ঢাকা , বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৪শত বছরের পুরোনো ‘আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ’

মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ। প্রায় চারশত বছরের আগে নির্মিত মসজিদটি বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে স্বীকৃত। এর নান্দনিক গঠন শৈলীর কারণে পর্যটক আকর্ষণের বিশেষ স্থান হয়ে উঠেছে।

জেলার সরাইল উপজেলা চত্বর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। এর সুদৃশ্য গম্বুজ, সুসজ্জিত মিহরাব, সুশোভিত মিনার ও দেয়ালের খোদাইকৃত কারুকাজ মুগ্ধ করার মতো। মসজিদের ভেতরের অংশে রয়েছে সুন্দর ক্যালিগ্রাফি, যাতে পবিত্র কুরআনের আয়াত অঙ্কিত রয়েছে। প্রাচীন বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া স্পষ্টভাবে মসজিদটির গঠন শৈলীতে প্রতিফলিত হয়েছে।

মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে এক বিশাল দিঘি, যা স্থানীয়দের কাছে ‘সাগরদিঘি’ নামে পরিচিত। যা মসজিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি ঐতিহাসিক কবর, যা ‘জোড়াকবর’ বা ‘রহস্যময়কবর’ নামে পরিচিত। কবর দু’টিতে ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর ছাপ স্পষ্ট। এগুলো ঘিরে নানা কল্প কথা প্রচলিত রয়েছে।

৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের এই মসজিদের চার কোণে চারটি বুরুজ এবং তিনটি গম্বুজ রয়েছে। ভেতরে প্রতিটি গম্বুজের নিচের অংশ মসজিদটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছে। গম্বুজগুলোর গায়ে খোদাই করা পদ্মফুলের নকশা মুঘল স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে।

ঐতিহাসিক সূত্রমতে, এক সময় সরাইল ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী এবং এটি বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর শাসনাধীন ছিল। ধারণা করা হয়, ঈশা খাঁ এই মসজিদ ও এর পার্শ্ববর্তী ‘জোড়াকবর’ নির্মাণ করেন। অনেকে মনে করেন, ঈশা খাঁর দুই স্ত্রীর কবর এখানে স্থাপন করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তাদের স্মরণে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়। কবর দুটি পাশাপাশি থাকার কারণে এটি ‘জোড়াকবর’ নামে পরিচিতি পায়। একটি রহস্যজনক তথ্য হলো, কবর দুটির নিচে একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে, যার শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। জনশ্রুতি অনুসারে, ভীতি ও কুসংস্কারের কারণে কেউই এই সুড়ঙ্গের শেষ পর্যন্ত অনুসন্ধান করতে সাহস করেনি, ফলে এটি আজও রহস্যাবৃত।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব, স্থাপত্যশৈলী এবং রহস্যময় তা মিলিয়ে ‘আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ’ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও পর্যটকদের জন্য এক দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে মসজিদটি সংরক্ষণ করা হলে, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

৪শত বছরের পুরোনো ‘আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ’

আপডেট সময় ১২:০২:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ। প্রায় চারশত বছরের আগে নির্মিত মসজিদটি বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে স্বীকৃত। এর নান্দনিক গঠন শৈলীর কারণে পর্যটক আকর্ষণের বিশেষ স্থান হয়ে উঠেছে।

জেলার সরাইল উপজেলা চত্বর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। এর সুদৃশ্য গম্বুজ, সুসজ্জিত মিহরাব, সুশোভিত মিনার ও দেয়ালের খোদাইকৃত কারুকাজ মুগ্ধ করার মতো। মসজিদের ভেতরের অংশে রয়েছে সুন্দর ক্যালিগ্রাফি, যাতে পবিত্র কুরআনের আয়াত অঙ্কিত রয়েছে। প্রাচীন বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া স্পষ্টভাবে মসজিদটির গঠন শৈলীতে প্রতিফলিত হয়েছে।

মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে এক বিশাল দিঘি, যা স্থানীয়দের কাছে ‘সাগরদিঘি’ নামে পরিচিত। যা মসজিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি ঐতিহাসিক কবর, যা ‘জোড়াকবর’ বা ‘রহস্যময়কবর’ নামে পরিচিত। কবর দু’টিতে ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর ছাপ স্পষ্ট। এগুলো ঘিরে নানা কল্প কথা প্রচলিত রয়েছে।

৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের এই মসজিদের চার কোণে চারটি বুরুজ এবং তিনটি গম্বুজ রয়েছে। ভেতরে প্রতিটি গম্বুজের নিচের অংশ মসজিদটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছে। গম্বুজগুলোর গায়ে খোদাই করা পদ্মফুলের নকশা মুঘল স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে।

ঐতিহাসিক সূত্রমতে, এক সময় সরাইল ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী এবং এটি বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর শাসনাধীন ছিল। ধারণা করা হয়, ঈশা খাঁ এই মসজিদ ও এর পার্শ্ববর্তী ‘জোড়াকবর’ নির্মাণ করেন। অনেকে মনে করেন, ঈশা খাঁর দুই স্ত্রীর কবর এখানে স্থাপন করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তাদের স্মরণে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়। কবর দুটি পাশাপাশি থাকার কারণে এটি ‘জোড়াকবর’ নামে পরিচিতি পায়। একটি রহস্যজনক তথ্য হলো, কবর দুটির নিচে একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে, যার শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। জনশ্রুতি অনুসারে, ভীতি ও কুসংস্কারের কারণে কেউই এই সুড়ঙ্গের শেষ পর্যন্ত অনুসন্ধান করতে সাহস করেনি, ফলে এটি আজও রহস্যাবৃত।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব, স্থাপত্যশৈলী এবং রহস্যময় তা মিলিয়ে ‘আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ’ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও পর্যটকদের জন্য এক দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে মসজিদটি সংরক্ষণ করা হলে, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে।