নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন কোর্টের আইনজীবী ও নিহতদের স্বজনরা।
আজ রোববার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯ টায় জেলা আদালত প্রাঙ্গণে হত্যাকাণ্ডের ১১ বছরেও রায় কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশে এই মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে নিহত প্যানেল মেয়র নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডের রায়টি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের সাতটি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষগুলো মারা গেছে তাদের তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না । আমরা অন্তত এতটুকু স্বস্তি পাই যে তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হয়েছে। আমাদের এটাই দাবি।
মানববন্ধনে সাত খুন মামলার আইনজীবী ও মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আপনারা জানেন নারায়ণগঞ্জের সাত খুন একটি কলঙ্কিত অধ্যায়৷ সে সময় এ নারায়ণগঞ্জে গডফাদারের রাজত্ব কায়েম ছিল, তখন নারায়ণগঞ্জে আইনের কোন শাসন ছিল না। আজও আমাদের গা শিউরে ওঠে।
নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন এমপি শামীম ওসমান ও তার দোসর নূর হোসেন দেশের একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ভাড়া করে সাত জনকে হাজার হাজার মানুষের সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছিল। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের মরদেহ ভেসে উঠেছিল। এবং প্রত্যেকের বুকে চব্বিশটি করে ইট বাঁধা ছিল।
তিনি আরও বলেন, আসামিরা প্রভাবশালী। তারা আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট ছিল। এ কারণে এত বছর ধরে মামলাটি ঝুলে আছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক এটাই চাই।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম, আইজীবি সমিতির সভাপতি সরকার হুমাযূন কবির, সাধারণ সম্পাদক এইচএম আনোয়ার প্রধান, জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের পি.পি জাকির হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
উল্লেখ্য, গত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড থেকে অপহৃত হয় সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়ি চালক, জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ইব্রাহিম।
তিন দিন পর বন্দর উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদী পাড় থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন।
সে মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন র্যাব- ১১ এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ঘোষনা করেন।
পরে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামী মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন উচ্চ আদালতে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাড়ে ছয় বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায়।