ঢাকা , শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জরিমানা স্বরূপ দিলেন সাড়ে ১৫ লাখ টাকা

১০দিনের ব্যবধানে একই ঘেরে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ২ পাহারাদারের মৃত্যু

যশোরে মণিরামপুরে ঝাঁপা গ্রামের আব্দুর রহমানের মাছের ঘেরে বিদ‍্যুৎ স্পৃষ্টে ১০ দিনের ব্যবধানে ২ পাহারাদারের মৃত্যু। ঘের মালিক জরিমানা স্বরূপ দিলেন সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। 

নিহত পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের মৃত ফটিক সরদারের ছেলে আব্দুর রহমানের মাছের ঘেরে গত ৮ মাস ধরে একই গ্রামের মৃত মনিরুদ্দীর ছেলে সৈয়দ গাজী পাহারাদারের কাজ করে আসছে। ১০ ডিসেম্বর সকাল ৭ টার দিকে পাহারাদার সৈয়দ গাজী ঘেরের সেচ পাম্প চালাতে গেলে বিদ‍্যুৎ স্পষ্টে মারা যায়।

ওই ঘেরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একই গ্রামের মুকুল হোসেন লাশটি পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিলে গ্রামের লোকজন ছুটে এসে লাশটি উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়। এর পর মামলা না করার শর্তে দেন দরবার শুরু হয়। এক পর্যায় গ্রামের শত শত মানুযের উপস্থিতিতে মিমাংসার স্বার্থে ঝাঁপা বাজারের একটি গণশালিসী বৈঠক বসে। উভয় পক্ষের দাবীদাওয়ার এক পর্যায় নিহতের দুই কন‍্যাকে ১০ লাখ টাকা এবং নিহতের স্ত্রীকে ১ লাখ টাকাসহ মোট ১১ লাখ টাকায় (চেকের ম‍াধ‍্যমে) রফা হয়।

একই শালিসে গত ১০ দিন পূর্বে জরিমানার স্বরুপ মৃত‍্যু আজিজের পরিবারকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার চেকও প্রদান করা হয়েছে। সমুদ্বয় টাকা আগামী ২৩ ডিসেম্বরে ব‍্যাংক থেকে উত্তোলন করে এনে জনসম্মুখে নিহত দুই পরিবারের হাতে হস্তান্তর করবেন ঝাঁপা ইউপির সাবেক চেয়ারম‍্যান ও শালিসী বৈঠকের প্রধান আলাউদ্দীন আহমেদ।

এ বিষয়ে নিহত সৈয়দ গাজীর ভাই আকবার আলী বলেন, ঘের মালিকের অবহেলার কারনে আজ আমার ভাইয়ের মৃত‍্যু হলো। একই ভাবে গত ১০ দিন পূর্বে আজিজ নামে এক ব‍্যক্তি মারা গিয়েছিল। তারপরেও ঘের মালিক বিদ‍্যুতের লাইন ঠিক করেনি। যার কারনে এই মৃত‍্যুর পিছনে সেই দায়ী। যার ফলস্বরুপ শালিসী বৈঠকের মাধ‍‍্যমে তাকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে শালিসীবর্গ।

ঘের মালিকের ভাই আব্দুস সাত্তার বলেন, আমার ভাই বহু বছর ধরে ঘেরে মাছ চাষ করে আসছে। এ ধরনের ঘটনা ইতি পুর্বে কোন দিন ঘটেনি। ঘেরের কর্মচারীরা অসাবধানতা বসত কাজ করতে গিয়ে মৃত‍্যুর ঘটনাটা ঘটেছে। দুজন পাহারাদারিই গরীব হওয়ায় আমরা তাদের পরিবারকে ওই টাকা দিয়েছি। এটা কোন জরিমানা নয়।

শালিসী বৈঠকের প্রধান সাবেক চেয়ারম‍্যান আলাউদ্দীন আহমেদ বলেন, গণশালিসে কোন জরিমানা করা হয়নি। উভয় পক্ষের চাওয়া পাওয়ার পর এক পর্যায় দু পক্ষকে এক হয়ে সমাধান করতে বলা হয়। উভয় পক্ষের কয়েকজন  বাইরে থেকে সমাধান করে শালিসী বৈঠকে এসে ১১ লাখ টাকার রফাদফার বিষয়টি উপস্থাপন করেন।

