ঢাকা , রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুন্সীগঞ্জের দেড় কোটি টাকার মর্ডান মার্কেট’ এখন ভগ্ন পরিত্যাক্ত, গণসৌচাগার!

মুন্সীগঞ্জের দেড় কোটি টাকার মর্ডান মার্কেট।

মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা,অনিয়ম ও নানা দুর্নীতির কারণে গ্রহীতাদের প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পত্তির ‘দ্বিতলা মর্ডান মার্কেটটি ভগ্ন- বিধ্বস্ত-পরিত্যাক্ত, গণসৌচাগার ও মাদক সেবনকারীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।

এক বছরের চুক্তিতে বিগত ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে শ্রীনগর উপজেলায় মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব জমিতে ‘দ্বিতলা মর্ডান মার্কেটটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এক বছরের মধ্যে মর্ডান মাকের্টের পুরো কাজ শেষ করেননি।অভিযোগ উঠেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের দুই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও ঠিকাদারের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণের বিনিময়ে ঠিকাদারকে অসংখ্যবার মার্কেট নির্মাণ কাজের সময় বৃদ্ধি করে দেন। নিমার্ণ কাজের সময় বৃদ্ধি করা হলেও রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ ২২ বছরেও সম্পন্ন হয়নি মার্কেটের নির্মাণ কাজ। এই মার্কেটের যতটুকু কাজ করা হয়েছে তাও ওই দুর্নীতিবাজ দুই কর্মকর্তার নানা অনিয়ম- স্বেচ্ছাচারিতায় বর্তমানে অযতœ-অবহেলায় ভগ্ন-পরিত্যাক্ত গণসৌচাগারে রূপান্তরিত হয়েছে ১৩৬ জন গ্রহীতার সখের মর্ডান মার্কেটটির।

এদিকে নিমার্ণ কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ না হওয়ায় গ্রহীতাদের কাছ থেকে দোকান ভাড়া আদায় করা যাচ্ছে না। ফলে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ বিশাল অঙ্কের টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্রীনগর উপজেলায় ডাক বাংলার পাশের সড়কে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের দ্বিতল ‘মর্ডান মার্কেটটির করুণ দশা। মাকের্টের নিচু তলার কিছু সংখ্যক দোকান পরিপাটি ও ব্যবসা বাণিজ্য চলছে। এছাড়া মার্কেটের ৬০ ভাগ দোকানের পলেস্তর খসে গেছে,ইট সুরকি ও থাম ভেঙ্গে পড়েছে। দ্বিতীয় তলায় এর চেয়ে নাজুক অবস্থা। বারান্দা জুড়ে বৃষ্টির পানি জমে আছে দীর্ঘ বছর। মাকের্টের কোথাও একটি রেলিং নেই। দুই পাশের দোকান ঘরের একটিরও সার্টার দরজা নেই। বেশির ভাগ সার্টার ছাড়া থাকায় স্থানীয়রা দোকান ঘর গুলোকে নিজেদের গণসৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং ময়লা অবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করে তুলেছে। এছাড়াও এখানে গড়ে উঠেছে মাদক সেবনকারীদের নিরাপদ আশ্রয় স্থল।

ক্ষতিগ্রস্ত ১০/১২ জন গ্রহীতারা বলছেন, জেলা পরিষদ মাকের্টের দোকান ঘরের দলিল কিনেছি লাখ টাকা সত্যি কিন্তু ভোগ করতে পারছিনা! অনেকের মার্কেটের প্রতি অনিহা এবং বিরক্ততা দেখা দিয়েছে। ধারে কাছেও আসেনা কেউ। আর এসে বা কি করবে? নিমাণ কার্জ অসম্পন্ন মার্কেটটি । শতবার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে মেরামত করবে। কিন্তু ২২ বছর হয়ে গেছে অথচ মার্কেটটি আলোর মুখ দেখলো না! মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রতিমাসে জমিদারি ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে কিন্ত মার্কেটটি সংস্কার করছেনা।

কেন মার্কেটটির সংস্কার কাজ করা হচ্ছে না জানতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রহীতা মো: কার্জন মিয়া বলেন, ঠিকাদার আর মার্কেটের দেখা শুনার দায়িত্বরত জেলা পরিষদের দুই কর্মকর্তার দুর্নীতি, গাফলতি, নানা অনিয়মের কারণে মর্ডান মার্কেটের প্রায় ১০০ দোকান ব্যবহারযোগ্য হচ্ছে না। অব্যবহারযোগ্য পড়ে রয়েছে। কারণ দোকান গুলোর সার্টার নেই, পলেস্তর করা নেই, ভেঙ্গে পড়ছে ইট সুরকি! বৃষ্টি হলে পানি চুইয়ে পড়ছে,পানি জমে থাকে, ভেঙ্গে যাচ্ছে পিলার। জেলা পরিষদের মার্কেটটি খুব নি¤œমানের কাজ করা হয়েছে। এক কথায় আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রহীতারা সবাই জোর দাবী জানান, মার্কেট নিমার্ণে যে অনিয়ম দুর্নীতি অবহেলা করা হয়েছে তা সুষ্ঠ তদন্ত করা হউক দোষীদের বিচার করা হউক। মার্কেটটির দ্রæত পুনঃসংস্কার করা হোক।

মো: কার্জন মিয়া দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন, এই মার্কেটে আমার দুটি দোকান রয়েছে। ভাড়া দিয়েছি কিন্তু ভাড়া তুলতে পারিনা। লজ্জা লাগে, দোকান গুলোর নাজুক, বেহাল অবস্থা ভাড়াটিয়াও এখানে ঠিক মতো দোকান করতে পারছে না। যারা দোকান ঘর (দলিল) কিনেছে তাদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি যাচ্ছে।

অন্যদিকে মো: স্বপন নামে আরেক গ্রহীতা বলেন,মাকের্টের নিচ তলায় আমার দুটি দোকান। জেলা পরিষদকে প্রতিমাসে জমিদারি খাজনা পরিশোধ করছি। ১৩শ’৫০ টাকা। অথচ দোকানের পলেস্তার, ইট সুরকি খসে পড়ছে! আমরা ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারছিনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মার্কেটের নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম করা হয়েছে। এখনো সম্পুর্ণ কাজ শেষ করা হয়নি।আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মার্কেট নিমার্ণে কাজ ধরা হয়েছে কিন্তু নিচু মানের কাজ করা হয়েছে।

আরেক গ্রহীতা মো: শাহাদাত হোসেন জানান, জেলা পরিষদ যেহেতু টাকা ফেরত দেবেনা। আর টাকা গ্রহীতাদের ফেরত দেওয়ার সুযোগও নেই চুক্তি অনুযায়ী। একটি অসম্পন্ন মার্কেট তোলা হয়েছে। তার এখন ভগ্ন-রুগ্ন ভয়াবহ করুণ দশা। আমার ৩টি দোকান ছিলো। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গত ৫/৬ মাস আগে কম মূল্যে দোকান গুলো বিক্রি করে দিয়েছি।

সংশ্লিষ্ট সৃত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা ডাকবাংলোর পশ্চিমে দ্বিতল মার্কেট নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ এর ০৫-১১-২০০২ খ্রি: তারিখের মুজেপ/সি-৪৯/২০০২/প্রকৌ:৪৫৬ স্মারকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছিলো। কার্যাদেশ মোতাবেক বর্ণিত মার্কেট নির্মাণ সমাপ্তির তারিখ ছিলো ০৫-১১-২০০৩ খ্রি:। অথচ আজও মার্কেট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। ওই মার্কেট নির্মাণের নথি ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী শাহানাজ বেগম। নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও ঠিকাদার হতে উৎকোচ গ্রহণের বিনিময়ে শাহানাজ বেগম ঠিকাদারকে অসংখ্যবার মার্কেট নির্মাণ কাজের সময় বৃদ্ধি করেছেন। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন গ্রহীতার কাছ থেকে দলিলের নাম পরিবর্তন (নামজারি) করতে ১০ হাজার টাকা জায়গায় ১ লাখ টাকা করে উৎকোচ আদায় করেছেন।

এদিকে সৃত্রটি আরো জানান, মার্কেট নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন জেলা পরিষদের প্রশাসনিক (হিসাবরক্ষক )কর্মকর্তা আকরাম আলী হালদার। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ঠিকাদার কর্তৃক জমাকৃত ১৬ লাখ টাকা জামানতের মধ্যে ৮ লাখ টাকা ফেরত প্রদান করেছেন। যা মার্কেট নির্মাণ সংক্রান্ত শর্ত পরিপন্থী।এছাড়াও

