মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সালসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রিয়াজুল ফরাজী (৪৫) নামের এক দিনমজুর গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় এ মামলা হয়েছে।
সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রিয়াজুলের স্ত্রী রুমা বেগম বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি করেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. আসলাম খান মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ৪ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সুপার মার্কেট এলাকার কৃষি ব্যাংকসংলগ্ন স্থানে ছাত্র–জনতার শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। ওই সময় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সালের নির্দেশে অস্ত্র, ককটেল, ছুরি, রামদা নিয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্রজনতার ওপর হামলা করে। হামলার একপর্যায়ে ফয়সালের নির্দেশে শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নসিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন গুলি চালায়। মামলার অন্য আসামিরা তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে সেই জায়গা ছাড়ে তারা।
পরবর্তী সময়ে রিয়াজুল ফরাজীকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ছাড়া ওই দিন সংঘর্ষে নুর মোহাম্মদ সরদার, মো. সজল মোল্লাসহ আরও দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব ছাড়াও জেলার গজারিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ, সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সোহেল, মিরকাদিম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহিন, পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, রামপাল ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু শেখ, মহাকালি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ঢালী, মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারি, শিলই ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ মৃধা, বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন পীর, চরকেওয়ার ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ভুইয়া (আফছু), সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির মাস্টার, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুরুজ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান লাকুম, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নসিবুল ইসলাম নোবেল, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত হোসাইন সাগর, সরকারি হরগঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নিবির আহম্মেদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়সাল মৃধা, শহর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রায়হানুজ্জামান রাসেলসহ মোট ২০৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনসহ মোট ৫০০ জনের নামে মামলা করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার বলেন, হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরাজী (৩৫), মো. সজল (৩০) ও ডিপজল (১৯)। নিহত রিয়াজুল মৃত কাজী মতিনের ছেলে, সজল আলী আকবরের ছেলে ও ডিপজল সিরাজ সরদারের ছেলে। তারা সবাই শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া অন্তত ২৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন দেড় শতাধিক।