ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
কৃষকের মুখে হাসি

তিস্তার চরাঞ্চলে বাদামের বাম্পার ফলনের আশা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে চিস্তার চরাঞ্চলজুড়ে বাদাম চাষ করে ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। বাম্পার ফলনে খুশি বাদাম চাষিরা। এর মাঝে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। যেদিকে চোখ যায় সবুজ পাতার দোল খাচ্ছে বাদামের গাছ। সবুজ আর সবুজে ভরা পুরো চরাঞ্চল। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরগুলো যেন সেজেছে নতুন সাজে। সবুজে ভরা বাদামের ক্ষেত এখন কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভ হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩ শত ৬০ হেক্টর। যা অর্জিত হয়েছে ৩ শত ৬৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৫ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ শত ৩৮ মেট্রিকটন।

তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ২ শত ৫ হেক্টর বাদাম চাষ বেশি হয়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলের বাদাম চাষিদের পোকামাকড় রোগবালাই সহ বিভিন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।

জানা যায়- বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এ সকল ইউনিয়নে তিস্তা নদীতে ভেসে উঠেছে অসংখ্য চর। আর এ চর গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়। তার মধ্যে বাদামের চাষ অন্যতম। বিভিন্ন চরে একরময় একর জমিতে বাদামের চাষ করা হয়েছে।

কৃষকেরা জানান, গত বছর দফায় দফায় বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদা পানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। গোড়াই পিয়ার, গুনাইগাছ, টিটমা, নাগরাকুড়া, দড়িকিশোরপুর, হোকডাঙ্গা, সাদুয়া দামারহাট, রামনিয়াসা, বিরহিম, সন্তোষ অভিরাম, খারিজা লাটশালা, গোড়াই, কদমতোলা ও অর্জুন সহ অসংখ্য চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরগুলো যেন নতুন করে সেজেছে। শুধু মাঠের পর মাঠ বাদামের সবুজ ক্ষেত। জেগে উঠা চরের বালুতেই সবুজ বাদামের ক্ষেতকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।

এছাড়াও চাষ করা হয়েছে মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ও রবিশস্য। কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন এসব ক্ষেত পরিচর্যা করতে। মাঝে মাঝে বাদামের সবুজ পাতা বাতাশে দোল খেয়ে যেনো সবুজ ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। যা দূর থেকে এক অপরুপ সোভা বর্ধন করছে। এসব বাদাম ক্ষেতে ডাল ধরে টান দিলেই মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে থোকায় থোকায় বাদাম। আর ক’দিন পর এসব চরে বাদাম তুলে রোদে শুকিয়ে ঘরে নিবেন।

তিস্তার চরাঞ্চলের গোড়াই পিয়ার চরের বাদাম চাষি নজরুল ইসলাম জানান, এবারে প্রায় ৩ একর জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। বাদাম উঠানো পর্যন্ত খরচ হবে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। ৩ একর জমিতে ১শ মণ বাদামের আশা করছেন। বাজারে বাদাম মণ প্রতি বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা। মোট ৩ লক্ষ টাকা আয়ের আশা করছেন এ কৃষক। খরচ বাদেও ১ লক্ষ টাকা আয় হবে বলে জানান এ কৃষক।

এছাড়া বিভিন্ন চরাঞ্চলের বাদাম চাষি নুরু মিয়া, জামাল উদ্দিন, সাহাবর আলী, ও সাহেব আলী সহ আরও অনেক বাদাম চাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, বাদাম চাষ অত্যন্ত সহজ যা কম খরচে অনেক লাভ করা যায়। এছাড়া তিস্তার চরাঞ্চল গুলোতে পলিমাটি জমে থাকায় বাদাম চাষের জন্য উপযোগি হয়ে উঠেছে। তাই এসকল জমিতে বাদামের ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন বাদাম চাষে ঝুঁকছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন জানান, বাদাম চাষ একটি লাভজনক ফসল। গত বছরের তুলনায় এবারে বিভিন্ন চরাঞ্চলে বাদামের চাষ বেশি হয়েছে। অল্প খরচে বেশি লাভ করা যায় বাদাম চাষে। যার কারণে কৃষকেরা বাদাম চাষে বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন। বাদামের ফলন ও বাজারদর ভালো থাকলে বাদাম চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষকের মুখে হাসি

তিস্তার চরাঞ্চলে বাদামের বাম্পার ফলনের আশা

আপডেট সময় ০৩:১৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

কুড়িগ্রামের উলিপুরে চিস্তার চরাঞ্চলজুড়ে বাদাম চাষ করে ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। বাম্পার ফলনে খুশি বাদাম চাষিরা। এর মাঝে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। যেদিকে চোখ যায় সবুজ পাতার দোল খাচ্ছে বাদামের গাছ। সবুজ আর সবুজে ভরা পুরো চরাঞ্চল। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরগুলো যেন সেজেছে নতুন সাজে। সবুজে ভরা বাদামের ক্ষেত এখন কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভ হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩ শত ৬০ হেক্টর। যা অর্জিত হয়েছে ৩ শত ৬৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৫ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ শত ৩৮ মেট্রিকটন।

তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ২ শত ৫ হেক্টর বাদাম চাষ বেশি হয়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলের বাদাম চাষিদের পোকামাকড় রোগবালাই সহ বিভিন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।

জানা যায়- বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এ সকল ইউনিয়নে তিস্তা নদীতে ভেসে উঠেছে অসংখ্য চর। আর এ চর গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়। তার মধ্যে বাদামের চাষ অন্যতম। বিভিন্ন চরে একরময় একর জমিতে বাদামের চাষ করা হয়েছে।

কৃষকেরা জানান, গত বছর দফায় দফায় বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদা পানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। গোড়াই পিয়ার, গুনাইগাছ, টিটমা, নাগরাকুড়া, দড়িকিশোরপুর, হোকডাঙ্গা, সাদুয়া দামারহাট, রামনিয়াসা, বিরহিম, সন্তোষ অভিরাম, খারিজা লাটশালা, গোড়াই, কদমতোলা ও অর্জুন সহ অসংখ্য চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরগুলো যেন নতুন করে সেজেছে। শুধু মাঠের পর মাঠ বাদামের সবুজ ক্ষেত। জেগে উঠা চরের বালুতেই সবুজ বাদামের ক্ষেতকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।

এছাড়াও চাষ করা হয়েছে মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ও রবিশস্য। কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন এসব ক্ষেত পরিচর্যা করতে। মাঝে মাঝে বাদামের সবুজ পাতা বাতাশে দোল খেয়ে যেনো সবুজ ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। যা দূর থেকে এক অপরুপ সোভা বর্ধন করছে। এসব বাদাম ক্ষেতে ডাল ধরে টান দিলেই মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে থোকায় থোকায় বাদাম। আর ক’দিন পর এসব চরে বাদাম তুলে রোদে শুকিয়ে ঘরে নিবেন।

তিস্তার চরাঞ্চলের গোড়াই পিয়ার চরের বাদাম চাষি নজরুল ইসলাম জানান, এবারে প্রায় ৩ একর জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। বাদাম উঠানো পর্যন্ত খরচ হবে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। ৩ একর জমিতে ১শ মণ বাদামের আশা করছেন। বাজারে বাদাম মণ প্রতি বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা। মোট ৩ লক্ষ টাকা আয়ের আশা করছেন এ কৃষক। খরচ বাদেও ১ লক্ষ টাকা আয় হবে বলে জানান এ কৃষক।

এছাড়া বিভিন্ন চরাঞ্চলের বাদাম চাষি নুরু মিয়া, জামাল উদ্দিন, সাহাবর আলী, ও সাহেব আলী সহ আরও অনেক বাদাম চাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, বাদাম চাষ অত্যন্ত সহজ যা কম খরচে অনেক লাভ করা যায়। এছাড়া তিস্তার চরাঞ্চল গুলোতে পলিমাটি জমে থাকায় বাদাম চাষের জন্য উপযোগি হয়ে উঠেছে। তাই এসকল জমিতে বাদামের ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন বাদাম চাষে ঝুঁকছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন জানান, বাদাম চাষ একটি লাভজনক ফসল। গত বছরের তুলনায় এবারে বিভিন্ন চরাঞ্চলে বাদামের চাষ বেশি হয়েছে। অল্প খরচে বেশি লাভ করা যায় বাদাম চাষে। যার কারণে কৃষকেরা বাদাম চাষে বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন। বাদামের ফলন ও বাজারদর ভালো থাকলে বাদাম চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।