ঢাকা , রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেসটিনির অর্থ ফেরত প্রক্রিয়া শুরুতে চার বাধা

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় ০২:৩৮:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২২১৬ বার পড়া হয়েছে

দীর্ঘ এক যুগ পর কারামুক্ত হয়েছেন ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। তাদের মুক্তিতে নতুন করে আশায় আলো খুঁজে পেয়েছেন ডেসটিনির লাখো ক্রেতা পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীরা।

বিগত সরকারের সময়ে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মাধ্যমে ডেসটিনির কার্যত্রম সর্ম্পূণ বন্ধ কয়ে দেয়া হয়। এতে বিনিয়োগের অর্থ আটকে যায় লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বছরের পর বছর মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় অনেককে।

তবে ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিদের মুক্তিতে খুলেছে সম্ভাবনার দুয়ার। এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরতের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি। দিনের অধিকাংশ সময় ক্রেতা-পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেই কাটাচ্ছেন তারা।

অনেকেই ধারণা করছেন, দ্রুতই অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে ডেসটিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কেউ কেউ। একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের মনে সেটা হলো, কবে থেকে কীভাবে শুরু হচ্ছে অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া?

এ বিষয়ে দৈনিক ডেসটিনির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি দিক। প্রথমত, ট্রি প্লান্টেশন মামলায় রায় অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা ভোগ করে কারামুক্ত হলেও ডেসটিনি গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যাংক হিসাব চালু হয়নি। ১২ বছর ধরে প্রায় সাড়ে ৬০০ ব্যাংক হিসাব জব্দ করে রেখেছে দুদক। ফলে কার্যত কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেনই করা সম্ভব নয় ডেসটিনির পক্ষে। দ্বিতীয়ত, মামলার রায়ে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে এ অর্থ রাষ্ট্রের অনুকৃলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রায় অনুযায়ী, ডেসটিনিতে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো অর্থ ফেরত দিতে পারবে না ডেসটিনি। তৃতীয়ত, এ অর্থ সংগ্রহের উৎস কী হবে-তা নিয়ে। গ্রুপের কর্তাব্যক্তিদের ভাষ্য মতে, বিপুল পরিমাণে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ডেসটিনির। তবে ২০১২ সালে সব সম্পদে রিসিভার নিয়োগ করা হয়। এসব সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়-ব্যবহার বা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই ডেসটিনির। ফলে বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহে সবার আগে এ তিনটি বিষয়ে সুরাহা প্রয়োজন। এ তিন বিষয়ে সুরাহা হলেই প্রয়োজন পড়বে আদালতের নির্দেশ। কেননা ইতিমধ্যেই শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের কাছে অর্থ ফেরত বা প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়ার অধিকারও ডেসটিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন আদালত।

ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সংগত উপায়ে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের অর্থ বিতরণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটিকে গঠন করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

বিচারিক আদালতের রায়ে দেওয়া ওই নির্দেশনার বিরুদ্ধে করা আপিল করেছিল ডেসটিনি। তবে গত বছরের জুলাইয়ে তা খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে বিচারিক আদালতের রায়ে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা বহাল রয়েছে। সেই অরুযায়ী কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা। ডিএমসিএসএলের ৮ লাখ ৫০ হাজার ভুক্তভোগী গ্রাহককে দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে ওই কমিটি।

রায়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড অবসায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অবসায়ন ও ছয় সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশনাসংক্রান্ত রায়ের অংশবিশেষের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ২০২২ সালের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল করে। হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে অবসায়ন ও কমিটি গঠনসংক্রান্ত নির্দেশনার কার্যক্রম স্থগিত করেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করে দুদকের আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠান। চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ চলমান রেখে গত মে মাসে আপিল বিভাগ ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের করা আপিলটি হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের জুলাইয়ে আপিলের ওপর শুনানি হয়।

ডিএমসিএসএল এর মতো একইভাবে ডেসটিনির ট্রি-প্লান্টেশনসহ অন্যান্য সব কোম্পানিতে ডেসটিনির বিনিয়োগকারীদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে আদালতের সুম্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল আমীন দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, ‘আমি প্রথম দিনেই বলেছি, যারা দীর্ঘদিন ডেসটিনির সঙ্গে আছেন তাদের জন্যই আমি লড়ছি…তাদের স্বার্থের প্রশ্নে কোনো আপস করিনি বলেই এক যুগ বিনা অপরাধে জেল খেটেছি। বিনিয়োগকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়াই এখন আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু আদালতের রায়ে আমাদের হাত-পা বাঁধা। কিছুই করার সাধ্য নেই…দ্রুত এ রায়ের আপিল করব। যাতে ব্যাংক হিসাবগুলো সচল করে ডেসটিনির সম্পদ অবমুক্ত হয়। তারপরে অর্থ ফেরতে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন হবে। আমি এখনো আশাবাদী, ন্যায়বিচার পাব। কিছুটা সময় প্রয়োজন। পাশাপাশি দীর্ঘ এক যুগ ডেসটিনিকে পরিকল্পিতভাবে যেভাবে অচল করে রাখা হয়েছে…বহু সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। এসব বিষয়ের আইনি দিক বিবেচনা করে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি। সবকিছু যতটুকু সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যেই হচ্ছে। আমাদের এখন প্রয়োজন শুধুমাত্র ন্যায়বিচার। আমি এখনো আশাবাদী যে, ডেসটিনির সঙ্গে সুবিচার করা হবে।’

অর্থ ফেরত শুরুর প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা কোনো কোনো বিনিয়োগকারীদের জন্য দুরূহ হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল আমীন বলেন, ‘অবশ্যই তাদের কষ্ট আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। সারাদিন তাদের সঙ্গেই সময় পার করছি। সুখ ও দুঃখের কথা শুনছি। আমার ওপর তাদের আস্থা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি এবং আল্লাহ পাকের কাছে শোকর আদায় করছি। কারণ তারা আমাকে ভুল বুঝেননি। এটা বিশাল ব্যাপার। আমিও তাদের হতাশ করব না। ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। ধরুন, ব্যাংক হিসাবগুলো চালু হয়ে গেলেই স্বল্প পরিসরে আমরা সক্ষমতা ফিরে পাব…যাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়,যারা দুর্দিনেও শত কষ্টের মধ্যে ডেসটিনিকে মামলা পরিচালনা থেকে শুরু করে যাবতীয় উপায়ে সহায়তা করেছে এবং আর্থিকভাবে আজ যারা প্রায় নিঃস্ব ও পরিশ্রান্ত, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ ফেরত দেয়া শুরু করব। আর কোনো কিছুর অপেক্ষা করব না। এরপর সম্পদ অবমুক্ত ও আদালতের নির্দেশনা সাপেক্ষে বাকি কাজও ধাপে ধাপে সহজ হবে বলে আশা করি। প্রয়োজন শুধু সুবিচার আর বিনিয়োগকারীদের কিছুটা ধৈর্য।

এদিকে দীর্ঘ ১২ বছর রফিকুল আমীনের পাশে থেকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করছেন মো. আবুল হাছান। তিনি দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, স্যার মুক্ত রয়েই সবার আগের চলে গেলেন ক্রেতা-পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীদের কাছে। এক যুগ জেল খেটে এসেও অক্লান্তভাবে দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা অফিস করছেন। সারাদিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেই আছেন এবং একের পর এক কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। আমার বিশ্বাস সুদিন আসবে ডেসটিনির। দীর্ঘ ১২ বছর কোনো আশার আলো ছাড়াই অপেক্ষা করেছি। আর এখন আলোর পাশেই দাঁড়িয়ে আছি…দুই…চার..ছয় বা বারো মাস ধৈর্য ধরতে পারব না…১২ বছর যেখানে ধরেছি…।

কোনো ধরনের গুজব বা অপপ্রচারে কান না দিয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলে দীর্ঘ দিনের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস ডেসটিনির ঘনিষ্ঠ এ বিনিয়োগকারীর।

