চাঁদপুরের আওয়ামী সুবিধাভোগী গিয়াস উদ্দিন মিলনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বিগত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপুর কাছের লোক হিসেবে চিহ্নিত মিলনের বিরুদ্ধে রয়েছে অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আলাদীনের চেরাগ পেয়ে জায়গা-জমি, দোকানসহ, পত্রিকারও মালিক বনে যান মিলন।
স্থানীয়রা জানান, নিজ গ্রামে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইভটিজিংসহ নানান অপকর্মে জড়িয়ে পারিবারিকভাবে মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়া হন মিলন। অবৈধ উপায়ে অর্থ উপাজর্নের পথ হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতা পেশাকে। তথাকথিত সাংবাদিক হয়ে শুরু করেন জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধ ঘরানার রাজনীতিকদের চরিত্র হনন করা। ভুয়া সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিও শুরু করেন সমান তালে। দীপু মনির ছায়াতলে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি পত্রিকার সংশ্লিষ্টতায় এসব অপর্কম চালিয়ে যান মিলন।
ব্যবহার করে একের পর এক চরিত্র হনন করেন জাতীয়তাবদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের।
এক পর্যায়ে দীপু মনি সন্তুষ্ট হয়ে মিলনকে তার ব্যক্তিগত মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব দেন। একটি পত্রিকার মালিকও বরে যান মিলন।
দীপু মনি ও তার ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপুর আস্থা অর্জন করে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন মিলন । এই কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিনিধি হিসেবেও জায়গা করে নিয়ে জোরপূর্বক আদায় করতে থাকেন সরকারি বেসরকারি বিজ্ঞাপন। কেউ বিজ্ঞাপন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।
দীপু মনি ও তার ভাইয়ের সুত্র ধরে সাথে পরিচয় হয় দীপু মনির টাকার মেশিনখ্যাত দেশব্যাপি আলোচিত ও চাঁদপুরের বালু খেকো নামে পরিচিত সেলিম খানের সাথে। তারপর আর গিয়াস উদ্দিন মিলনকে পেছনে তাকাতে হয়নি। ২০২১ সালে তৎকালীন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ভারপাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্বোধন করা প্রেসক্লাবের ভিত্তি ফলক ভেঙে ফেলেন তিনি। পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়ে আবার তা পুন:স্থাপন করা হয়।
খালেদা জিয়ার ভিত্তিফলক ভাঙ্গার পুরস্কার হিসেবে বালু খেকো সেলিম খানের অর্থায়নে পর পর দু’বার ভারত সফরের সুযোগও পান তিনি। তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে চাঁদপুরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার থাকাকালে মিলনের বিরুদ্ধে মতলব মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার সাথে অনৈতিক সম্পর্কসহ একাধিক অভিযোগ এনে তার সম্পাদিত দৈনিক মেঘনাবার্তা পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল চেয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদন করেন। দীপু মনির আশীর্বাদে সে যাত্রায় বেচি যান মিলন।
দীপু মনি ও তার ভাইয়ের আশীর্বাদপুষ্ট মিলন ইতোমধ্যে চাঁদপুর শহরের মাদরাসা রোডে গড়ে তুলেছেন ব্যাক্তিগতভাবে কয়েক কোটি টাকা ব্যায়ে বিলাসবহুল পাঁচ তলা বাড়ি। এছাড়াও শহরের চৌধুরী ঘাট ডিসি মার্কেট (ফল মার্কেট), ইচলি রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে একাধিক দোকানসহ বিপুল পরিমান সম্পত্তির মালিক বনে যান এই গিয়াস উদ্দিন মিলন।
জুলাই বিপ্লবে ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ভোল পাল্টিয়ে পরেছেন জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী আদর্শের মুখোশ। যার আড়ালে নতুনভাবে নিজ সাম্রাজ্য বিস্তারে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দালালদের সঙ্গী করে গড়ে তুলেছেন নতুন এক সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেট ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকাকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বিজ্ঞাপনের নামে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। এছাড়াও জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী আওয়ামী লীগের চিহ্নিত ও শীর্ষ নেতাকর্মীদের সেইভ করার নামে তদবির বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই সিন্ডিকেট বর্তমানে এতটাই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে যে, প্রেসক্লাবের অভিষেক অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাব ও ডিইউজে’র প্রতিনিধিসহ ঢাকার কোন অতিথি যোগদান করেননি।
এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবে যেমনিভাবে শুদ্ধি অভিযান হয়েছে, ঠিক তেমনি চাঁদপুর প্রেসক্লাবেও শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে বিতাড়িত করে প্রেসক্লাবকে কলঙ্ক মুক্ত করা হোক।
এছাড়া মিলনের মত এমন একজন বিতর্কিত সাংবাদিক কিভাবে ‘দৈনিক আমার দেশ’ এর মতো পত্রিকায় প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।