ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসকদের আবাসন সংকটে চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়| মহাসড়কের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে।

উপজেলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিকের উর্ধ্বে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি গত বছরের আগষ্টের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নষ্ট হয়ে যায় নতুন এক্স-রে মেশিন, ল্যাব ও তথ্যপ্রযুক্তির সব সরঞ্জাম। একই সাথে নষ্ট হয়েছে কয়েক লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সরকারি ওষুধ। আবাসন সঙ্কটের কারণে ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন হাসপাতাল কমপ্লেক্স এলাকায় বসবাস করতে পারছে না। সঙ্কট রয়েছে জনবলেরও। হাসপাতালটির মূল্য বিল্ডিংয়ের ভিম ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ডাক্তারদের দুটি কোয়ার্টারসহ চারটি ভবনই এখন পরিত্যক্ত।

সরেজমিনে ঘুরে ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রথম শ্রেণির দুইটি কোয়ার্টার এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দুইটি কোয়ার্টারসহ চারটি বিল্ডিং পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বন্যার আগে বিল্ডিংগুলো ব্যবহার করতে পারলেও বর্তমানে পারা যাচ্ছে না। যার কারণে বাধ্য হয়ে ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা হাসপাতাল কমপ্লেক্স এলাকার বাইরে বসবাস করছে। এতে করে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে ভুগছেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা।

বর্হিবিভাগে রোগী দেখা শেষে আগে ডাক্তাররা তাদের নিজস্ব কোয়ার্টারে বসবাস করার কারণে ভর্তিকৃত রোগীরা খুব সহজে তাদের নানান সমস্যায় ডাক্তারদেরকে কাছে পেলেও বর্তমানে পাচ্ছে না। বিগত বন্যার পর হাসপাতালটি মূল ভবনের ভিম ও দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে বর্হিবিভাগে রোগী দেখছে ডাক্তাররা। হাসপাতালের মূল ভবনের ফাটলসহ কোয়ার্টারগুলোর দৈন্যদশার কথা অবহিত করে একাধিক চিঠি প্রদান করা হলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার ও নার্স জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করলেও আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

দৈনিক ডেসটিনিকে তারা বলেন, রোগীদের কথা বিবেচনা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝরাজীর্ণ এ পরিত্যক্ত ভবনে আমরা বসবাস করছি। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটতে পারে প্রাণনাশের মতো ঘটনা।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, ২৬ জন চিকিৎসকের জায়গায় রয়েছে ২২ জন। ৩৫ জন নার্সের জায়গায় রয়েছে ২৬ জন। ৫৮ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির থাকার কথা থাকলেও আছে ২৯ জন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিদের সঙ্কটের কারণে হাসপাতাল কমপ্লেক্স এলাকার ভিতরে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। আগাছা জন্মিয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতালের ভর্তি রোগীর স্বজন আয়েশা বেগম বলেন, আজ দুইদিন হলো ছোট বোনকে নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আগে বিকেল হলেও কোয়ার্টারে ডাক্তারের খোঁজ পেতাম। এখন কোয়ার্টারে কোন ডাক্তার থাকে না।

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি আয়া খোরশেদা বেগম বলেন, আমি যে বিল্ডিংয়ে বর্তমানে বসবাস করছি, তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেয়ালের পলেস্তারার ইটগুলো খসে পড়ে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে পরিবারের চার সদস্যকে বাইরের একটি বিল্ডিংয়ে বাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর আমি চাকরির সুবাদে ঝুঁকি নিয়ে এ পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে রাতে ঘুমাতে যাই।

সিনিয়র নার্স হাসিনা বেগম বলেন, বন্যার আগে বিল্ডিংগুলোতে বসবাস করার কিছতা পরিবেশ থাকলেও ভয়াবহ বন্যায় বিল্ডিংগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে আমি এ ঝুঁকিপুর্ণ বিল্ডিংয়ে বসবাস করে আসছি। রাতে ভয়ে থাকি। সামান্য ভুমিকম্প হলে ঘটতে পারে বড় ধরনের ঘটনা।

আবাসিক চিকিৎসক ডা. মেজবাউল আলম বলেন, ডাক্তারদের জন্য দুইটি বিল্ডিং সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকলেও এগুলো এখন বসবাসের অনুপযোগী। বিগত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া ভবনগুলো পরিত্যক্ত দেখিয়ে উর্ধ্বতন মহলে চিঠি প্রদান করেছিলেন। বন্যায় হাসপাতালটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভর্তিকৃত রোগীদের বিবেচনা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কয়েকজন ডাক্তার এ ঝরাজীর্ণ ভবনগুলোতে বসবাস করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিদের বসবাসের জন্য চারটি বিল্ডিং থাকলেও তা এখন বসবাসের অনুপযোগী। পলেস্তরসহ ইট খসে পড়ছে। অনেকে ভর্তিকৃত রোগীদের কথা বিবেচনা করে ঝুঁকি নিয়েও এ পরিত্যক্ত বিল্ডিংগুলোতে রাত্রি যাপন করছে। আবার অধিকাংশ ডাক্তার, নার্স ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিরা অন্যস্থানে বসবাস করছে। বিগত ভয়াবহ বন্যায় হাসপাতালটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, ল্যাব ও তথ্য-প্রযুক্তির সামগ্রী। এছাড়াও কয়েক লক্ষাধিক টাকার ওষুধও নষ্ট হয়েছে। এতে করে আট কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

চিকিৎসকদের আবাসন সংকটে চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

আপডেট সময় ০৫:৫১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়| মহাসড়কের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে।

উপজেলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিকের উর্ধ্বে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি গত বছরের আগষ্টের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নষ্ট হয়ে যায় নতুন এক্স-রে মেশিন, ল্যাব ও তথ্যপ্রযুক্তির সব সরঞ্জাম। একই সাথে নষ্ট হয়েছে কয়েক লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সরকারি ওষুধ। আবাসন সঙ্কটের কারণে ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন হাসপাতাল কমপ্লেক্স এলাকায় বসবাস করতে পারছে না। সঙ্কট রয়েছে জনবলেরও। হাসপাতালটির মূল্য বিল্ডিংয়ের ভিম ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ডাক্তারদের দুটি কোয়ার্টারসহ চারটি ভবনই এখন পরিত্যক্ত।

সরেজমিনে ঘুরে ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রথম শ্রেণির দুইটি কোয়ার্টার এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দুইটি কোয়ার্টারসহ চারটি বিল্ডিং পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বন্যার আগে বিল্ডিংগুলো ব্যবহার করতে পারলেও বর্তমানে পারা যাচ্ছে না। যার কারণে বাধ্য হয়ে ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা হাসপাতাল কমপ্লেক্স এলাকার বাইরে বসবাস করছে। এতে করে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে ভুগছেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা।

বর্হিবিভাগে রোগী দেখা শেষে আগে ডাক্তাররা তাদের নিজস্ব কোয়ার্টারে বসবাস করার কারণে ভর্তিকৃত রোগীরা খুব সহজে তাদের নানান সমস্যায় ডাক্তারদেরকে কাছে পেলেও বর্তমানে পাচ্ছে না। বিগত বন্যার পর হাসপাতালটি মূল ভবনের ভিম ও দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে বর্হিবিভাগে রোগী দেখছে ডাক্তাররা। হাসপাতালের মূল ভবনের ফাটলসহ কোয়ার্টারগুলোর দৈন্যদশার কথা অবহিত করে একাধিক চিঠি প্রদান করা হলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার ও নার্স জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করলেও আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

দৈনিক ডেসটিনিকে তারা বলেন, রোগীদের কথা বিবেচনা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝরাজীর্ণ এ পরিত্যক্ত ভবনে আমরা বসবাস করছি। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটতে পারে প্রাণনাশের মতো ঘটনা।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, ২৬ জন চিকিৎসকের জায়গায় রয়েছে ২২ জন। ৩৫ জন নার্সের জায়গায় রয়েছে ২৬ জন। ৫৮ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির থাকার কথা থাকলেও আছে ২৯ জন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিদের সঙ্কটের কারণে হাসপাতাল কমপ্লেক্স এলাকার ভিতরে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। আগাছা জন্মিয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতালের ভর্তি রোগীর স্বজন আয়েশা বেগম বলেন, আজ দুইদিন হলো ছোট বোনকে নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আগে বিকেল হলেও কোয়ার্টারে ডাক্তারের খোঁজ পেতাম। এখন কোয়ার্টারে কোন ডাক্তার থাকে না।

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি আয়া খোরশেদা বেগম বলেন, আমি যে বিল্ডিংয়ে বর্তমানে বসবাস করছি, তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেয়ালের পলেস্তারার ইটগুলো খসে পড়ে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে পরিবারের চার সদস্যকে বাইরের একটি বিল্ডিংয়ে বাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর আমি চাকরির সুবাদে ঝুঁকি নিয়ে এ পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে রাতে ঘুমাতে যাই।

সিনিয়র নার্স হাসিনা বেগম বলেন, বন্যার আগে বিল্ডিংগুলোতে বসবাস করার কিছতা পরিবেশ থাকলেও ভয়াবহ বন্যায় বিল্ডিংগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে আমি এ ঝুঁকিপুর্ণ বিল্ডিংয়ে বসবাস করে আসছি। রাতে ভয়ে থাকি। সামান্য ভুমিকম্প হলে ঘটতে পারে বড় ধরনের ঘটনা।

আবাসিক চিকিৎসক ডা. মেজবাউল আলম বলেন, ডাক্তারদের জন্য দুইটি বিল্ডিং সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকলেও এগুলো এখন বসবাসের অনুপযোগী। বিগত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া ভবনগুলো পরিত্যক্ত দেখিয়ে উর্ধ্বতন মহলে চিঠি প্রদান করেছিলেন। বন্যায় হাসপাতালটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভর্তিকৃত রোগীদের বিবেচনা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কয়েকজন ডাক্তার এ ঝরাজীর্ণ ভবনগুলোতে বসবাস করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিদের বসবাসের জন্য চারটি বিল্ডিং থাকলেও তা এখন বসবাসের অনুপযোগী। পলেস্তরসহ ইট খসে পড়ছে। অনেকে ভর্তিকৃত রোগীদের কথা বিবেচনা করে ঝুঁকি নিয়েও এ পরিত্যক্ত বিল্ডিংগুলোতে রাত্রি যাপন করছে। আবার অধিকাংশ ডাক্তার, নার্স ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিরা অন্যস্থানে বসবাস করছে। বিগত ভয়াবহ বন্যায় হাসপাতালটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, ল্যাব ও তথ্য-প্রযুক্তির সামগ্রী। এছাড়াও কয়েক লক্ষাধিক টাকার ওষুধও নষ্ট হয়েছে। এতে করে আট কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।