বরিশাল বিশ্ববিদ্যায় (ববি) এলাকা থেকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের বের করে দিয়ে এলাকা দখলে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস দখলে নেয়। বর্তমানে ক্যাম্পাসে দ্বিতীয় দফায় পুলিশ প্রবেশের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, পুলিশের হামলায় ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, আমরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পুলিশ কোনো ধরনের বিনা উস্কানিতে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার শেল, ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে গেলে তারা পাল্টা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী প্রশাসন পিছু হটতে বাধ্য হয়।
আরেক শিক্ষার্থী ইফাত বলেন, পুলিশ-র্যাব সদস্যরা আমাদের কাছে আত্মসমর্পন করেছেন। তারা বলছেন কোনো অ্যাকশনে যাবেন না। তারা ক্যাম্পাস এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে চান। আমরা শিক্ষার্থীরা তাদের দপদপিয়া সেতু পার করে দিয়ে এসেছি।
নুসরাত নামে আরেক আন্দোলনকর্মী বলেন, ৬ জনকে খুন করেছে পুলিশ প্রশাসন। এই সংখ্যা ৬০০ হলেও আমরা পিছু হটব না। আমরা সকলে ঘর থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি হয়তো আর ফিরে যাব না। কিন্তু কোটা সংস্কারের আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ঘরে ফিরতে চাই না।
ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ সদস্য পিছু হটার বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের সড়ক ছাড়া করতে প্রথম অবস্থায় পিছু হটলেও ফোর্স বাড়িয়ে পুনরায় ক্যাম্পাস এলাকায় প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত আহত ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন গুলিতে আহত।
এর আগে সকালে নথুল্লাবাদ, চৌমাথা ও রূপাতলীতে সড়ক অবরোধ করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রথমে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক ছাড়া করার চেষ্টা করলেও দ্বিতীয় দফায় ১২টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারি নেতাকর্মীরা বল প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে উঠিয়ে দেন।
এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, শুধু শিক্ষার্থীরাই নন এলাকাবাসীও আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সড়কে নেমেছেন। ছেলে, বুড়ো, শিশুরা হাতের কাছে যা পেয়েছে তা নিয়েই এসেছেন।
কর্নকাঠীর বাসিন্দা মোস্তফা বলেন, শিক্ষার্থীরা আজকে ১০/১২ দিন ধরে আন্দোলন করছে। তারা একটি গাড়ি ভাঙেনি, কোথাও সহিংসতা করেনি। অথচ আজকে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়তে থাকে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এজন্য আমি এসেছি। আমার ঘরের সকলে এবং এই এলাকাবাসীও নেমে এসেছে। এভাবে চলতে পারে না। কথা না শুনলেই আপনি গুলি করে দেবেন কেন? আমার কি কথা বলার অধিকার নেই?
উল্লেখ্য, বুধবার সকাল থেকে বরিশাল নগরীতে টানা ১২ ঘণ্টা সংঘর্ষের পরও সড়ক দখলে নিতে পারেনি পুলিশ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পিছু হটলো।