ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে

পাঁচ’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বহু বছরের ঐতিহ্য রক্ষার ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছে পাঁচশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। পহেলা বৈশাখ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও ৩ দিনের এ মেলার দ্বিতীয় দিনই এ মেলার মূল আকর্ষণ। প্রতি বছরই সোনারগাঁ উপজেলা সংলগ্ন ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা শতবছরের বটবৃক্ষতলে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জয়রামপুর এলাকায় ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণ বটতলায় গিয়ে দেখা যায়, আদি বটবৃক্ষের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা-অর্চনা করছেন নববধূ থেকে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। তাদের সাথে টুকটুকে রঙিন ফুলের ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে সনাতনী কুমারী মেয়েরাও। সবার দৃষ্টি বটবৃক্ষের দিকে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হওয়ার আগেই চারদিকে বাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি। এ মেলাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। প্রায় পাঁচশ বছরের পুরোনো একটি বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে যুগযুগ ধরে পালিত হচ্ছে এ বউমেলা।

স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানান, বটবৃক্ষটি পুণ্যের দেবতা। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বটবৃক্ষটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামে সুপরিচিত। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে সিদ্ধেশ্বরী বটতলার এ মেলার জন্য।

পাশাপাশি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর ওড়ানো ও পাঁঠাবলি দেওয়া হয় বৃক্ষ দেবতার পদতলে। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে সারা বছর, যেন সুখ শান্তিতে এ কামনায় পূজার আয়োজন করে হিন্দু নারীরা।

বউমেলায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ নারী হলেও পুরুষরাও এ মেলায় অংশগ্রহণ করে, তবে সংখ্যায় কম। পূজা অর্চনা ছাড়াও বউ মেলায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এ বউমেলায় মৃৎ শিল্পীদের তৈরি নানা রঙের নানা বর্ণের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি পাতিল থেকে শুরু করে মন্ডা-মিঠাইয়ের দোকান বসে।

মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠ ও বাঁশের তৈরি লোক পণ্য ছাড়াও মেলায় পাওয়া যায় বাহারি মিষ্টান্নসামগ্রী। বউমেলায় আগত সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা জানান, বড়দের কাছ থেকে শুনেছি এ মেলায় এসে পূজা আর্চনায় স্বামী-সন্তান ও সংসারের কল্যাণ কামনা সফল হয়। সংসারের সুখ শান্তি ও স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনায় আমরা এ মেলায় পূজা। করতে এসেছি।

পুরোহিত উৎপল ভট্টাচার্য জানান, শত বছর ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা ভিড় করে সিদ্ধেশ্বরী বটতলার বউমেলায়। দুপুরে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পূজা আর্চনার মধ্যদিয়ে মেলা শুরু হয়।

বউমেলা আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা নিলোৎপল রায় জানান, এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সার্বজনীনভাবে এ মেলার আয়োজন করেন। এ পূজায় দেশবাসী ও এলাকার মানুষের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বউ মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে আমরা এ মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। নারীদের কেন্দ্র করে একটি মেলা সত্যিই ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা। মেলা উপভোগ করতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিম ধর্মের লোকজনও আসেন মেলা উপভোগ করতে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে

পাঁচ’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা

আপডেট সময় ০৬:৩৩:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বহু বছরের ঐতিহ্য রক্ষার ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছে পাঁচশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। পহেলা বৈশাখ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও ৩ দিনের এ মেলার দ্বিতীয় দিনই এ মেলার মূল আকর্ষণ। প্রতি বছরই সোনারগাঁ উপজেলা সংলগ্ন ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা শতবছরের বটবৃক্ষতলে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জয়রামপুর এলাকায় ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণ বটতলায় গিয়ে দেখা যায়, আদি বটবৃক্ষের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা-অর্চনা করছেন নববধূ থেকে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা। তাদের সাথে টুকটুকে রঙিন ফুলের ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে সনাতনী কুমারী মেয়েরাও। সবার দৃষ্টি বটবৃক্ষের দিকে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হওয়ার আগেই চারদিকে বাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি। এ মেলাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। প্রায় পাঁচশ বছরের পুরোনো একটি বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে যুগযুগ ধরে পালিত হচ্ছে এ বউমেলা।

স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানান, বটবৃক্ষটি পুণ্যের দেবতা। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বটবৃক্ষটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামে সুপরিচিত। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে সিদ্ধেশ্বরী বটতলার এ মেলার জন্য।

পাশাপাশি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর ওড়ানো ও পাঁঠাবলি দেওয়া হয় বৃক্ষ দেবতার পদতলে। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে সারা বছর, যেন সুখ শান্তিতে এ কামনায় পূজার আয়োজন করে হিন্দু নারীরা।

বউমেলায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ নারী হলেও পুরুষরাও এ মেলায় অংশগ্রহণ করে, তবে সংখ্যায় কম। পূজা অর্চনা ছাড়াও বউ মেলায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এ বউমেলায় মৃৎ শিল্পীদের তৈরি নানা রঙের নানা বর্ণের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি পাতিল থেকে শুরু করে মন্ডা-মিঠাইয়ের দোকান বসে।

মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠ ও বাঁশের তৈরি লোক পণ্য ছাড়াও মেলায় পাওয়া যায় বাহারি মিষ্টান্নসামগ্রী। বউমেলায় আগত সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা জানান, বড়দের কাছ থেকে শুনেছি এ মেলায় এসে পূজা আর্চনায় স্বামী-সন্তান ও সংসারের কল্যাণ কামনা সফল হয়। সংসারের সুখ শান্তি ও স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনায় আমরা এ মেলায় পূজা। করতে এসেছি।

পুরোহিত উৎপল ভট্টাচার্য জানান, শত বছর ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা ভিড় করে সিদ্ধেশ্বরী বটতলার বউমেলায়। দুপুরে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পূজা আর্চনার মধ্যদিয়ে মেলা শুরু হয়।

বউমেলা আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা নিলোৎপল রায় জানান, এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সার্বজনীনভাবে এ মেলার আয়োজন করেন। এ পূজায় দেশবাসী ও এলাকার মানুষের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বউ মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে আমরা এ মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। নারীদের কেন্দ্র করে একটি মেলা সত্যিই ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা। মেলা উপভোগ করতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিম ধর্মের লোকজনও আসেন মেলা উপভোগ করতে।