও একটু আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। যিলহজের যে দশকগুলো অবহেলায় কেটে গেছে, তার জন্য অনুতপ্ত হওয়ার পাশাপাশি এখন থেকে যিলহজের প্রথম দশকের প্রতিটি মুহূর্তকে নেক আমলের মধ্যে অতিবাহিত করি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়ার তাওফিক দান করুন।

শায়খ আহমাদুল্লাহ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও আলোচক।