বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই অঞ্চলের সমুদ্রগুলোর পানির স্তর বিশ্বব্যাপী গড়ের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত হারে বাড়ছে। প্রতিবছরই প্রশান্ত মহাসাগরের পানির স্তর ০.০২ শতাংশ করে বাড়ছে। আরও চিন্তার বিষয় হলো প্রশান্ত মহাসাগরের ধারে কাছে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ফলে আগামী দিনে এগুলো বাড়তি মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠবে।
এনিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমি টোঙ্গায় রয়েছি, একটি বৈশ্বিক সতর্কবার্তা জারি করতে ‘সমুদ্রকে বাঁচান’। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বিপর্যয় এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জকে বিপদের মুখে ফেলছে। দ্বীপপুঞ্জের নিচে বিস্তীর্ণ প্রবাল প্রাচীরগুলো হুমকির সম্মুখীন।
ওয়ার্ল্ড মেটারোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের পানির স্তর পরিমাপ করছে। পর্যবেক্ষণে তারা জানিয়েছে, সমুদ্রতীরকে ধীরে ধীরে নিজের গ্রাসে পরিণত করছে প্রশান্ত মহাসাগর। সমীক্ষা থেকে এটাও জানা গিয়েছে বিগত ৩০ বছরে প্রশান্ত মহাসাগরের পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। কিছু সাইট, বিশেষ করে কিরিবাতি ও কুক দ্বীপপুঞ্জে পানির স্তর সেভাবে না বাড়লেও অন্যান্য সাইটগুলো যেমন সামোয়া এবং ফিজির রাজধানী শহরগুলোর কাছে সমুদ্রের পানির স্তর প্রায় তিনগুণ বেশি বেড়ে চলেছে।
নিম্নাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ টুভালুতে জমি ইতিমধ্যেই এতটাই দুষ্প্রাপ্য যে শিশুরা তাদের নিজেদের অস্থায়ী খেলার মাঠ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টারমাক ব্যবহার করে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, টুভালু আগামী ৩০বছরের মধ্যে মানচিত্র থেকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে মুছে যেতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোর দুর্দশা অতীতে সহজেই উপেক্ষা করা হয়েছে তাদের আপেক্ষিক বিচ্ছিন্নতা এবং অর্থনৈতিক শক্তির অভাবের কারণে। কিন্তু এই অঞ্চলটিকে বিজ্ঞানীরা ক্রমবর্ধমানভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, যা সম্ভবত গ্রহের অন্যান্য অংশের সম্মুখীন হওয়া সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করছে।
অস্ট্রেলিয়ান জলবায়ু গবেষক ওয়েস মরগান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে এবং জলবায়ু দূষণ কাটানো তাদের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। লাখ লাখ বর্গমাইল গ্রীষ্মমন্ডলীয় মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ আজ মানবজাতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
জাতিসংঘের মতে, বেশিরভাগ মানুষ উপকূলের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে। ক্রমবর্ধমান সাগর দুষ্প্রাপ্য জমি গ্রাস করছে এবং অত্যাবশ্যক খাদ্য ও পানির উৎসকে ধ্বংস করছে।