আকরাম আলী হালদার ও শাহানাজ বেগম দম্পতীর দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দরুণ ওই মার্কেটের নির্মাণ কাজ আজও সম্পন্ন হয়নি। ফলে মার্কেটের দোকান বরাদ্দ গ্রহীতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং জেলা পরিষদ বিপুল পরিমানের রাজস্ব আদায় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে মার্কেটের বিভিন্ন দেয়াল ও অংশবিশেষ ভেঙ্গে পরেছে। মার্কেট ভবনটি অযতœ অবহেলায় ধ্বংসস্তুপে রূপ নিয়েছে।

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের নিজস্ব জমিতে মার্কেটটি নিমার্ণের জন্য ১৩৬ জন গ্রহীতার কাছ থেকে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা সালামি নেওয়া হয়। দোকান বরাদ্দ মূল্য ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ টাকা এবং দরপত্রে নিমার্ণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ টাকা। তার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের ১৩৬ দোকান, ১৩৬ নথি, ১৩৬ জন বরাদ্দকৃত গ্রহীতা। আর দ্বিতল মর্ডান মার্কেটটির নিমার্ণের কাজ পান শ্রীনগরের উপজেলার মেসার্স অর্পন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন,দীর্ঘ বছর যাবৎ মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ জিম্মি হয়ে আছে আকরাম আলী হালদার ও শাহানাজ দম্পতির হাতে। একটি পরিবারের ৪ জন সদস্য মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদে চাকুরী করে লুটতরাজ করে যাচ্ছে অথচ দেখার কেউ নেই।

এদিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসনিক হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা মো: আকরাম আলী হায়দার তার বিরুদ্ধে উঠা নানা অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি এখন চাকরীতে নেই।গত মার্চে অবসরে গেছি।শ্রীনগর উপজেলায় জেলা পরিষদের মর্ডান মার্কেটের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না।

অপরদিকে জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী শাহানাজ বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী আবুল হুসাইন বলেন, আমি মর্ডান মার্কেটটির কোনো কাজই করিনি। আমি দেখিও নাই।তবে দীর্ঘ ২২ বছর মার্কেটটি মৃত দেহের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

তিনি আরো বলেন, যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করেছিলেন তারা আমাদের এখনো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। ওর সাথে হিসেব নিকাস আছে। নানা অনিয়ম দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তদন্তে জেলা পরিষদ, এলজিইডি, পিডবিøউডিকে নিয়ে ৩ সদস্য কমিটি করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের দেড় কোটি টাকার মর্ডান মার্কেট’ এখন ভগ্ন পরিত্যাক্ত, গণসৌচাগার!

আপডেট সময় ০৯:৫১:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা,অনিয়ম ও নানা দুর্নীতির কারণে গ্রহীতাদের প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পত্তির ‘দ্বিতলা মর্ডান মার্কেটটি ভগ্ন- বিধ্বস্ত-পরিত্যাক্ত, গণসৌচাগার ও মাদক সেবনকারীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।

এক বছরের চুক্তিতে বিগত ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে শ্রীনগর উপজেলায় মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব জমিতে ‘দ্বিতলা মর্ডান মার্কেটটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এক বছরের মধ্যে মর্ডান মাকের্টের পুরো কাজ শেষ করেননি।অভিযোগ উঠেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের দুই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও ঠিকাদারের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণের বিনিময়ে ঠিকাদারকে অসংখ্যবার মার্কেট নির্মাণ কাজের সময় বৃদ্ধি করে দেন। নিমার্ণ কাজের সময় বৃদ্ধি করা হলেও রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ ২২ বছরেও সম্পন্ন হয়নি মার্কেটের নির্মাণ কাজ। এই মার্কেটের যতটুকু কাজ করা হয়েছে তাও ওই দুর্নীতিবাজ দুই কর্মকর্তার নানা অনিয়ম- স্বেচ্ছাচারিতায় বর্তমানে অযতœ-অবহেলায় ভগ্ন-পরিত্যাক্ত গণসৌচাগারে রূপান্তরিত হয়েছে ১৩৬ জন গ্রহীতার সখের মর্ডান মার্কেটটির।

