নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার অন্যতম পুরাতন ও জনবহুল হাট মীরগঞ্জ হাটে ইজারা না হওয়ায় তা খাস খতিয়ানে ন্যস্ত রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান না থাকায় হাটটিতে গরু ও ছাগল ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি গরুতে ৬০০ টাকা টোলের রশিদ ও অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ, এক গরুর জন্য মোট ৮০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০০ টাকার কোন প্রকার সরকারি রশিদ নেই। উপস্থিত ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, চাঁদার অর্থ জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে, কেউ দিতে অস্বীকার করলে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন গোলনা ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম এবং কাঁঠালী ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। ইজারার দায়িত্বরত জহুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা নিয়মিত হাটে আসি, তবে কিছু লোক আমাদের চাপে ফেলে জোর করে কালেকশন করছে। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ে সাহস পাচ্ছে—বিএনপি-জামাতের লোক।”
এসময় হাটে উপস্থিত শতাধিক গরু ক্রেতা-বিক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, “গত তিনটি হাটে গরুর ক্রেতাদের কাছ থেকে রশিদ বাবদ ৬০০ টাকা নেয়া হলেও, আজকে প্রথমবার বিক্রেতাদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় শুরু হয়েছে। হাটের কিছু লোক ভয় দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। এমনকি সংবাদকর্মীদের ওপরও একদল লোক চড়াও হয়, গালমন্দ ও হত্যার হুমকি দেয়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত চাঁদাবাজ চক্রটি উপজেলা বিএনপির একটি অংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে হাট নিয়ন্ত্রণ করছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র মতে, বাংলা ১৪৩২ অর্থবছরের জন্য জলঢাকা উপজেলার ২৬টি হাট-বাজার ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি হাট ইজারা হলেও ৯টি হাটে দরপত্র জমা না পড়ায় হাটগুলো খাস খতিয়ানে চলে যায়। এই হাটগুলো বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা।
মীরগঞ্জ ছাড়াও পাঠানপাড়া, হলদিবাড়ী নালারপাড়, জয়বাংলা, নবাবগঞ্জ, ডিয়াবাড়ী, বালারপুকুর চৌধুরীর হাটসহ ৯টি হাট খাসে রয়েছে। এসব হাটে টোল আদায়ের জন্য প্রশাসন স্থানীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত জনবল ব্যবহার করার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, খাস খতিয়ানে যাওয়া হাটে কাউকে লিখিতভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। কিছু লোক প্রশাসনের সঙ্গে থেকে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করলেও, অতিরিক্ত ২০০ টাকা আদায়ের কোন এখতিয়ার তাদের নেই। যদি কেউ এমন অনিয়ম করে থাকে এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্থানীয়রা অনতিবিলম্বে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে হাটে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
এএস/