গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী আবু রায়হান ও সাকিব আনজুম নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে গত ৪ অক্টোবর ২০২৪ইং তারিখে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৫। ওইদিন রাতেই তাকে নওগাঁ থেকে রাজশাহীতে নিয়ে এসে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এরই মধ্যে কয়েকবার রিমান্ড হয় এই প্রভাবশালী নেতা ডাবলু সরকারের। রিমান্ড শুনানির জন্য ডাবলু সরকারকে আদালতে নেয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে লক্ষ্য করে ডিম, ইটের টুকরা ও কাঁদা নিক্ষেপ করেন।
সর্বশেষ গত সোমবার একটি বিস্ফোরক মামলায় তাকে একদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
এ দিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার কারাগারের কারা হাসপাতালে থেকে কারা হাসপাতালে কর্মরত কারারক্ষী জিহাদ ও মোহরের সহযোগিতায় দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে কথা বলছেন রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায়।
এমনকি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার তথ্য মিলেছে। এ ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাজাপ্রাপ্ত একাধিক কয়েদি ও কারাগারে কর্মরত কারারক্ষীরা নিশ্চিত করেছেন, কারারক্ষী জিহাদ ও মোহর প্রতিনিয়ত ডাবলু সরকারকে তার বাসার খাবার সরবরাহ করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে গত সপ্তাহে কারারক্ষী জিহানকে সিরাজগঞ্জ কারাগারে বদলি করলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন কারারক্ষী মোহর।
অন্যদিকে বিভিন্ন সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে থাকাকালেও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে গোপন আলাপও করেছেন। তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত সপ্তাহেও কারাগারে থেকে রাজশাহী মাহানগর বিএনপির দুই নেতার সাথে যোগাযোগ করেন ডাবলু। এদের মধ্যে ছিলেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মো. মামুন অর রশিদ মামুন , যা নিয়ে রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে না না কানা ঘুষা। কারাগারে থেকে এমন একজন কুখ্যাত আসামি কী করে মোবাইলে প্রতিনিয়ত কথা বলে? তাও আবার বিএনপির রাজশাহী মহানগরীর একজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে? এমন প্রশ্ন এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের মুখে।
জানা যায়, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মো. মামুন অর রশিদ পতিত হাসিনা সরকারের আমলে মামলা থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগের রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের সঙ্গে সখ্যতা রেখে রাজনীতি করেছেন। এমনকি হাসিনা সরকারের নির্বাচনের নিজ এলাকায় নির্বাচনি ক্যাম্পে সেচ্ছাসেবক লীগ রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি মো. আবদুল মমিনসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও নানা সময় দেখা গেছে তাকে।
এছাড়াও বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখতেন তিনি। এ কারনেই বিগত সময়ে রাজশাহীতে বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলার আসামি হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো মামলার আসামি হননি মামুন অর রশিদ।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ পালিয়ে গেলেও রাজশাহীতে ৫ আগষ্ট থেকে ৮ আগষ্ট পর্যন্ত ডাবলু সরকারকে নিরাপত্তা দিয়ে কৌশলে রাজশাহীর বাইরে পাঠিয়ে দেন মো. মামুন অর রশিদ। এছাড়াও মো. মামুন অর রশিদের আস্থাভাজন হওয়াতে রাজশাহী কারাগার থেকে মোবাইলের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার তার সঙ্গে কথা বলেছেন ডাবলু সরকার।
সর্বশেষ গত সপ্তাহেও বিএনপি নেতা মামুনের সঙ্গে ডাবলুর কথা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কারাগারে দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীরা। তবে তার পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
অন্যদিকে তার নিজ ১৩নং ওয়ার্ড অলোকার মোড়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্মিত ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি বর্তমানে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মো. মামুন অর রশিদ নিয়ন্ত্রণে নিলেও সে অফিসের কতৃত্বে কোনো পরিবর্তন আসেনি । এখনো সেই অফিস ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মো. খালিদ শাহরিয়ার কাফির নিয়ন্ত্রনেই আছে। সেখানেই মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মো. মামুন অর রশিদসহ উঠবস করেন রাসিক এর ১০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মিঠু, মহানগর যুবলীগ নেতা আশরাফ বাবু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের অস্ত্রধারী ক্যাডার আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিশসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী নেতৃবৃন্দ। ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মো. খালিদ শাহরিয়ার কাফিসহ এরা সকলেই গত ৫আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী নিহত/আহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হলেও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মো: মামুন অর রশিদের ছায়াতলে থাকায় তাদের পুলিশ গ্রেফতার করছে না।
এ বিষয়ে সাবেক বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম মিলু বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে বর্তমান মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের সাথে লিয়াঁজো রেখে চলেছেন এ বিষয়গুলো শুধু আমরা নয় পুরো রাজশাহীবাসী জানেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরে ৫আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী নিহত-আহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামিদের প্রকাশ্যে আশ্রয় দিচ্ছেন তিনি। আর গত কয়েকদিন থেকে আমরাও শুনছি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারাঅভ্যন্তরে থেকে বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশিদের সাথে মোবাইলে কথা বলছেন। এ ধরনের নেতার কারণে দলের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমন কর্মকাণ্ডের সঠিক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার কারা হাসপাতালে বন্দি থেকে প্রতিনিয়ত মোবাইলে কথা বলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কারাগারের জেল সুপার বলেন, কারাগারে সকল বন্দিরা সপ্তাহে একবার মোবাইলে কথা বলার সুযোগ থাকে। একই ভাবে অন্য বন্দিদের জন্যও সপ্তাহে একদিন মোবাইলে কথা বলতে দেয়া হয়। তবে চাঁদাবাজি মামলার আসামী, জঙ্গী, চরমপন্থী ও কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে কিছু বাধা নিষেধ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতা কিভাবে প্রতিনিয়ত মোবাইলে কথা বলে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।
এদিকে এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।