জনপ্রিয় সংবাদ

ডেসটিনির অর্থ ফেরত প্রক্রিয়া শুরুতে চার বাধা

আপডেট সময় ০২:৩৮:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

দীর্ঘ এক যুগ পর কারামুক্ত হয়েছেন ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। তাদের মুক্তিতে নতুন করে আশায় আলো খুঁজে পেয়েছেন ডেসটিনির লাখো ক্রেতা পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীরা।

বিগত সরকারের সময়ে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মাধ্যমে ডেসটিনির কার্যত্রম সর্ম্পূণ বন্ধ কয়ে দেয়া হয়। এতে বিনিয়োগের অর্থ আটকে যায় লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বছরের পর বছর মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় অনেককে।

তবে ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিদের মুক্তিতে খুলেছে সম্ভাবনার দুয়ার। এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরতের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি। দিনের অধিকাংশ সময় ক্রেতা-পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেই কাটাচ্ছেন তারা।

অনেকেই ধারণা করছেন, দ্রুতই অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে ডেসটিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কেউ কেউ। একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের মনে সেটা হলো, কবে থেকে কীভাবে শুরু হচ্ছে অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া?

এ বিষয়ে দৈনিক ডেসটিনির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি দিক। প্রথমত, ট্রি প্লান্টেশন মামলায় রায় অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা ভোগ করে কারামুক্ত হলেও ডেসটিনি গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যাংক হিসাব চালু হয়নি। ১২ বছর ধরে প্রায় সাড়ে ৬০০ ব্যাংক হিসাব জব্দ করে রেখেছে দুদক। ফলে কার্যত কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেনই করা সম্ভব নয় ডেসটিনির পক্ষে। দ্বিতীয়ত, মামলার রায়ে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে এ অর্থ রাষ্ট্রের অনুকৃলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রায় অনুযায়ী, ডেসটিনিতে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো অর্থ ফেরত দিতে পারবে না ডেসটিনি। তৃতীয়ত, এ অর্থ সংগ্রহের উৎস কী হবে-তা নিয়ে। গ্রুপের কর্তাব্যক্তিদের ভাষ্য মতে, বিপুল পরিমাণে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ডেসটিনির। তবে ২০১২ সালে সব সম্পদে রিসিভার নিয়োগ করা হয়। এসব সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়-ব্যবহার বা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই ডেসটিনির। ফলে বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহে সবার আগে এ তিনটি বিষয়ে সুরাহা প্রয়োজন। এ তিন বিষয়ে সুরাহা হলেই প্রয়োজন পড়বে আদালতের নির্দেশ। কেননা ইতিমধ্যেই শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের কাছে অর্থ ফেরত বা প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়ার অধিকারও ডেসটিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন আদালত।

ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সংগত উপায়ে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের অর্থ বিতরণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটিকে গঠন করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

বিচারিক আদালতের রায়ে দেওয়া ওই নির্দেশনার বিরুদ্ধে করা আপিল করেছিল ডেসটিনি। তবে গত বছরের জুলাইয়ে তা খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে বিচারিক আদালতের রায়ে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা বহাল রয়েছে। সেই অরুযায়ী কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা। ডিএমসিএসএলের ৮ লাখ ৫০ হাজার ভুক্তভোগী গ্রাহককে দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে ওই কমিটি।

রায়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড অবসায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অবসায়ন ও ছয় সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশনাসংক্রান্ত রায়ের অংশবিশেষের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ২০২২ সালের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল করে। হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে অবসায়ন ও কমিটি গঠনসংক্রান্ত নির্দেশনার কার্যক্রম স্থগিত করেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করে দুদকের আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠান। চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ চলমান রেখে গত মে মাসে আপিল বিভাগ ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের করা আপিলটি হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের জুলাইয়ে আপিলের ওপর শুনানি হয়।

ডিএমসিএসএল এর মতো একইভাবে ডেসটিনির ট্রি-প্লান্টেশনসহ অন্যান্য সব কোম্পানিতে ডেসটিনির বিনিয়োগকারীদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে আদালতের সুম্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল আমীন দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, ‘আমি প্রথম দিনেই বলেছি, যারা দীর্ঘদিন ডেসটিনির সঙ্গে আছেন তাদের জন্যই আমি লড়ছি…তাদের স্বার্থের প্রশ্নে কোনো আপস করিনি বলেই এক যুগ বিনা অপরাধে জেল খেটেছি। বিনিয়োগকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়াই এখন আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু আদালতের রায়ে আমাদের হাত-পা বাঁধা। কিছুই করার সাধ্য নেই…দ্রুত এ রায়ের আপিল করব। যাতে ব্যাংক হিসাবগুলো সচল করে ডেসটিনির সম্পদ অবমুক্ত হয়। তারপরে অর্থ ফেরতে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন হবে। আমি এখনো আশাবাদী, ন্যায়বিচার পাব। কিছুটা সময় প্রয়োজন। পাশাপাশি দীর্ঘ এক যুগ ডেসটিনিকে পরিকল্পিতভাবে যেভাবে অচল করে রাখা হয়েছে…বহু সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। এসব বিষয়ের আইনি দিক বিবেচনা করে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি। সবকিছু যতটুকু সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যেই হচ্ছে। আমাদের এখন প্রয়োজন শুধুমাত্র ন্যায়বিচার। আমি এখনো আশাবাদী যে, ডেসটিনির সঙ্গে সুবিচার করা হবে।’

অর্থ ফেরত শুরুর প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা কোনো কোনো বিনিয়োগকারীদের জন্য দুরূহ হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল আমীন বলেন, ‘অবশ্যই তাদের কষ্ট আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। সারাদিন তাদের সঙ্গেই সময় পার করছি। সুখ ও দুঃখের কথা শুনছি। আমার ওপর তাদের আস্থা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি এবং আল্লাহ পাকের কাছে শোকর আদায় করছি। কারণ তারা আমাকে ভুল বুঝেননি। এটা বিশাল ব্যাপার। আমিও তাদের হতাশ করব না। ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। ধরুন, ব্যাংক হিসাবগুলো চালু হয়ে গেলেই স্বল্প পরিসরে আমরা সক্ষমতা ফিরে পাব…যাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়,যারা দুর্দিনেও শত কষ্টের মধ্যে ডেসটিনিকে মামলা পরিচালনা থেকে শুরু করে যাবতীয় উপায়ে সহায়তা করেছে এবং আর্থিকভাবে আজ যারা প্রায় নিঃস্ব ও পরিশ্রান্ত, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ ফেরত দেয়া শুরু করব। আর কোনো কিছুর অপেক্ষা করব না। এরপর সম্পদ অবমুক্ত ও আদালতের নির্দেশনা সাপেক্ষে বাকি কাজও ধাপে ধাপে সহজ হবে বলে আশা করি। প্রয়োজন শুধু সুবিচার আর বিনিয়োগকারীদের কিছুটা ধৈর্য।

এদিকে দীর্ঘ ১২ বছর রফিকুল আমীনের পাশে থেকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করছেন মো. আবুল হাছান। তিনি দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, স্যার মুক্ত রয়েই সবার আগের চলে গেলেন ক্রেতা-পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীদের কাছে। এক যুগ জেল খেটে এসেও অক্লান্তভাবে দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা অফিস করছেন। সারাদিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেই আছেন এবং একের পর এক কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। আমার বিশ্বাস সুদিন আসবে ডেসটিনির। দীর্ঘ ১২ বছর কোনো আশার আলো ছাড়াই অপেক্ষা করেছি। আর এখন আলোর পাশেই দাঁড়িয়ে আছি…দুই…চার..ছয় বা বারো মাস ধৈর্য ধরতে পারব না…১২ বছর যেখানে ধরেছি…।

কোনো ধরনের গুজব বা অপপ্রচারে কান না দিয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলে দীর্ঘ দিনের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস ডেসটিনির ঘনিষ্ঠ এ বিনিয়োগকারীর।