তিনি আরো বলেন, নিহত সৈয়দ পরিবার ১১ লাখা ও নিহত আজিজ পরিবারের সাড়ে ৪ লাখ টাকার দুটি চেক আমার কাছে থাকবে। ওই টাকা ২৩ ডিসেম্বর ব‍্যাংক থেকে উত্তোলন করে এনে জনসম্মুখে দুটি পরিবারের কাছে টাকা হস্তান্তর করা হবে।

এবিষয়ে ঝাঁপা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটস্থল ও লাশের কাছে আসি। আসার পর জানতে পারি লাশটি বিদ‍্যুৎ স্পষ্টে মারা গেছে। তাই লাশটি ময়না তদন্তে করার জন‍্য কাজ শুরু করি ও নিহত পরিবারকে মামলা করার জন‍্য থানায় যাওয়ার কথা বলি। কিন্তু বিষয়টি মিমাংসার জন‍্য স্থানীয় ও দুপক্ষের লোকজনের দাবীর মুখে আমাকে কিছু সময় অপেক্ষা করার জন‍্য অনুরোধ করে। পরে জানতে পারি নিহত পরিবার কোন মামলা মোকদ্দমায় যাবে না। যার কারনে নিহতের পরিবারকে থানায় ওসি স‍্যারের সম্মুখে নিয়ে ইউডি মামলা রুজু করে লাশটি দাফনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে একই ঘেরে গত ১০ দিন পূর্বে অর্থ‍্যাৎ ১ ডিসেম্বর বিকেলে পাহাদার আব্দুল আজিজ কাজ করা কালে বিদ‍্যুৎ স্পষ্টে মারা যায়। সে দিনও নিহত পরিবারের সাথে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় রফাদফা করে নিয়ে হত‍্যা মামলা থেকে রেহায় পায় ঘের মালিক বলে গ্রামবাসীর দাবী। তবে এলাকায় ব‍্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে, যে ঘের মালিক আব্দুর রহমানরা ধর্ণাঢ‍্য ও প্রভাবশালী পরিবার হওয়ায় তারা একের পর এক হত‍্যার মত জঘন‍্যতম ঘটনা ঘটিয়ে আসলে টাকার জোরে পার পেয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি দেখার জন‍্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে স্থানীয়রা।

জরিমানা স্বরূপ দিলেন সাড়ে ১৫ লাখ টাকা

১০দিনের ব্যবধানে একই ঘেরে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ২ পাহারাদারের মৃত্যু

আপডেট সময় ০৭:৩৫:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

যশোরে মণিরামপুরে ঝাঁপা গ্রামের আব্দুর রহমানের মাছের ঘেরে বিদ‍্যুৎ স্পৃষ্টে ১০ দিনের ব্যবধানে ২ পাহারাদারের মৃত্যু। ঘের মালিক জরিমানা স্বরূপ দিলেন সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। 

নিহত পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের মৃত ফটিক সরদারের ছেলে আব্দুর রহমানের মাছের ঘেরে গত ৮ মাস ধরে একই গ্রামের মৃত মনিরুদ্দীর ছেলে সৈয়দ গাজী পাহারাদারের কাজ করে আসছে। ১০ ডিসেম্বর সকাল ৭ টার দিকে পাহারাদার সৈয়দ গাজী ঘেরের সেচ পাম্প চালাতে গেলে বিদ‍্যুৎ স্পষ্টে মারা যায়।

ওই ঘেরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একই গ্রামের মুকুল হোসেন লাশটি পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিলে গ্রামের লোকজন ছুটে এসে লাশটি উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়। এর পর মামলা না করার শর্তে দেন দরবার শুরু হয়। এক পর্যায় গ্রামের শত শত মানুযের উপস্থিতিতে মিমাংসার স্বার্থে ঝাঁপা বাজারের একটি গণশালিসী বৈঠক বসে। উভয় পক্ষের দাবীদাওয়ার এক পর্যায় নিহতের দুই কন‍্যাকে ১০ লাখ টাকা এবং নিহতের স্ত্রীকে ১ লাখ টাকাসহ মোট ১১ লাখ টাকায় (চেকের ম‍াধ‍্যমে) রফা হয়।

একই শালিসে গত ১০ দিন পূর্বে জরিমানার স্বরুপ মৃত‍্যু আজিজের পরিবারকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার চেকও প্রদান করা হয়েছে। সমুদ্বয় টাকা আগামী ২৩ ডিসেম্বরে ব‍্যাংক থেকে উত্তোলন করে এনে জনসম্মুখে নিহত দুই পরিবারের হাতে হস্তান্তর করবেন ঝাঁপা ইউপির সাবেক চেয়ারম‍্যান ও শালিসী বৈঠকের প্রধান আলাউদ্দীন আহমেদ।

এ বিষয়ে নিহত সৈয়দ গাজীর ভাই আকবার আলী বলেন, ঘের মালিকের অবহেলার কারনে আজ আমার ভাইয়ের মৃত‍্যু হলো। একই ভাবে গত ১০ দিন পূর্বে আজিজ নামে এক ব‍্যক্তি মারা গিয়েছিল। তারপরেও ঘের মালিক বিদ‍্যুতের লাইন ঠিক করেনি। যার কারনে এই মৃত‍্যুর পিছনে সেই দায়ী। যার ফলস্বরুপ শালিসী বৈঠকের মাধ‍‍্যমে তাকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে শালিসীবর্গ।

ঘের মালিকের ভাই আব্দুস সাত্তার বলেন, আমার ভাই বহু বছর ধরে ঘেরে মাছ চাষ করে আসছে। এ ধরনের ঘটনা ইতি পুর্বে কোন দিন ঘটেনি। ঘেরের কর্মচারীরা অসাবধানতা বসত কাজ করতে গিয়ে মৃত‍্যুর ঘটনাটা ঘটেছে। দুজন পাহারাদারিই গরীব হওয়ায় আমরা তাদের পরিবারকে ওই টাকা দিয়েছি। এটা কোন জরিমানা নয়।

শালিসী বৈঠকের প্রধান সাবেক চেয়ারম‍্যান আলাউদ্দীন আহমেদ বলেন, গণশালিসে কোন জরিমানা করা হয়নি। উভয় পক্ষের চাওয়া পাওয়ার পর এক পর্যায় দু পক্ষকে এক হয়ে সমাধান করতে বলা হয়। উভয় পক্ষের কয়েকজন  বাইরে থেকে সমাধান করে শালিসী বৈঠকে এসে ১১ লাখ টাকার রফাদফার বিষয়টি উপস্থাপন করেন।

তিনি আরো বলেন, নিহত সৈয়দ পরিবার ১১ লাখা ও নিহত আজিজ পরিবারের সাড়ে ৪ লাখ টাকার দুটি চেক আমার কাছে থাকবে। ওই টাকা ২৩ ডিসেম্বর ব‍্যাংক থেকে উত্তোলন করে এনে জনসম্মুখে দুটি পরিবারের কাছে টাকা হস্তান্তর করা হবে।

এবিষয়ে ঝাঁপা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটস্থল ও লাশের কাছে আসি। আসার পর জানতে পারি লাশটি বিদ‍্যুৎ স্পষ্টে মারা গেছে। তাই লাশটি ময়না তদন্তে করার জন‍্য কাজ শুরু করি ও নিহত পরিবারকে মামলা করার জন‍্য থানায় যাওয়ার কথা বলি। কিন্তু বিষয়টি মিমাংসার জন‍্য স্থানীয় ও দুপক্ষের লোকজনের দাবীর মুখে আমাকে কিছু সময় অপেক্ষা করার জন‍্য অনুরোধ করে। পরে জানতে পারি নিহত পরিবার কোন মামলা মোকদ্দমায় যাবে না। যার কারনে নিহতের পরিবারকে থানায় ওসি স‍্যারের সম্মুখে নিয়ে ইউডি মামলা রুজু করে লাশটি দাফনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে একই ঘেরে গত ১০ দিন পূর্বে অর্থ‍্যাৎ ১ ডিসেম্বর বিকেলে পাহাদার আব্দুল আজিজ কাজ করা কালে বিদ‍্যুৎ স্পষ্টে মারা যায়। সে দিনও নিহত পরিবারের সাথে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় রফাদফা করে নিয়ে হত‍্যা মামলা থেকে রেহায় পায় ঘের মালিক বলে গ্রামবাসীর দাবী। তবে এলাকায় ব‍্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে, যে ঘের মালিক আব্দুর রহমানরা ধর্ণাঢ‍্য ও প্রভাবশালী পরিবার হওয়ায় তারা একের পর এক হত‍্যার মত জঘন‍্যতম ঘটনা ঘটিয়ে আসলে টাকার জোরে পার পেয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি দেখার জন‍্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে স্থানীয়রা।