ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিতে জবাবদিহি করা আবশ্যক: উপদেষ্টা শারমিন 

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদ বলেছেন, দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করতে হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা আবশ্যক। আমাদের লক্ষ্য হলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দেশের সবচেয়ে দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে সেবা প্রদান হবে সততা ও জনকেন্দ্রিকতার ওপর ভিত্তি করে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর আয়োজিত ‘সামাজিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অংশীদারদের সাথে হাঁটা’ শীর্ষক সম্মেলনের মূল বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদ। বক্তৃতায় তিনি যুব নেতৃত্বাধীন জুলাই আন্দোলনের প্রভাবকে উল্লেখ করে বলেন, এই আন্দোলন জনগণের সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ এবং সুস্থ শাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।

দেশের সামাজিক পরিষেবার জবাবদিহিতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিশ্চিতের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে আগারগাঁওয়ে মধুমতি মিলনায়তনে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন আজ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, এই সম্মেলন সংলাপ, সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

এ ছাড়াও সম্মেলনে অংশ নেন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন অংশীদার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং জাতীয় কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্ট, শারীরিক ও স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ পুনর্বাসন কাউন্সিলের কর্মকর্তারা।

দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে থাকছে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনা, ইন্টারেক্টিভ কর্মশালা এবং কৌশলগত অধিবেশন। আলোচনার মূল বিষয়গুলো হলো: ডিজিটাল স্বচ্ছতা সরঞ্জাম, সম্মুখ সারির কর্মীদের নৈতিক প্রশিক্ষণ, হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা ব্যবস্থা, সম্প্রদায় পর্যবেক্ষণ কাঠামো।

বিশ্বব্যাপী সামাজিক সেবাখাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যের কারণে জনসাধারণের আস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আয়োজিত সম্মেলনটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি ন্যায্য, জবাবদিহিমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের দিকে নির্দেশ করছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক এথিক্সের নীতি বিশেষজ্ঞ ড. এলেনা মন্টোয়া বলেন, সামাজিক সেবার অখণ্ডতা একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজের মেরুদণ্ড। যখন বিশ্বাস ক্ষয় হয়, তখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সুইডেন, কেনিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ তুলে ধরে সম্মেলনে বক্তারা বলেন, স্বচ্ছতা কেবল তথ্য উন্মুক্তকরণ নয়, বরং জনগণকে শাসন প্রক্রিয়ার অংশ করে তোলার মাধ্যমও। বাংলাদেশের এই সম্মেলন সেই চেতনারই প্রতিফলন, যেখানে নাগরিক সম্পৃক্ততা, আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় এবং সমাজকর্মীদের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।সম্মেলনের সুপারিশসমূহের ভিত্তিতে সরকার নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিতে জবাবদিহি করা আবশ্যক: উপদেষ্টা শারমিন 

আপডেট সময় ০৩:২৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদ বলেছেন, দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করতে হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা আবশ্যক। আমাদের লক্ষ্য হলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দেশের সবচেয়ে দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে সেবা প্রদান হবে সততা ও জনকেন্দ্রিকতার ওপর ভিত্তি করে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর আয়োজিত ‘সামাজিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অংশীদারদের সাথে হাঁটা’ শীর্ষক সম্মেলনের মূল বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদ। বক্তৃতায় তিনি যুব নেতৃত্বাধীন জুলাই আন্দোলনের প্রভাবকে উল্লেখ করে বলেন, এই আন্দোলন জনগণের সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ এবং সুস্থ শাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।

দেশের সামাজিক পরিষেবার জবাবদিহিতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিশ্চিতের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে আগারগাঁওয়ে মধুমতি মিলনায়তনে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন আজ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, এই সম্মেলন সংলাপ, সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

এ ছাড়াও সম্মেলনে অংশ নেন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন অংশীদার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং জাতীয় কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্ট, শারীরিক ও স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ পুনর্বাসন কাউন্সিলের কর্মকর্তারা।

দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে থাকছে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনা, ইন্টারেক্টিভ কর্মশালা এবং কৌশলগত অধিবেশন। আলোচনার মূল বিষয়গুলো হলো: ডিজিটাল স্বচ্ছতা সরঞ্জাম, সম্মুখ সারির কর্মীদের নৈতিক প্রশিক্ষণ, হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা ব্যবস্থা, সম্প্রদায় পর্যবেক্ষণ কাঠামো।

বিশ্বব্যাপী সামাজিক সেবাখাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যের কারণে জনসাধারণের আস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আয়োজিত সম্মেলনটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি ন্যায্য, জবাবদিহিমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের দিকে নির্দেশ করছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক এথিক্সের নীতি বিশেষজ্ঞ ড. এলেনা মন্টোয়া বলেন, সামাজিক সেবার অখণ্ডতা একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজের মেরুদণ্ড। যখন বিশ্বাস ক্ষয় হয়, তখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সুইডেন, কেনিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ তুলে ধরে সম্মেলনে বক্তারা বলেন, স্বচ্ছতা কেবল তথ্য উন্মুক্তকরণ নয়, বরং জনগণকে শাসন প্রক্রিয়ার অংশ করে তোলার মাধ্যমও। বাংলাদেশের এই সম্মেলন সেই চেতনারই প্রতিফলন, যেখানে নাগরিক সম্পৃক্ততা, আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় এবং সমাজকর্মীদের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।সম্মেলনের সুপারিশসমূহের ভিত্তিতে সরকার নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।