ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ভিজিট ভিসায় হজে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ

ভিজিট ভিসায় হজে অংশ নিলে ৩২ লাখ টাকা জরিমানা

হজ পারমিট ছাড়া কেউ যেন হজ পালন না করে—এমন অনুরোধ জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। চলতি হজ মৌসুমে সৌদি সরকার নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করায় বাংলাদেশ সরকার এই সতর্কতা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেউ যদি হজ পারমিট ছাড়া ভিজিট ভিসায় হজ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে ২০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা গুনতে হবে। আর যদি কেউ ওই ব্যক্তিকে সহায়তা করেন—যেমন পরিবহন, আবাসন, বা হজ এলাকায় প্রবেশে সহায়তা—তাহলে তাকে সর্বোচ্চ এক লাখ রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৩২ লাখ টাকা) পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

আজ শুক্রবার (২ মে) ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ভিজিট ভিসায় মক্কায় প্রবেশ, হজ পালন কিংবা পবিত্র স্থানসমূহে অবস্থান করা যাবে না। কেউ ভিজিট ভিসাধারীদের হজে সহায়তা করলেও তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, ‘সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা, হজযাত্রীদের কল্যাণ এবং বাংলাদেশ-সৌদি আরবের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিবেচনায়, দেশে ও সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রতি এই অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’

সৌদি সরকারের কঠোর নতুন নিয়ম
সৌদি সরকার এবার হজ মৌসুমে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তারা ঘোষণা করেছে, শুধু জরিমানাই নয়, যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সহায়তাকারীর যানবাহনও আদালতের নির্দেশে বাজেয়াপ্ত করা হবে।

এছাড়া কেউ যদি বৈধ অনুমতি ছাড়া মক্কা বা আশপাশের পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন, তাহলে তাকে সৌদি আরব থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং ভবিষ্যতে ১০ বছর সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

কোন সময়কালটি ঝুঁকিপূর্ণ?
সৌদি সরকারের জারি করা নিয়ম অনুযায়ী, জিলকদ মাসের ১ তারিখ থেকে জিলহজ মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত (২৯ এপ্রিল–১০ জুন) কেউ হজ পারমিট ছাড়া মক্কা শহর কিংবা পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না। বিশেষ নজরদারি থাকবে সেইসব বাংলাদেশিদের ওপর যারা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় তাদের হজ মৌসুমে মক্কা ও পবিত্র স্থানসমূহে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এই অবস্থায় বাংলাদেশিদের সতর্ক করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভিজিট ভিসাধারী ব্যক্তিকে হজে সহায়তা করা, আবাসনের ব্যবস্থা করা বা হজ এলাকায় প্রবেশে সহযোগিতা করাও আইনের আওতায় পড়বে। এই ধরনের সহায়তা সৌদি আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং গুরুতর শাস্তি আরোপ হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার সৌদি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং হজ ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।

এসব প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘হজের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকার ঘোষিত আইন-কানুন মেনে চলা আবশ্যক। প্রায় ৩৫ লক্ষ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কর্মরত। এখান থেকেই বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পায়। এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের আইন অমান্য করলে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে, হজ ব্যবস্থাপনায় সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ ভিজিট ভিসায় হজে না যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের আবারও অনুরোধ জানান।

ধর্ম সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলেন, ‘হজ একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা এবং টিমওয়ার্ক। সৌদি আরব ও মুসলিম দেশগুলোর অংশগ্রহণে এটি পরিচালিত হয়। তবে হজ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণে সৌদি আরবের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুপরিকল্পিত কর্মসূচি, আইন-কানুনের যথাযথ প্রয়োগ এবং অংশীজনের সহযোগিতা ছাড়া সুশৃঙ্খল হজ সম্ভব নয়। হজের পবিত্রতা রক্ষা ও হজযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের দলগতভাবে কাজ করতে হবে।’

ইউ

জনপ্রিয় সংবাদ

ভিজিট ভিসায় হজে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ

ভিজিট ভিসায় হজে অংশ নিলে ৩২ লাখ টাকা জরিমানা

আপডেট সময় ১২:৪৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

হজ পারমিট ছাড়া কেউ যেন হজ পালন না করে—এমন অনুরোধ জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। চলতি হজ মৌসুমে সৌদি সরকার নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করায় বাংলাদেশ সরকার এই সতর্কতা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেউ যদি হজ পারমিট ছাড়া ভিজিট ভিসায় হজ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে ২০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা গুনতে হবে। আর যদি কেউ ওই ব্যক্তিকে সহায়তা করেন—যেমন পরিবহন, আবাসন, বা হজ এলাকায় প্রবেশে সহায়তা—তাহলে তাকে সর্বোচ্চ এক লাখ রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৩২ লাখ টাকা) পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

আজ শুক্রবার (২ মে) ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ভিজিট ভিসায় মক্কায় প্রবেশ, হজ পালন কিংবা পবিত্র স্থানসমূহে অবস্থান করা যাবে না। কেউ ভিজিট ভিসাধারীদের হজে সহায়তা করলেও তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, ‘সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা, হজযাত্রীদের কল্যাণ এবং বাংলাদেশ-সৌদি আরবের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিবেচনায়, দেশে ও সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রতি এই অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’

সৌদি সরকারের কঠোর নতুন নিয়ম
সৌদি সরকার এবার হজ মৌসুমে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তারা ঘোষণা করেছে, শুধু জরিমানাই নয়, যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সহায়তাকারীর যানবাহনও আদালতের নির্দেশে বাজেয়াপ্ত করা হবে।

এছাড়া কেউ যদি বৈধ অনুমতি ছাড়া মক্কা বা আশপাশের পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন, তাহলে তাকে সৌদি আরব থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং ভবিষ্যতে ১০ বছর সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

কোন সময়কালটি ঝুঁকিপূর্ণ?
সৌদি সরকারের জারি করা নিয়ম অনুযায়ী, জিলকদ মাসের ১ তারিখ থেকে জিলহজ মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত (২৯ এপ্রিল–১০ জুন) কেউ হজ পারমিট ছাড়া মক্কা শহর কিংবা পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না। বিশেষ নজরদারি থাকবে সেইসব বাংলাদেশিদের ওপর যারা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় তাদের হজ মৌসুমে মক্কা ও পবিত্র স্থানসমূহে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এই অবস্থায় বাংলাদেশিদের সতর্ক করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভিজিট ভিসাধারী ব্যক্তিকে হজে সহায়তা করা, আবাসনের ব্যবস্থা করা বা হজ এলাকায় প্রবেশে সহযোগিতা করাও আইনের আওতায় পড়বে। এই ধরনের সহায়তা সৌদি আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং গুরুতর শাস্তি আরোপ হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার সৌদি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং হজ ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।

এসব প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘হজের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকার ঘোষিত আইন-কানুন মেনে চলা আবশ্যক। প্রায় ৩৫ লক্ষ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কর্মরত। এখান থেকেই বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পায়। এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের আইন অমান্য করলে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে, হজ ব্যবস্থাপনায় সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ ভিজিট ভিসায় হজে না যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের আবারও অনুরোধ জানান।

ধর্ম সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলেন, ‘হজ একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা এবং টিমওয়ার্ক। সৌদি আরব ও মুসলিম দেশগুলোর অংশগ্রহণে এটি পরিচালিত হয়। তবে হজ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণে সৌদি আরবের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুপরিকল্পিত কর্মসূচি, আইন-কানুনের যথাযথ প্রয়োগ এবং অংশীজনের সহযোগিতা ছাড়া সুশৃঙ্খল হজ সম্ভব নয়। হজের পবিত্রতা রক্ষা ও হজযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের দলগতভাবে কাজ করতে হবে।’

ইউ