ঢাকা , শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে কিশোরদের মাঝে তামাকের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ: গবেষণা

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয়, ধুমপান মৃত্যুর কারণ, এই কথাগুলোর সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। তবে তামাকের ক্ষতিকারক এসব বিষয়গুলো কমবেশি সবাই জানলেও মানতে নারাজ অনেকেই। সেই ক্ষতিকারক তামাক ব্যবহার করে তামাক সেবনকারীরা স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো করছেনই পাশাপাশি সম্মুখীন হচ্ছেন আর্থিক ক্ষতির। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্কদের তামাক ব্যবহারের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে নারীদের সংখ্যা। অনেকেই ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ভুগছেন স্বাস্থ্য জনিত সমস্যায়।

সিগারেট ছাড়াও গুল, জর্দা, সাদা পাতাসহ আরো নানা ধরনের তামাক পণ্যের ব্যবহার রয়েছে আমাদের দেশে। উদ্বেগের বিষয় হল বাংলাদেশে যে চিকিৎসকগণ সাধারণ মানুষকে ধূমপানের বিষয়ে সচেতন করবেন সেই চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ নিয়মিত ধূমপান করেন। আইনত তামাক পণ্যের প্রচারণার কোন সুযোগ না থাকলেও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে দেখা যায় শিশুদের চকলেট বা অন্যান্য খাবার আইটেমের পাশেই সিগারেটের খালি প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হয়, যা শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত ।

বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ (GATS, ২০১৭) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী ২ কোটি ২০ লক্ষ (২০.৬%) এবং ধূমপায়ী ১ কোটি ৯২ লক্ষ (১৮%)। বাংলাদেশে ১৩-১৫ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৯.২ শতাংশ (GSHS, ২০১৪), যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যু বরণ করে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ: এ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে বছরে ১৩ লক্ষ মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তামাকপণ্যের ধোঁয়ায় আক্রান্ত হওয়ার নিরাপদ কোনো মাত্রা নেই। তামাকের ধোয়াঁয় রয়েছে ৭,০০০টি রাসায়নিক পদার্থ যার মধ্যে ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। ফুসফুস ক্যান্সার, স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ পরোক্ষ ধূমপান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া কোন ব্যক্তির মারাত্মক করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি একজন ধূমপায়ীর মতোই।’

গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে আচ্ছাদিত কর্মস্থলে কাজ করেন এমন প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠির ৪২.৭ শতাংশ (৮১ লক্ষ) পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রায় ২৪ শতাংশ (২ কোটি ৫০ লক্ষ) প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময়, ১৪.৭ শতাংশ রেস্তোরাঁয় এবং ৩৬.২ শতাংশ চা-কফির স্টলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো প্রায় ৩৯ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ (৪ কোটি ৮ লক্ষ) বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রতিবছর প্রায় ৬১,০০০ শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসুখে ভোগে।”

বিশ্বে প্রতিবছর ৮০ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় তামাক। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তামাকজনিত ক্ষতির পরিমাণ বছরে ১.৪ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। তামাকের মারাত্মক স্বাস্থ্য ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্যকে সুরক্ষার জন্য পৃথিবীর অনেক দেশ শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করছে। বিশেষত, শিশু-কিশোরদের তামাকপণ্যের ছোবল থেকে রক্ষায় অনেক দেশ তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচার বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে তামাক কোম্পানিও বসে নেই। বিজ্ঞাপন প্রচারের অন্যতম কৌশল হিসেবে তারা তামাকপণ্যের প্যাকেটকে বেছে নিয়েছে। আকর্ষণীয় ডিজাইন, রং এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য সম্বলিত প্যাকেট তৈরি করে তরুণদের তামাকপণ্যে আকৃষ্ট করার কাজ অব্যাহত রেখেছে।

তামাকের বিষয়ে তামাক বিশেষজ্ঞদের মতামত: বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য খোলা অবস্থায় বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে জনগনের মধ্যে বিশেষ করে কিশোর, তরুণ, নারী ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও ব্যবহার হ্রাস পেতে পারে।

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পাকিস্থান সহ বিশ্বের ১০৯টি দেশ সিঙ্গেল সিগারেট স্টিক বা ছোটো প্যাকেট বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। শ্রীলংকায় সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করার উদ্যোগটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।” পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিড়ি-সিগারেটে খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।

দেশে কিশোরদের মাঝে তামাকের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ: গবেষণা

আপডেট সময় ০৪:২০:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয়, ধুমপান মৃত্যুর কারণ, এই কথাগুলোর সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। তবে তামাকের ক্ষতিকারক এসব বিষয়গুলো কমবেশি সবাই জানলেও মানতে নারাজ অনেকেই। সেই ক্ষতিকারক তামাক ব্যবহার করে তামাক সেবনকারীরা স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো করছেনই পাশাপাশি সম্মুখীন হচ্ছেন আর্থিক ক্ষতির। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্কদের তামাক ব্যবহারের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে নারীদের সংখ্যা। অনেকেই ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ভুগছেন স্বাস্থ্য জনিত সমস্যায়।

সিগারেট ছাড়াও গুল, জর্দা, সাদা পাতাসহ আরো নানা ধরনের তামাক পণ্যের ব্যবহার রয়েছে আমাদের দেশে। উদ্বেগের বিষয় হল বাংলাদেশে যে চিকিৎসকগণ সাধারণ মানুষকে ধূমপানের বিষয়ে সচেতন করবেন সেই চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ নিয়মিত ধূমপান করেন। আইনত তামাক পণ্যের প্রচারণার কোন সুযোগ না থাকলেও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে দেখা যায় শিশুদের চকলেট বা অন্যান্য খাবার আইটেমের পাশেই সিগারেটের খালি প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হয়, যা শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত ।

বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ (GATS, ২০১৭) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী ২ কোটি ২০ লক্ষ (২০.৬%) এবং ধূমপায়ী ১ কোটি ৯২ লক্ষ (১৮%)। বাংলাদেশে ১৩-১৫ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৯.২ শতাংশ (GSHS, ২০১৪), যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যু বরণ করে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ: এ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে বছরে ১৩ লক্ষ মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তামাকপণ্যের ধোঁয়ায় আক্রান্ত হওয়ার নিরাপদ কোনো মাত্রা নেই। তামাকের ধোয়াঁয় রয়েছে ৭,০০০টি রাসায়নিক পদার্থ যার মধ্যে ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। ফুসফুস ক্যান্সার, স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ পরোক্ষ ধূমপান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া কোন ব্যক্তির মারাত্মক করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি একজন ধূমপায়ীর মতোই।’

গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে আচ্ছাদিত কর্মস্থলে কাজ করেন এমন প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠির ৪২.৭ শতাংশ (৮১ লক্ষ) পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রায় ২৪ শতাংশ (২ কোটি ৫০ লক্ষ) প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময়, ১৪.৭ শতাংশ রেস্তোরাঁয় এবং ৩৬.২ শতাংশ চা-কফির স্টলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো প্রায় ৩৯ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ (৪ কোটি ৮ লক্ষ) বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রতিবছর প্রায় ৬১,০০০ শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসুখে ভোগে।”

বিশ্বে প্রতিবছর ৮০ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় তামাক। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তামাকজনিত ক্ষতির পরিমাণ বছরে ১.৪ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। তামাকের মারাত্মক স্বাস্থ্য ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্যকে সুরক্ষার জন্য পৃথিবীর অনেক দেশ শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করছে। বিশেষত, শিশু-কিশোরদের তামাকপণ্যের ছোবল থেকে রক্ষায় অনেক দেশ তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচার বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে তামাক কোম্পানিও বসে নেই। বিজ্ঞাপন প্রচারের অন্যতম কৌশল হিসেবে তারা তামাকপণ্যের প্যাকেটকে বেছে নিয়েছে। আকর্ষণীয় ডিজাইন, রং এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য সম্বলিত প্যাকেট তৈরি করে তরুণদের তামাকপণ্যে আকৃষ্ট করার কাজ অব্যাহত রেখেছে।

তামাকের বিষয়ে তামাক বিশেষজ্ঞদের মতামত: বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য খোলা অবস্থায় বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে জনগনের মধ্যে বিশেষ করে কিশোর, তরুণ, নারী ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও ব্যবহার হ্রাস পেতে পারে।

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পাকিস্থান সহ বিশ্বের ১০৯টি দেশ সিঙ্গেল সিগারেট স্টিক বা ছোটো প্যাকেট বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। শ্রীলংকায় সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করার উদ্যোগটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।” পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিড়ি-সিগারেটে খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।