ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড় বাজারে

সেতুর অভাবে লাখো মানুষের ভোগান্তি

মুন্সীগঞ্জ টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড় বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মার শাখা নদী। এ নদীতে সেতু না থাকায় ট্রলারই একমাত্র যাতায়াতের ভরসা। মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুরসহ নদী বেষ্টিত ৫টি জেলার অন্তত ১১টি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াত। এতে করে ঝড়-তুফান ও রাত-বিরাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এ পথ ব্যবহারকারী বাসিন্দাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিঘীরপার বাজারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। নদীর পূর্বপারে দিঘীরপার বাজার, স্কুল ও কলেজ রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর এবং রাজধানীর ঢাকায় যাতায়াতের পথও এদিক দিয়ে। নদীর পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ পাড়ে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল বানারি ও পাঁচগাও ইউনিয়নের ১২-১৩টি গ্রাম, মুন্সীগঞ্জ সদরের শিলই ও বাংলাবাজার ৩-৪টি গ্রাম, শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুন্ডের চর ও কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশালসহ ৫টি ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রাম।

এছাড়াও কুমিল্লার জেলার এলামচর, পূর্ব বানিয়াল, চাঁদপুরে হাইমচরের কিছু অংশ মুন্সীগঞ্জ জেলার সঙ্গে লাঘোয়া। এসব ইউনিয়নের গ্রামগুলোর অন্তত দুই লাখ মানুষ তাদের প্রয়োজনে এ নদী পারাপার হচ্ছেন। নদী পারাপার হয়ে টঙ্গিবাড়ী শহর, মুন্সীগঞ্জ সদর, ঢাকা-নারায়নগঞ্জে যাতায়াত করেন তারা। এসব গ্রামবাসী দিঘীরপাড় বাজার ঘাট এলাকায় দিনের পর দিন একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসলেও তাদের সে দাবি পূরণ হচ্ছে না।

সম্প্রতি টঙ্গিবাড়ীর দিঘিরপাড় বাজারে গেলে চোখে পড়ে নদীর পূর্বপাড় থেকে ট্রলারভর্তি মানুষ আসছেন। ট্রলার থেকে নেমে দিঘিরপাড় বাজার, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ শহর ও রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটছেন। একইভাবে এখান থেকে ট্রলার ভর্তি করে নদীর পশ্চিম পাড়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও নদীর উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ থেকে ট্রলার ভর্তি করে দিঘিরপাড় হাটে কেউ মালপত্র বিক্রি করতে আসছেন, কেউবা এ হাট থেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। সবকিছুই হচ্ছে ট্রলারের ওপর ভরসা করে।

স্থানীয় বাসিন্দা আউয়াল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, দিঘিরপাড় বাজারের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। এই নদীর ওপারে রয়েছে দিঘিরপাড় চর। নদী পারাপারে একমাত্র বাহন ট্রলার। একই শাখা নদী পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুণ্ডেরচর ও কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশাল এবং চাঁদপুর জেলার হাইমচরের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। সহজ যোগাযোগের কারণে শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের এসব এলাকার বাসিন্দারা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ পথে যাতায়াত করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা মূল পদ্মা পাড়ি দিয়ে দিঘিরপাড় চরে আসেন। এর পর চর থেকে ট্রলারে পদ্মার শাখা নদী পার হয়ে দিঘিরপাড় বাজারে যান। সেখান থেকে সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে তাদের সময় কম লাগে। মূল পদ্মা নদী ট্রলারে পাড়ি দিলেও দিঘিরপাড় বাজারের পদ্মার শাখা নদী পাড়ি দিতে ট্রলারের জন্য তাদের অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। আবার মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হতে খরচ পড়ে যায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। রাতে ভাড়া বেড়ে যায় কয়েক গুণ। অথচ এখানে প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু হলে তাদের দুর্ভোগ লাঘব হতো।

শিক্ষার্থী জুয়েল রানা বলেন,দিঘীরপাড় খেয়াঘাট থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব দুই কিলোমিটার। নদীর পশ্চিমপাড়ে সড়কের অবস্থাও তেমন ভালো না। যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন চলে না। এই টুকু রাস্তা পাড়ি দিয়ে দিঘীর পারে আসা-যাওয়া করতে মোটরসাইকেল ২০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। সেতু নেই তাই ঘাটে এসে ট্রলারের জন্য প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট বসে থাকতে হয়। তবে ট্রলার পার হতে পারলে দিঘীরপাড় থেকে মুন্সিগঞ্জে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে ৩০ মিনিটের মধ্যে যেতে পারি। যাওয়া-আসা করতেও মাত্র ৮০ টাকা খরচ হয়।

দিঘীরপাড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আরিফুল ইসলাম হালদার বলেন, একটি সেতুর অভাবে মানুষের কত দুর্ভোগ সেটি আমি নিজের চোখে প্রতিনিয়ত দেখছি। সেতু নির্মাণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার জানিয়েছি। যতদূর জানতে পেরেছি এখানে খুব শীঘ্রই একটি সেতু নির্মাণ হবে। সেই লক্ষ্যে কাজও চলছে।

টঙ্গিবাড়ি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, দিঘিরপাড় বাজার লাগোয়া পদ্মার শাখা নদীর ওপর ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ এবং নদীর পশ্চিম পাশে ৪ কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ মাটি পরীক্ষা ও অন্যান্য সার্ভে সম্পন্ন করেছে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল। এখন নকশা করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। বরাদ্দ হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। বরাদ্দ পেলে আগামী বছরের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড় বাজারে

