ভারতের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অধিকাংশ প্রতিবেশী দেশের জন্য বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ বাড়লেও বিপরীত চিত্র দেখা গেছে আফগানিস্তানের জন্য। এদিকে, নয়াদিল্লি-ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রতি তলানিতে গিয়ে ঠেকলেও বাংলাদেশের জন্যে দেশটির সহায়তার পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে। নেপালের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের নীতি প্রয়োগ করেছে মোদি সরকার।
নতুন বাজেটে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে বিদেশে সহায়তার জন্য ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। যা আগের বছরের ৪ হাজার ৮৮৩ কোটি রুপির তুলনায় সামান্য বেশি। এই তহবিল থেকে বাংলাদেশে সহায়তা দেয়ার জন্য ভারত বরাদ্দ রেখেছে আগের বছরের মতোই ১২০ কোটি রুপি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। খবর এনডিটিভির।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ভারত সরকার দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০ হাজার ৫১৬ কোটি রুপি বরাদ্দ রেখেছে। এবারের বাজেটে ভারতের ‘প্রতিবেশীই সবার আগে’ নীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। বৈদেশিক সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা মোট তহবিলের ৬৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ হাজার ৩২০ কোটি রুপি প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এর আওতায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, আবাসন, সড়ক, সেতু এবং সমন্বিত চেকপোস্টের মতো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
ভারতের আগামী অর্থবছরে ভুটান নয়াদিল্লির সর্বোচ্চ বিদেশি সহায়তা পাওয়া দেশের অবস্থান ধরে রেখেছে। এই বছর ভুটানকে ২ হাজার ১৫০ কোটি রুপির সহায়তা দেবে বলে নির্ধারণ করেছে ভারত। গত বছর নয়াদিল্লি ভুটানের জন্য বরাদ্দ করেছিল ২ হাজার ৬৮ কোটি রুপি।
ভারতের আরেক প্রতিবেশী মালদ্বীপের জন্য আগের বছর বরাদ্দ ছিল ৪০০ কোটি রুপি যা এবছর ২০০ কোটি বেড়ে করা হয়েছে ৬০০ কোটি রুপি। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুইজ্জুর চীনপন্থী অবস্থানের কারণে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হলেও বর্তমানে মালদ্বীপ- ভারত সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছে।
মিয়ানমারে গত অর্থবছরের ২৫০ কোটি রুপির সহায়তা বরাদ্দ করেছিল ভারত। এবার দেশটির জন্য ৩৫০ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রেক্ষাপটে এই সহায়তা বাড়ানো হয়েছে।
মালদ্বীপ,ভুটান মিয়ানমারে বাড়লেও আরেক প্রতিবেশী আফগানিস্তানের জন্য সহায়তা অর্ধেকে নেমেছে। গত বছরের ২০০ কোটি রুপি থেকে কমিয়ে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে। টানা দুই বছর আফগানিস্তানে সহায়তার জন্য বরাদ্দ কমাচ্ছে মোদি সরকার। তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও ভারত দেশটিতে মানবিক সহায়তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার আওতায় সীমিত সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি দুবাইয়ে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর এটি ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ। আলোচনায় বাণিজ্য ও ইরানের চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে পাকিস্তান এড়িয়ে বিকল্প বাণিজ্য পথ গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা হয়।
শ্রীলঙ্কার জন্য সহায়তা ২৪৫ কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য সহায়তা ১২০ কোটি রুপিতে অপরিবর্তিত রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের উচ্ছেদের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে অন্যদিকে ঢাকার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তার প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, নেপালের জন্য বরাদ্দ অপরিবর্তিত রেখে ৭০০ কোটি রুপিই নির্ধারণ করা হয়েছে।