আসল কারণ জানলে চমকে উঠবেন চোখ।যদি দিনে বহু বার এমন হতে থাকে, তা হলে তা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চোখের পাতা কাঁপার সঙ্গে শুভ-অশুভের সম্পর্কই নেই। আসল কারণ জেনে নিন।
বাঁ চোখের পাতা খুব কাঁপছে? তখনই মনে মনে ভেবে নিলেন কিছু একটা ঘটতে চলেছে। চোখের পাতা কাঁপাকেই আমরা বলি চোখ লাফাচ্ছে বা নাচছে। এর সঙ্গেই আবার বিভিন্ন রকম কুসংস্কার জুড়ে দিই আমরা। যেমন, মহিলা হলে বাঁ চোখ নাচা মানে শুভ লক্ষণ ধরে নেন অনেকে। আবার ছেলেদের ক্ষেত্রে ডান চোখ নাচলে বলা হয় যে ইচ্ছাপূরণ হতে চলেছে। শুভ-অশুভের বাছবিছারে আসল কারণটা জানারই চেষ্টা করেন না কেউ। এই চোখ নাচা বা লাফানোর সঙ্গে কিন্তু ভাগ্য বা দুর্ভাগ্যের কোনও সম্পর্কই নেই। আসল কারণটা পুরোপুরি স্বাস্থ্য বিষয়ক। চোখের পাতা কাঁপাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় ‘মায়োকেমিয়া’। রোজের জীবনযাপনে এমন কিছু অভ্যাস আমরা করে ফেলি, যার রেশ পড়ে শরীরে ও মনে। চোখ নাচা তারই পূর্বলক্ষণ। চোখের পাতা কেন কাঁপে, জানলে চমকে উঠবেন।
মনের চাপ কি খুব বাড়ছে?
রোজের ব্যস্ততায় নিজের জন্য দু’দণ্ড সময় নেই। পেশাগত ক্ষেত্রে কাজের পাহাড়প্রমাণ চাপ, বাড়ি ফিরেও সংসারের দায়-দায়িত্ব সামলাতে হয়। দু’দিক বজায় রাখতে গিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়তে থাকে। প্রত্যাশা পূরণ না হলে আবার হতাশা, অবসাদও গ্রাস করে অনেককে। চিকিৎসকেরা বলছেন, মানসিক চাপ যদি বাড়তে শুরু করে, তা হলে তার অনেক লক্ষণই ফুটে উঠতে থাকে চেহারায়। তার মধ্যেই একটি হল চোখের পাতা কাঁপা। খুব বেশি উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা থেকে এমন হতে পারে।
ঠিক মতো ঘুমোচ্ছেন তো?
কম ঘুমও চোখের পাতা কাঁপার আরও একটি লক্ষণ। চিকিৎসকেরা বলেন, সারা দিন যতই ব্যস্ততা থাক, যতই পরিশ্রম করুন না কেন, রাতে টানা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। যদি ঠিকমতো ঘুম না হয়, তা হলেই চোখ-মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়ে। রাত জেগে কাজের অভ্যাস, টিভি-ল্যাপটপ-মোবাইল দেখে দীর্ঘ সময় কাটানো ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেয়। তখন শারীরিক দুর্বলতাও দেখা দিতে থাকে। এর থেকেও চোখের পাতা কাঁপা বা মায়োকেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।
অ্যালার্জি আছে কি?
যদি দেখেন সকালে উঠে চোখের পাতা ভারী লাগছে, মাঝেমধ্যেই চোখের পাতা কাঁপছে, সেই সঙ্গেই চোখে চুলকানি, অনবরত চোখ থেকে জল পড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা হলে বুঝতে হবে অ্যালার্জিজনিত কিছু সমস্যা হচ্ছে। ঠান্ডা লেগে অ্যালার্জি হয় অনেকের, কারও আবার কিছু বিশেষ খাবারে অ্যালার্জি থাকে। রাইনিটিস থাকলেও এমন হতে পারে।
চা-কফি ঘন ঘন খান?
দিনে কত কাপ চা বা কফি খাচ্ছেন, সেটা খেয়াল রাখেন কি? অতিরিক্ত ক্যাফিন কিন্তু শরীরের জন্য ভাল নয়। গবেষণা বলছে, বেশিমাত্রায় ক্যাফিন শরীরে ঢুকলে তা ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। তখন মানসিক ক্লান্তি বাড়ে। তার থেকেও চোখ কাঁপার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
অ্যালকোহলে আসক্তি কি বাড়ছে?
মদ্যপানের নেশা যদি বাড়ে, তার থেকেও বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকেরা বলেন, অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান থেকেও চোখের পাতা কাঁপা বা মায়োকেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
দিনভর মোবাইল-ল্যাপটপে চোখ
অফিসে দিনভর ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ। বাড়ি ফিরে আবার মোবাইল বা ট্যাব নিয়ে বসে পড়লেন। রাতভর মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি চলছেই। তা ছাড়া, রাত জেগে সিনেমা, ওয়েব সিরিজ় দেখা তো আছেই। চিকিৎসকেরা বলছেন, এখনকার ছেলেমেয়েরা চোখকে একটুও বিশ্রাম দেয় না। শরীরের যেমন ক্লান্তি আসে, চোখও ক্লান্ত হয়। তাই চোখেরও বিশ্রাম দরকার। সেটা না হলেই তখন চোখ ফুলে যাওয়া, শুষ্ক চোখ বা ড্রাই আইয়ের সমস্যা দেখা দেয়। তার থেকেও চোখের পাতা কাঁপতে শুরু করে। যদি দিনে বার দুয়েক এমন হয়, তা হলে চোখ বন্ধ করে কিছু ক্ষণ থাকলে বা মেডিটেশন করে সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু যদি অনবরত এমন হতে থাকে, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভাল।