বরগুনা সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও, এটি মূলত ১০০ শয্যার বাজেট এবং কাঠামোতেই চলছে। ফলে হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা, চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে রয়েছে চিকিৎসক সংকট।
জেলার ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। বরগুনা সদর হাসপাতালেও চিকিৎসকের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, যার ফলে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অন্যান্য সংকটের মধ্যে রয়েছে, হাসপাতালের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর এবং প্রায়শই অপরিষ্কার থাকে এবং জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও গাইনী বিভাগসহ পুরো হাসপাতালেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যপক অভাব রয়েছে, যেমন প্লাটিলেট নির্ণয়ের রিএজেন্ট না থাকায় ডেঙ্গু রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে। বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় রোগীদের মেঝে, বারান্দা ও সিঁড়ির পাশেও থাকতে হচ্ছে।
অন্যদিকে রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সের অভাবে রোগীরা সময়মতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক রোগীকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
এসব কারণে বরগুনা সদর হাসপাতালে আসা রোগীরা সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবের কথা জানালেও, স্থানীয়দের অভিযোগ অব্যবস্থাপনা এবং তদারকির অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সেবা নিতে আসা রহমান দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে গাইনি ডাক্তার দেখাতে বরগুনা সদর হসপিটাল এ আসি। আমার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় আমি একটু তাড়াতাড়ি আসি যেন দ্রুত ডাক্তার দেখাইয়া বাড়ি যাইতে পারি, কিন্তু ডাক্তারের এখানে অনেক সিরিয়াল লম্বা হওয়ার কারণে অনেক দেরি হয়। ডাক্তার সাহেব ও তার সহকারীদের ব্যবহার ভালো না,অন্য রোগীর সাথেও আমি খারাপ ব্যবহার করতে দেখেছি তারপরও ডাক্তার দেখাইতে পারিনি পরে ন্যাশনাল হসপিটালে গিয়ে দেখাইছি ।
আরও একজন সেবা নিতে আসা তসলিমা বেগম দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন,আমি গরিব মানুষ দিন আনি দিন খাই ওষুধ কেনার টাকা থাকে না। আইছি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাইয়া ওষুধ নিমু কিন্তু দেখি প্যারাসিটামল ট্যাবলেটও নাই, অনেক সময় ঔষধ থাকে অনেক সময় থাকে না।
সহিদুল ইসলাম স্বপ্ন -( সমাজ সেবক,গণমাধ্যম কর্মী) দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, বরগুনার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা তিন-চতুর্থাংশ জনবল নেই। এটা নিয়েও আমরা আন্দোলন করেছি। স্বাস্থ্য বিভাগের অবহেলার কারণে শূন্যপদগুলো আজ পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। ৩০ মাসের কাজ ৯ বছরেও শেষ হয়নি এখনো, চলমান আছে আড়াই শ শয্যার হাসপাতালের ভবন নির্মাণ কাজ ।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: এ. কে. এম. নজমূল আহসান তথ্য মতে, ১০০ শয্যার হাসপাতালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৫৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছেন ১৬ জন।
আমাদের হসপিটালটি নামে ২৫০শয্যা বিশিষ্ট কিন্তু বাজেট আসে এখনো ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসাপাতালের। বরগুনা জেলার প্রায় ১৩ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম এক প্রকার চালিয়ে নিচ্ছি। লোকবল নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ না হওয়ায় আমরা নতুন ভবনে পরিপূর্ণ ভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে পারছি না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, প্রশাসনিক অনুমোদন হয় মিনিস্ট্রি থেকে, প্রস্তাবটা আসে স্থানীয় হসপিটাল থেকে যিনি তত্ত্বাবধায়ক থাকেন তার মাধ্যমে ।স্থানীয় তত্ত্বাবধায়কের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হসপিটালের একটি চাহিদা পত্র মন্ত্রণালয়ের দিতে হয় তার কত জনবল এবং বাজেট প্রয়োজন । যদি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও থাকে কি কারনে মন্ত্রণালয় আটকে আছে ফাইল এটা তদারকি করতে হবে,শুধু চিঠি দিলেই হবে না নিজ উদ্যোগ নিয়ে অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে ।
স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক এর কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয় এ কাজের জন্য এবং কোথায় ফাইল আটকে আছে, কি করলে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হবে এর সকল দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা আমাদের কাছে চাইলে আমরা করব।
এএস/