কুড়িগ্রামের রৌমারী থানা পুলিশের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত আবু ছাইম একজন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বাংলাদেশ বার্তা রৌমারী উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। এঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক ও স্থানীয়রা উদ্বেগের প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে এধারনের মামলা হওয়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করা। বিষয়টি তেমনই অন্যদিকে সংবাদকর্মীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করছে।
ঘটনার আদ্যোপান্ত: গত শুক্রবার (১৬ মে) রাতে নাট্যকীয় ভাবে মামলা সাজানো হয়। এবং সেই মামলায় স্থানীয় সাংবাদিক আবু ছাইম এর নাম নতিভূক্ত করেন।
ইতিপূবেও এই থানায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগি সাংবাদিক আবু ছাইম বলেন, বিপ্লব নামের এক যুবক রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়।তিনি হলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি বুলবুল আহমেদ বিপ্লব। আমি এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন এলাকার লোকজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। এতে ওসি লুৎফর রহমানের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী বিপ্লবের সকল কল রেকর্ডসহ মাদকের টাকা লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আর এসব তথ্য সংগ্রহের কথা ওসিকে জানানো হয় আমার বিরুদ্ধে। আমি আগে জানতাম না, এই টাকার ভাগ ওসিও নিতেন।
তিনি আরও বলেন, তথ্য সংগ্রহের জের ধরে গত শুক্রবার (১৬ মে) রাতে সাজিয়ে বিপ্লবের ভগ্নিপতি কামরুজ্জামান বাবুকে বাদি করে আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন ওসি লুৎফর রহমান। রৌমারী থানার মামলা নং ০৯/২৫ জি,আর নং ৮৬/২৫ ।
সড়েজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইতিপূর্বে রৌমারী থানায় পুলিশ অনিয়মের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে একাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা হলো:
২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি, রৌমারী থানায় সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনসহ স্থানীয় তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনায় সুজাউল ইসলাম সুজা, শাহারিয়ার নাজিম এবং শাকিল আহাম্মেদ নামের তিন সাংবাদিককে আসামি করা হয়।
আরও জানা গেছে, এই মামলাটি পূর্বের একটি ঘটনার জের ধরে করা হয়েছে এবং এর পেছনে পুলিশের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে হত্যা মামলায় ৩ সাংবাদিকের নাম: কুড়িগ্রামের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত আশিক হত্যা মামলায় কুড়িগ্রামের আরও তিনজন সাংবাদিক আব্দুল খালেক ফারুক, হুমায়ুন কবির সূর্য, ইউসুফ আলমগীরকে আসামি করা হয়েছে।
সাংবাদিকরা দাবি করেছেন, তারা কেবল পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।
গত ৬ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে রৌমারী উপজেলায় সাংবাদিক আনিছুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়। সাংবাদিক আনিছুর রহমানের অভিযোগ, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও তার অনুসারীদের অপকর্ম নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করছিলেন, যে কারণে তার ওপর হামলা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সাংবাদকরা আরও বলছে, গণতন্ত্রে স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাংবাদিকরা যখন সমাজের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের তথ্য তুলে ধরতে যান, তখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু রৌমারীর এই ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে যে, অনেক ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক মামলা দায়ের করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে, যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বড় বাধা সৃষ্টি করছে। এই ধরনের ঘটনা সাংবাদিকদের নির্ভয়ে কাজ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং শেষ পর্যন্ত জনস্বার্থের ক্ষতি করে। যখন সাংবাদিকরা ভয়ের কারণে সত্য প্রকাশে কুণ্ঠাবোধ করেন, তখন সমাজের অসঙ্গতিগুলো অপ্রকাশিত থেকে যায় এবং জবাবদিহিতার অভাবে দুর্নীতির সুযোগ বাড়ে।
প্রশাসনের ভূমিকা ও প্রত্যাশা:
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা উচিত এবং যদি দেখা যায় যে মামলাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা হয়রানিমূলক, তাহলে তা দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত। একই সঙ্গে, সাংবাদিকরা যাতে স্বাধীন ও নির্ভয়ে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব।
সামগ্রিকভাবে, রৌমারীর এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর একটি গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই ধরনের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের সজাগ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য।
এ ব্যাপারে রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, বিপ্লবের ভগ্নিপতির অভিযোগে মামলা নেওয়া হয়েছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, বিপ্লব আমার ভাগ্নে নয়। তিনি আমার ব্যাচমেটের ভাগ্নে। তিনি যদি আমার পরিচয় দিয়ে এসব কর্মকান্ড করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএস/