ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পরিবেশকর্মীদের উদ্বেগ

তালতলীর নদীতে মৃত ডলফিন

ডলফিন শুধু প্রাণী নয়,পরিবেশের ভারসাম্যের প্রহরী ডলফিনকে অনেক সময় বলা হয় “একটি স্বাস্থ্যবান নদী বা সাগরের চিহ্ন”। এরা শুধু পানিতে বিচরণকারী একটি প্রাণী নয়—বরং জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য একটি প্রজাতি।

বরগুনার তালতলী উপজেলার পায়রা নদীতে ভেসে উঠেছে একটি মৃত ডলফিন।

আজ শুক্রবার(২ মে)দুপুর ১টার দিকে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন নদীর তীরে স্থানীয় জেলেরা ডলফিনটির মরদেহ দেখতে পান। পরে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর তালতলী সমন্বয়ক আরিফুর রহমানের সহায়তায় এটি উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া ডলফিনটির শরীরে গভীর আঁচড়, রক্তাক্ত লেজ ও কেটে যাওয়ার দাগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লাবাহী জাহাজ বা মাছ ধরার ট্রলারের প্রপেলারের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে প্রাণীটির।

পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান বলেন,‘এ ঘটনা শুধু একটি প্রাণীর মৃত্যু নয়, বরং এটি আমাদের সামুদ্রিক পরিবেশের ওপর এক বড় হুমকির ইঙ্গিত। এভাবে ডলফিন মারা যাওয়ার অর্থ, নদীতে নির্বিচারে চলাচলকারী জাহাজ, ট্রলারে অতিরিক্ত মাছ ধরা ও দূষণ আমাদের জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে।’

এ বিষয়ে তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ডলফিন মৃত অবস্থায় উদ্ধারের খবর পেয়েছি। বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ডলফিনের মৃত্যু শুধু ট্রলারের ধাক্কা নয়, এটি পানি ও পরিবেশের গভীর অবনতির প্রতিফলন। আমাদের নদীগুলোর পানির গুণগতমান দিন দিন ভয়াবহভাবে নেমে যাচ্ছে। শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক, তেল ও বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান এসব মিশে নদীকে ধীরে ধীরে প্রাণহীন করে দিচ্ছে। এই দূষিত পরিবেশে ডলফিনের মতো সংবেদনশীল প্রাণী টিকে থাকতে পারছে না।’

বাংলাদেশে সাত জাতের ডলফিন ও এক জাতের পরপয়েস দেখার তথ্য আছে। এর মধ্যে প্রকৃত মিঠাপানির নদীর ডলফিন মাত্র একটি। এর নাম গাঙ্গেয় শুশুক বা গ্যাংস রিভার ডলফিন। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের লালতালিকায় প্রাণীটি এখন বিপন্ন।

ডলফিনের এ মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়—এটা আমাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও উদাসীনতার ফল। পরিবেশ রক্ষায় এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে শুধু ডলফিন নয়, সামগ্রিকভাবে নদী ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।

ডলফিন যদি না থাকে, তাহলে তা শুধু একটি প্রাণীর মৃত্যু নয়—বরং একটা বড় পরিবেশ বিপর্যয়ের বার্তা। তাই ডলফিন সংরক্ষণ মানে ভবিষ্যতের পরিবেশ রক্ষা।

জনপ্রিয় সংবাদ

পরিবেশকর্মীদের উদ্বেগ

তালতলীর নদীতে মৃত ডলফিন

আপডেট সময় ০৬:২৪:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

ডলফিন শুধু প্রাণী নয়,পরিবেশের ভারসাম্যের প্রহরী ডলফিনকে অনেক সময় বলা হয় “একটি স্বাস্থ্যবান নদী বা সাগরের চিহ্ন”। এরা শুধু পানিতে বিচরণকারী একটি প্রাণী নয়—বরং জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য একটি প্রজাতি।

বরগুনার তালতলী উপজেলার পায়রা নদীতে ভেসে উঠেছে একটি মৃত ডলফিন।

আজ শুক্রবার(২ মে)দুপুর ১টার দিকে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন নদীর তীরে স্থানীয় জেলেরা ডলফিনটির মরদেহ দেখতে পান। পরে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর তালতলী সমন্বয়ক আরিফুর রহমানের সহায়তায় এটি উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া ডলফিনটির শরীরে গভীর আঁচড়, রক্তাক্ত লেজ ও কেটে যাওয়ার দাগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লাবাহী জাহাজ বা মাছ ধরার ট্রলারের প্রপেলারের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে প্রাণীটির।

পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান বলেন,‘এ ঘটনা শুধু একটি প্রাণীর মৃত্যু নয়, বরং এটি আমাদের সামুদ্রিক পরিবেশের ওপর এক বড় হুমকির ইঙ্গিত। এভাবে ডলফিন মারা যাওয়ার অর্থ, নদীতে নির্বিচারে চলাচলকারী জাহাজ, ট্রলারে অতিরিক্ত মাছ ধরা ও দূষণ আমাদের জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে।’

এ বিষয়ে তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ডলফিন মৃত অবস্থায় উদ্ধারের খবর পেয়েছি। বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ডলফিনের মৃত্যু শুধু ট্রলারের ধাক্কা নয়, এটি পানি ও পরিবেশের গভীর অবনতির প্রতিফলন। আমাদের নদীগুলোর পানির গুণগতমান দিন দিন ভয়াবহভাবে নেমে যাচ্ছে। শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক, তেল ও বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান এসব মিশে নদীকে ধীরে ধীরে প্রাণহীন করে দিচ্ছে। এই দূষিত পরিবেশে ডলফিনের মতো সংবেদনশীল প্রাণী টিকে থাকতে পারছে না।’

বাংলাদেশে সাত জাতের ডলফিন ও এক জাতের পরপয়েস দেখার তথ্য আছে। এর মধ্যে প্রকৃত মিঠাপানির নদীর ডলফিন মাত্র একটি। এর নাম গাঙ্গেয় শুশুক বা গ্যাংস রিভার ডলফিন। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের লালতালিকায় প্রাণীটি এখন বিপন্ন।

ডলফিনের এ মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়—এটা আমাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও উদাসীনতার ফল। পরিবেশ রক্ষায় এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে শুধু ডলফিন নয়, সামগ্রিকভাবে নদী ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।

ডলফিন যদি না থাকে, তাহলে তা শুধু একটি প্রাণীর মৃত্যু নয়—বরং একটা বড় পরিবেশ বিপর্যয়ের বার্তা। তাই ডলফিন সংরক্ষণ মানে ভবিষ্যতের পরিবেশ রক্ষা।