দেশের সর্বদক্ষিণের সাগরপাড়ের জেলা কক্সবাজার, যার নামাকরণ হয় বৃটিশ অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামে। ইতিহাস বলছে, আরাকান থেকে নিপীড়নের মুখে মুসলিম শরণার্থীরা এই অঞ্চলে চলে আসলে রাখাইন জনগোষ্ঠির সাথে একের পর এক সংঘাত দেখা দেয়, যা নিয়ন্ত্রণ এবং শরণার্থী ব্যবস্থাপনার জন্য তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে মহাপরিচালক নিযুক্ত করেছিলেন এই অঞ্চলে।
ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুসারেই প্রথমে এখানে গড়ে উঠে কক্স সাহেবের বাজার। যেখান থেকে পরবর্তীতে এই জেলার নামাকরণ করা হয় কক্সবাজার।
যে মানুষটি এই অঞ্চলের নামকরণের ইতিহাসের সাথে জড়িত তাকে ঘিরে কৌতুহলেরও শেষ নেই। তাই সরকারি দপ্তরে সংরক্ষিত এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গায় থাকা ক্যাপ্টেন কক্সের ছবি দেখতে চায়না এমন মানুষ খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু তা যদি হয় বছরের পর বছর ধরে ভুল ছবির সাথে পরিচয় তাহলে বিষয়টি অবাক করার মতো।
ইতিহাসের বিভিন্ন দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রামুর চৌমুহনী থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে একটি বাংলা তৈরী করেছিলেন ক্যাপ্টেন কক্স। সেই বাংলো কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রামুতে। এই ইতিহাসের সংস্পর্শ পেতে শুধু কক্সবাজার নয়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসে ভ্রমণপিপাসু এবং ইতিহাস সন্ধানীরা।
ক্যাপ্টেন কক্সের বাংলোতে যারা আসেন তাদের স্বাগত জানাতে বাংলোর সামনের গেইটে স্থাপন করা হয়েছে ক্যাপ্টেন কক্সের একটি ছবি। এছাড়াও ছবি সম্বলিত ক্যাপ্টেন কক্সের ইতিহাস লিখে রাখা হয়েছে বাংলোর ভেতরেও।
কিন্তু দীর্ঘ সময় পর এসে হঠাৎ দাবী করা হচ্ছে বাংলোর গেইট, সরকারের দপ্তর এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গায় যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি কক্সবাজারের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকা ক্যাপ্টেন কক্সের ছবি নয়। এটি মার্কিন একজন ব্যবসায়ীর ছবি, যার সাথে ক্যাপ্টেন কক্সের দূরতম সম্পর্কও নেই।
সম্প্রতি রামুর ইতিহাস নামে একটি বইয়ে লেখক অ্যাডভোকেট শিরুপন বড়ুয়া দাবী করেছেন, একটি ভুল ছবির সাথে ক্যাপ্টেন কক্সের পরিচয় করানো হয়েছে বছরের পর বছর। যার ফলে ইতিহাসও এগিয়েছে বিকৃত হয়ে। ছবিটি যে ক্যাপ্টেন কক্সের নয়, তারপক্ষে লেখক বেশ তথ্য প্রমাণও তুলে ধরেছেন বইটিতে।
লেখকের সূত্র ধরে আমরাও আন্তর্জাতিক বেশকিছু ওয়েবসাইটে ঘুরাঘুরি করি। সর্বশেষ পিপলস সার্চ ওয়েব সাইটে অনুসন্ধান করেও ক্যাপ্টেন কক্সের কোন ছবি পাওয়া যায়নি।
তবে যে ছবিটি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের ছবি হিসেবে সামনে এসেছে এবং ইতিহাসে রক্ষিত হয়েছে সেই ছবির সাথে আমেরিকান নাগরিক বেঞ্জামিন হিরাম কক্সের ছবির সাথে প্রায় মিল রয়েছে।
শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহল বলছে, লেখক শিরুপন বড়ুয়ার দাবীতে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত রয়েছে। তাই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের উচিত যথাযথ তথ্যানুসন্ধান করে ক্যাপ্টেন কক্সের প্রকৃত ছবি সামনে নিয়ে আসা, যাতে করে নতুন প্রজন্ম অন্তত ইতিহাসের ভুল ছবির সাথে পরিচয় হয়ে বেড়ে না উঠে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন তারা যাতে করে প্রকৃত ইতিহাস বের হয়ে আসে।
ইতিহাসের তথ্যমতে, এই অঞ্চলে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের লন্ডনে জন্ম হয়েছিলো ১৭৬০ সালে আর দায়িত্বপালন কালে অসুস্থ হয়ে রামুতেই তার মৃত্যৃ হয়েছিল ১৭৯৯ সালে।
অন্যদিকে যে ছবিটি ক্যাপ্টেন কক্সের ছবি হিসেবে তকমা পেয়েছে সেই বেঞ্জামিন হিরাম কক্সের আমেরিকায় জন্ম হয়েছিলো ১৮৫১ সালে আর মৃত্যৃ হয়েছিলো ১৯০৯ সালে।
তাহলে প্রশ্ন হলো কক্সবাজার যার নামে গড়ে উঠেছে সেই ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের ছবি কোথায়?