এদিকে নিমার্ণ কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ না হওয়ায় গ্রহীতাদের কাছ থেকে দোকান ভাড়া আদায় করা যাচ্ছে না। ফলে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ বিশাল অঙ্কের টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্রীনগর উপজেলায় ডাক বাংলার পাশের সড়কে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের দ্বিতল ‘মর্ডান মার্কেটটির করুণ দশা। মাকের্টের নিচু তলার কিছু সংখ্যক দোকান পরিপাটি ও ব্যবসা বাণিজ্য চলছে। এছাড়া মার্কেটের ৬০ ভাগ দোকানের পলেস্তর খসে গেছে,ইট সুরকি ও থাম ভেঙ্গে পড়েছে। দ্বিতীয় তলায় এর চেয়ে নাজুক অবস্থা। বারান্দা জুড়ে বৃষ্টির পানি জমে আছে দীর্ঘ বছর। মাকের্টের কোথাও একটি রেলিং নেই। দুই পাশের দোকান ঘরের একটিরও সার্টার দরজা নেই। বেশির ভাগ সার্টার ছাড়া থাকায় স্থানীয়রা দোকান ঘর গুলোকে নিজেদের গণসৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং ময়লা অবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করে তুলেছে। এছাড়াও এখানে গড়ে উঠেছে মাদক সেবনকারীদের নিরাপদ আশ্রয় স্থল।

ক্ষতিগ্রস্ত ১০/১২ জন গ্রহীতারা বলছেন, জেলা পরিষদ মাকের্টের দোকান ঘরের দলিল কিনেছি লাখ টাকা সত্যি কিন্তু ভোগ করতে পারছিনা! অনেকের মার্কেটের প্রতি অনিহা এবং বিরক্ততা দেখা দিয়েছে। ধারে কাছেও আসেনা কেউ। আর এসে বা কি করবে? নিমাণ কার্জ অসম্পন্ন মার্কেটটি । শতবার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে মেরামত করবে। কিন্তু ২২ বছর হয়ে গেছে অথচ মার্কেটটি আলোর মুখ দেখলো না! মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রতিমাসে জমিদারি ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে কিন্ত মার্কেটটি সংস্কার করছেনা।

কেন মার্কেটটির সংস্কার কাজ করা হচ্ছে না জানতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রহীতা মো: কার্জন মিয়া বলেন, ঠিকাদার আর মার্কেটের দেখা শুনার দায়িত্বরত জেলা পরিষদের দুই কর্মকর্তার দুর্নীতি, গাফলতি, নানা অনিয়মের কারণে মর্ডান মার্কেটের প্রায় ১০০ দোকান ব্যবহারযোগ্য হচ্ছে না। অব্যবহারযোগ্য পড়ে রয়েছে। কারণ দোকান গুলোর সার্টার নেই, পলেস্তর করা নেই, ভেঙ্গে পড়ছে ইট সুরকি! বৃষ্টি হলে পানি চুইয়ে পড়ছে,পানি জমে থাকে, ভেঙ্গে যাচ্ছে পিলার। জেলা পরিষদের মার্কেটটি খুব নি¤œমানের কাজ করা হয়েছে। এক কথায় আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রহীতারা সবাই জোর দাবী জানান, মার্কেট নিমার্ণে যে অনিয়ম দুর্নীতি অবহেলা করা হয়েছে তা সুষ্ঠ তদন্ত করা হউক দোষীদের বিচার করা হউক। মার্কেটটির দ্রæত পুনঃসংস্কার করা হোক।

মো: কার্জন মিয়া দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন, এই মার্কেটে আমার দুটি দোকান রয়েছে। ভাড়া দিয়েছি কিন্তু ভাড়া তুলতে পারিনা। লজ্জা লাগে, দোকান গুলোর নাজুক, বেহাল অবস্থা ভাড়াটিয়াও এখানে ঠিক মতো দোকান করতে পারছে না। যারা দোকান ঘর (দলিল) কিনেছে তাদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি যাচ্ছে।

অন্যদিকে মো: স্বপন নামে আরেক গ্রহীতা বলেন,মাকের্টের নিচ তলায় আমার দুটি দোকান। জেলা পরিষদকে প্রতিমাসে জমিদারি খাজনা পরিশোধ করছি। ১৩শ’৫০ টাকা। অথচ দোকানের পলেস্তার, ইট সুরকি খসে পড়ছে! আমরা ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারছিনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মার্কেটের নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম করা হয়েছে। এখনো সম্পুর্ণ কাজ শেষ করা হয়নি।আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মার্কেট নিমার্ণে কাজ ধরা হয়েছে কিন্তু নিচু মানের কাজ করা হয়েছে।

আরেক গ্রহীতা মো: শাহাদাত হোসেন জানান, জেলা পরিষদ যেহেতু টাকা ফেরত দেবেনা। আর টাকা গ্রহীতাদের ফেরত দেওয়ার সুযোগও নেই চুক্তি অনুযায়ী। একটি অসম্পন্ন মার্কেট তোলা হয়েছে। তার এখন ভগ্ন-রুগ্ন ভয়াবহ করুণ দশা। আমার ৩টি দোকান ছিলো। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গত ৫/৬ মাস আগে কম মূল্যে দোকান গুলো বিক্রি করে দিয়েছি।

সংশ্লিষ্ট সৃত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা ডাকবাংলোর পশ্চিমে দ্বিতল মার্কেট নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ এর ০৫-১১-২০০২ খ্রি: তারিখের মুজেপ/সি-৪৯/২০০২/প্রকৌ:৪৫৬ স্মারকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছিলো। কার্যাদেশ মোতাবেক বর্ণিত মার্কেট নির্মাণ সমাপ্তির তারিখ ছিলো ০৫-১১-২০০৩ খ্রি:। অথচ আজও মার্কেট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। ওই মার্কেট নির্মাণের নথি ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী শাহানাজ বেগম। নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও ঠিকাদার হতে উৎকোচ গ্রহণের বিনিময়ে শাহানাজ বেগম ঠিকাদারকে অসংখ্যবার মার্কেট নির্মাণ কাজের সময় বৃদ্ধি করেছেন। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন গ্রহীতার কাছ থেকে দলিলের নাম পরিবর্তন (নামজারি) করতে ১০ হাজার টাকা জায়গায় ১ লাখ টাকা করে উৎকোচ আদায় করেছেন।

এদিকে সৃত্রটি আরো জানান, মার্কেট নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন জেলা পরিষদের প্রশাসনিক (হিসাবরক্ষক )কর্মকর্তা আকরাম আলী হালদার। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ঠিকাদার কর্তৃক জমাকৃত ১৬ লাখ টাকা জামানতের মধ্যে ৮ লাখ টাকা ফেরত প্রদান করেছেন। যা মার্কেট নির্মাণ সংক্রান্ত শর্ত পরিপন্থী।এছাড়াও

আকরাম আলী হালদার ও শাহানাজ বেগম দম্পতীর দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দরুণ ওই মার্কেটের নির্মাণ কাজ আজও সম্পন্ন হয়নি। ফলে মার্কেটের দোকান বরাদ্দ গ্রহীতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং জেলা পরিষদ বিপুল পরিমানের রাজস্ব আদায় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে মার্কেটের বিভিন্ন দেয়াল ও অংশবিশেষ ভেঙ্গে পরেছে। মার্কেট ভবনটি অযতœ অবহেলায় ধ্বংসস্তুপে রূপ নিয়েছে।

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের নিজস্ব জমিতে মার্কেটটি নিমার্ণের জন্য ১৩৬ জন গ্রহীতার কাছ থেকে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা সালামি নেওয়া হয়। দোকান বরাদ্দ মূল্য ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ টাকা এবং দরপত্রে নিমার্ণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ টাকা। তার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের ১৩৬ দোকান, ১৩৬ নথি, ১৩৬ জন বরাদ্দকৃত গ্রহীতা। আর দ্বিতল মর্ডান মার্কেটটির নিমার্ণের কাজ পান শ্রীনগরের উপজেলার মেসার্স অর্পন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন,দীর্ঘ বছর যাবৎ মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ জিম্মি হয়ে আছে আকরাম আলী হালদার ও শাহানাজ দম্পতির হাতে। একটি পরিবারের ৪ জন সদস্য মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদে চাকুরী করে লুটতরাজ করে যাচ্ছে অথচ দেখার কেউ নেই।

এদিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসনিক হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা মো: আকরাম আলী হায়দার তার বিরুদ্ধে উঠা নানা অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি এখন চাকরীতে নেই।গত মার্চে অবসরে গেছি।শ্রীনগর উপজেলায় জেলা পরিষদের মর্ডান মার্কেটের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না।

অপরদিকে জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী শাহানাজ বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী আবুল হুসাইন বলেন, আমি মর্ডান মার্কেটটির কোনো কাজই করিনি। আমি দেখিও নাই।তবে দীর্ঘ ২২ বছর মার্কেটটি মৃত দেহের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

তিনি আরো বলেন, যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করেছিলেন তারা আমাদের এখনো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। ওর সাথে হিসেব নিকাস আছে। নানা অনিয়ম দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তদন্তে জেলা পরিষদ, এলজিইডি, পিডবিøউডিকে নিয়ে ৩ সদস্য কমিটি করা হয়েছে।