মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) দায়ের করা মামলায় সকাল ১০টার দিকে সিজেএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে তা পেয়েছেন পরীমনি। সাদা রঙের একটি প্রাডো গাড়িতে করে আজ সোমবার সাতসকালে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত প্রাঙ্গণে আসেন চিত্রনায়িকা পরীমনি।
লিফটে করে আইনজীবীদের সঙ্গে পরীমনি সিজেএম আদালতের সাততলার এজলাসকক্ষে যান।
আদালতে শুনানিতে পরীমনির জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তার আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত। শুনানি নিয়ে আদালত পরীমনির জামিন মঞ্জুর করেন।
পরীমনি আদালতকক্ষের বেঞ্চে বসে পড়েন। জামিননামা লিখতে শুরু করেন তার আইনজীবী। জামিননামায় পরীমনির পক্ষে দুজন জামিনদার স্বাক্ষর করেন। এরপর পরীমনি আদালত ভবনের নিচতলায় নেমে আসেন।
আদালত ভবনের নিচতলায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরীমনি। তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি যে আপনাদের এত ভালোবাসা পেয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাব। আজ আমি আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছি।’
জামিন পাওয়ার পর পরীমনির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এতে লেখা হয়েছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ’।
ব্যবসায়ী নাসিরের দায়ের করা মামলায় গতকাল রোববার পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এদিন পরীমনির আদালতে হাজির না থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
একই মামলায় পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের এপ্রিলে পরীমনি ও জুনায়েদের বিরুদ্ধে সিজেএম আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন গত বছরের ১৮ এপ্রিল আমলে নেন ঢাকার সিজেএম আদালত। গতকাল এই মামলায় পরীমনি ও জুনায়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো।
মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার আদালতে নালিশি মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের ৮ জুন পরীমনি ও তার সহযোগীরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। দিবাগত রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে ক্লাব ত্যাগ করার সময় পরীমনি তাকে ডাক দেন। পরে একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনা মূল্যে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় পরীমনি তাকে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে পরীমনি হত্যাচেষ্টার জন্য একটি গ্লাস ছুড়ে মারেন, যা তার মাথা ও বুকে লাগে।
২০২১ সালের ৮ জুন সাভারের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে পরীমনি ব্যবসায়ী নাসিরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নাসিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। মামলায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ তিন আসামির বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৮ মে অভিযোগ গঠন করেন। পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এ। মামলাটিও সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।