সেতুর অভাবে লাখো মানুষের ভোগান্তি

আপডেট সময় ০৮:৩২:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

মুন্সীগঞ্জ টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড় বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মার শাখা নদী। এ নদীতে সেতু না থাকায় ট্রলারই একমাত্র যাতায়াতের ভরসা। মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুরসহ নদী বেষ্টিত ৫টি জেলার অন্তত ১১টি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াত। এতে করে ঝড়-তুফান ও রাত-বিরাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এ পথ ব্যবহারকারী বাসিন্দাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিঘীরপার বাজারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। নদীর পূর্বপারে দিঘীরপার বাজার, স্কুল ও কলেজ রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর এবং রাজধানীর ঢাকায় যাতায়াতের পথও এদিক দিয়ে। নদীর পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ পাড়ে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল বানারি ও পাঁচগাও ইউনিয়নের ১২-১৩টি গ্রাম, মুন্সীগঞ্জ সদরের শিলই ও বাংলাবাজার ৩-৪টি গ্রাম, শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুন্ডের চর ও কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশালসহ ৫টি ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রাম।

এছাড়াও কুমিল্লার জেলার এলামচর, পূর্ব বানিয়াল, চাঁদপুরে হাইমচরের কিছু অংশ মুন্সীগঞ্জ জেলার সঙ্গে লাঘোয়া। এসব ইউনিয়নের গ্রামগুলোর অন্তত দুই লাখ মানুষ তাদের প্রয়োজনে এ নদী পারাপার হচ্ছেন। নদী পারাপার হয়ে টঙ্গিবাড়ী শহর, মুন্সীগঞ্জ সদর, ঢাকা-নারায়নগঞ্জে যাতায়াত করেন তারা। এসব গ্রামবাসী দিঘীরপাড় বাজার ঘাট এলাকায় দিনের পর দিন একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসলেও তাদের সে দাবি পূরণ হচ্ছে না।

সম্প্রতি টঙ্গিবাড়ীর দিঘিরপাড় বাজারে গেলে চোখে পড়ে নদীর পূর্বপাড় থেকে ট্রলারভর্তি মানুষ আসছেন। ট্রলার থেকে নেমে দিঘিরপাড় বাজার, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ শহর ও রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটছেন। একইভাবে এখান থেকে ট্রলার ভর্তি করে নদীর পশ্চিম পাড়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও নদীর উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ থেকে ট্রলার ভর্তি করে দিঘিরপাড় হাটে কেউ মালপত্র বিক্রি করতে আসছেন, কেউবা এ হাট থেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। সবকিছুই হচ্ছে ট্রলারের ওপর ভরসা করে।

স্থানীয় বাসিন্দা আউয়াল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, দিঘিরপাড় বাজারের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। এই নদীর ওপারে রয়েছে দিঘিরপাড় চর। নদী পারাপারে একমাত্র বাহন ট্রলার। একই শাখা নদী পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুণ্ডেরচর ও কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশাল এবং চাঁদপুর জেলার হাইমচরের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। সহজ যোগাযোগের কারণে শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের এসব এলাকার বাসিন্দারা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ পথে যাতায়াত করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা মূল পদ্মা পাড়ি দিয়ে দিঘিরপাড় চরে আসেন। এর পর চর থেকে ট্রলারে পদ্মার শাখা নদী পার হয়ে দিঘিরপাড় বাজারে যান। সেখান থেকে সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে তাদের সময় কম লাগে। মূল পদ্মা নদী ট্রলারে পাড়ি দিলেও দিঘিরপাড় বাজারের পদ্মার শাখা নদী পাড়ি দিতে ট্রলারের জন্য তাদের অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। আবার মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হতে খরচ পড়ে যায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। রাতে ভাড়া বেড়ে যায় কয়েক গুণ। অথচ এখানে প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু হলে তাদের দুর্ভোগ লাঘব হতো।

শিক্ষার্থী জুয়েল রানা বলেন,দিঘীরপাড় খেয়াঘাট থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব দুই কিলোমিটার। নদীর পশ্চিমপাড়ে সড়কের অবস্থাও তেমন ভালো না। যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন চলে না। এই টুকু রাস্তা পাড়ি দিয়ে দিঘীর পারে আসা-যাওয়া করতে মোটরসাইকেল ২০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। সেতু নেই তাই ঘাটে এসে ট্রলারের জন্য প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট বসে থাকতে হয়। তবে ট্রলার পার হতে পারলে দিঘীরপাড় থেকে মুন্সিগঞ্জে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে ৩০ মিনিটের মধ্যে যেতে পারি। যাওয়া-আসা করতেও মাত্র ৮০ টাকা খরচ হয়।

দিঘীরপাড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আরিফুল ইসলাম হালদার বলেন, একটি সেতুর অভাবে মানুষের কত দুর্ভোগ সেটি আমি নিজের চোখে প্রতিনিয়ত দেখছি। সেতু নির্মাণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার জানিয়েছি। যতদূর জানতে পেরেছি এখানে খুব শীঘ্রই একটি সেতু নির্মাণ হবে। সেই লক্ষ্যে কাজও চলছে।

টঙ্গিবাড়ি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, দিঘিরপাড় বাজার লাগোয়া পদ্মার শাখা নদীর ওপর ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ এবং নদীর পশ্চিম পাশে ৪ কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ মাটি পরীক্ষা ও অন্যান্য সার্ভে সম্পন্ন করেছে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল। এখন নকশা করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। বরাদ্দ হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। বরাদ্দ পেলে আগামী বছরের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে।