দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজারের পরেই বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতকেই বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে ভ্রমণপিপাসুরা। এখানে শুক্র ও শনিবার সরকারী ছুটির দিনে চোখে পড়ার মতো পর্যটকের আনাগোনা দেখা যায়।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মতো দুই ঈদে পর্যটকরা এখানে ভিড় জমায়। বৃহস্পতিবার ঈদের ৪র্থ দিনেও এ সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। কেউ কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে আবার কেউ প্রিয়জনকে নিয়ে দিব্যি আনন্দ উপভোগ করছে সমুদ্র সৈকতে। কক্সবাজারের মতো বিশাল ও তীব্রগতির ঢেউ না থাকলেও বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি, ঢেউয়ের নিত্য আর ঝাউ বাগানের দৃশ্য মন কাড়ে সবার। রয়েছে সুবিশাল বালুর চর। প্রিয়জনের হাতটি ধরে ঘুরে বেড়ানোর মতো একটি স্পট বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত।
প্রায় ৩২ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতের দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি স্পট। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য; কাথরিয়া, বাহারছড়া ও খানখানাবাদ পয়েন্ট। কাথরিয়া পয়েন্টে ঝাউ বাগানের বিশাল বিস্তৃতি যে কাওকে বিমোহিত করবেই। প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য্য এখানে উপভোগ করা যায়।
বাহারছড়া পয়েন্টে বিশাল বালুচর ও বিস্তৃত জলরাশি। এখানেই সকাল-সন্ধ্যায় পর্যটকের আনাগোনা থাকে দেখার মত।
খানখানাবাদ পয়েন্টে বেড়িবাঁধ থেকে দাঁড়িয়ে পুরো সৈকতের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এখানে বেড়িবাঁধে বসানো ব্লকে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে সমুদ্রবিলাস করা যায়। শুনা যায় সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ। বিকেলেই এখানে জমে উঠে ভ্রমণ আনন্দ। সবমিলিয়ে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য পছন্দের জায়গা।
একটানা সরকারী ছুটিতে পর্যটকরা ছুটে আসেন সমুদ্রের লোনা পানিতে সাঁতার কাটতে। নজরকাড়া সমুদ্রের কূল থেকে সূর্য অস্তের দৃশ্য দেখতে মৌসুমের ঈদ ও ছুটির দিনে হাজারও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, এমনকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন আসেন।
বাঁশখালীর প্রায় ৩২ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত প্রিয়জনদের নিয়ে প্রিয় মুহূর্তগুলো অতিবাহীত করার মতো একটি অন্যতম পর্যটনস্পটে রুপ নিয়েছে। এবারে ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটিতে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হয়েছে বাহারছড়া, খানখানাবাদ ও কাথরিয়া সৈকত পয়েন্টে।
সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সাথে কথা বললে তারা জানান,’বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত এখন পর্যটকদের প্রথম পছন্দের বিনোদন স্পটে রুপ নিয়েছে। তবে, এখানে কক্সবাজারের মত হোটেল-মোটেল নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সমন্বয় থাকলেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মত এখানে গড়ে ওঠেনি বিনোদন স্থাপনা। এখানে ঢেলে সাজানোর মত বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলেই বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট।’
বিশিষ্টজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘বাঁশখালী উপজেলা কক্সবাজার জেলার সঙ্গে সংযুক্ত চট্টগ্রামের একটি উপজেলা। বর্তমানে বাঁশখালী আঞ্চলিক সড়ক হয়ে কক্সবাজারের পথে যানবাহন অস্থায়ীভাবে চলছে। কর্ণফুলি (বঙ্গবন্ধু) টানেল নির্মাণ হলেও চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজারের যোগাযোগের সেতুবন্ধনের সুযোগ তৈরি হয়নি। টানেল হয়ে আনোয়ারা, বাঁশখালী, চকরিয়া, কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত নতুন মাত্রা পাবে।’
তারা আরও বলেন, ‘প্রধান সড়ক থেকে সৈকতে যাওয়ার অভ্যন্তরিণ সড়ক সম্প্রসারণ ও সংস্কার করলে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিৎ হবে। বাড়বে পর্যটকের আনাগোনা।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন নজর দিলে বাঁশখালীকে পর্যটন সিটি হিসেবে রূপান্তর করা মোটেও অসম্ভব নয়। উপজলার এ পর্যটন শিল্পকে পরিচিত ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয়ের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন বলে জানান তারা। বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে সরকার এখান থেকে কাঙ্খিত রাজস্ব পাবে।’
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের সময় ঈদ যাত্রা সুগম ও নির্ভীঘ্ন করতে পুলিশ সরব ছিল। সৈকতে ভ্রমণে যাওয়া-আসা শিশু, নারী-পুরুষদের যাতায়তে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছেন পুলিশ। বাহারছড়া সৈকতে পুলিশের পাশাপাশি গ্রাম পুলিশও নিয়মিত টহলে আছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাঁশখালী ইকোপার্ক, বৈলগাঁও চা বাগান, সমুদ্র সৈকতসহ উপজেলার পর্যটন এলাকাগুলোকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যাতে পর্যটকদের কোন অসুবিধা না হয়।’