ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গর্ভবর্তী নারীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি

ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্যে শনাক্ত হলো চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস : বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

যদিও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ হয়েছে, তবে দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ নভেম্বরেও বজায় রয়েছে, এবং প্রতি সপ্তাহেই রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এই উদ্বেগের মাঝেই দেশে চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর এ দুটি রোগ শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস তিনটি আলাদা রোগ, তবে এদের সবগুলোরই সংক্রমণ এডিস মশার মাধ্যমে ঘটে। চিকুনগুনিয়া রোগের কারণে স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে, এবং জিকা ভাইরাস গর্ভবর্তী নারীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, যা ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

এডিস মশার গতিবিধি ও সংক্রমণ ঠেকাতে নিয়মিত মনিটরিং ও পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বলছেন, যদি মশা নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা একসঙ্গে মারাত্মক সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর জানিয়েছেন, রোগগুলোর বিস্তৃতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া ও জিকা নিয়েও সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। বিশেষত গর্ভবতী নারীদের এই সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে গুরুতর জটিলতা এড়ানো যায়।

তথ্যসূত্র অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া এবং জিকা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও নিয়মিত সার্ভিল্যান্সের অভাবের কারণে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

জিকা ভাইরাস কী?

জিকা একটি এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণ মানুষের জন্য এটি তুলনামূলকভাবে কম বিপজ্জনক হলেও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। জিকা ভাইরাস গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায়, যার ফলে সন্তানের মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হতে পারে (মাইক্রোসেফালি) এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা দেখা দিতে পারে।

জিকা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?

এডিস মশার কামড়ে একজন সুস্থ ব্যক্তি জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বা গর্ভাবস্থায় মায়ের দেহ থেকে সন্তানের শরীরে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভপাত, অপরিণত শিশুর জন্ম এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এই ভাইরাস থেকে বাঁচার সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিকুনগুনিয়া কী?

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত জ্বর, যা ডেঙ্গু এবং জিকার মতোই এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। প্রথম ১৯৫২ সালে আফ্রিকাতে এটি শনাক্ত হয়, এরপর এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও এর বিস্তার দেখা যায়। বাংলাদেশে ২০০৮ সালে প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ

চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো হঠাৎ করে তীব্র জ্বর এবং গিঁটে গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা। এছাড়াও মাথাব্যথা, শরীর ঠান্ডা অনুভব করা, বমি বমি ভাব, চামড়ায় লালচে দানা এবং মাংসপেশিতে ব্যথা দেখা দিতে পারে। সাধারণত রোগটি নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে গিঁটের ব্যথা দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে।

প্রতিরোধ ও সচেতনতা

এডিস মশার বিস্তার রোধ করা এবং নিজের আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল উপায়। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার, দীর্ঘ পোশাক পরিধান, এবং মশার উৎপাত কমাতে নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত।

গর্ভবর্তী নারীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি

ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্যে শনাক্ত হলো চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস : বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

আপডেট সময় ০৩:৪৮:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

যদিও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ হয়েছে, তবে দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ নভেম্বরেও বজায় রয়েছে, এবং প্রতি সপ্তাহেই রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এই উদ্বেগের মাঝেই দেশে চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর এ দুটি রোগ শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস তিনটি আলাদা রোগ, তবে এদের সবগুলোরই সংক্রমণ এডিস মশার মাধ্যমে ঘটে। চিকুনগুনিয়া রোগের কারণে স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে, এবং জিকা ভাইরাস গর্ভবর্তী নারীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, যা ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

এডিস মশার গতিবিধি ও সংক্রমণ ঠেকাতে নিয়মিত মনিটরিং ও পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বলছেন, যদি মশা নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা একসঙ্গে মারাত্মক সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর জানিয়েছেন, রোগগুলোর বিস্তৃতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া ও জিকা নিয়েও সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। বিশেষত গর্ভবতী নারীদের এই সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে গুরুতর জটিলতা এড়ানো যায়।

তথ্যসূত্র অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া এবং জিকা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও নিয়মিত সার্ভিল্যান্সের অভাবের কারণে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

জিকা ভাইরাস কী?

জিকা একটি এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণ মানুষের জন্য এটি তুলনামূলকভাবে কম বিপজ্জনক হলেও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। জিকা ভাইরাস গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায়, যার ফলে সন্তানের মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হতে পারে (মাইক্রোসেফালি) এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা দেখা দিতে পারে।

জিকা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?

এডিস মশার কামড়ে একজন সুস্থ ব্যক্তি জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বা গর্ভাবস্থায় মায়ের দেহ থেকে সন্তানের শরীরে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভপাত, অপরিণত শিশুর জন্ম এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এই ভাইরাস থেকে বাঁচার সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিকুনগুনিয়া কী?

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত জ্বর, যা ডেঙ্গু এবং জিকার মতোই এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। প্রথম ১৯৫২ সালে আফ্রিকাতে এটি শনাক্ত হয়, এরপর এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও এর বিস্তার দেখা যায়। বাংলাদেশে ২০০৮ সালে প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ

চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো হঠাৎ করে তীব্র জ্বর এবং গিঁটে গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা। এছাড়াও মাথাব্যথা, শরীর ঠান্ডা অনুভব করা, বমি বমি ভাব, চামড়ায় লালচে দানা এবং মাংসপেশিতে ব্যথা দেখা দিতে পারে। সাধারণত রোগটি নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে গিঁটের ব্যথা দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে।

প্রতিরোধ ও সচেতনতা

এডিস মশার বিস্তার রোধ করা এবং নিজের আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল উপায়। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার, দীর্ঘ পোশাক পরিধান, এবং মশার উৎপাত কমাতে নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত।