যশোরের শার্শা উপজেলার বাগুড়ি বেলতলা আম বাজারে যেদিকে দু’চোখ যায় শুধু আম আর আম। নানা রকম আম সারি সারি প্লাস্টিকের ঝুড়িতে সাজিয়ে রেখেছেন প্রতিটি আড়তের দোকানিরা। কেউ কিনছেন, কেউ বিক্রি করছেন আবার কেউবা বাজার যাচাই করছেন।
বেলতলার এই হাটে প্রতিদিন ৭ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হয়। পাশাপাশি জেলার চাহিদা মিটিয়ে আম বিদেশেও রপ্তানি হয়।
আজ শনিবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাতক্ষীরা-নাভারণ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে বসে বৃহৎ এ আমের বাজারে রয়েছে ৮৬টি আমের আড়ৎ। উপজেলার ১১ ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকা থেকে চাষিরা এ বাজারে আম নিয়ে আসেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজারে তিন ধরনের আড়ৎ রয়েছে। ‘এ’ গ্রেড, ‘বি’ গ্রেড ও ‘সি’ গ্রেড। ‘এ’ গ্রেডের একজন আড়তদার প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ, ‘বি’ গ্রেডের একজন আড়তদার প্রতিদিন ৬ থেকে ১০ লাখ এবং ‘সি’ গ্রেডের একজন আড়তদার প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার আম বিক্রি করে থাকেন।
ঢাকা ফল ভাণ্ডারের ইসাহক আলী বলেন, গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি, গোবিন্দভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপাল খাস, বৈশাখী, আম্রপালিসহ নানা জাতের আম বাজারে উঠে। ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় চাহিদাও বেশি।
ঢাকা থেকে আম কিনতে আসা জব্বার শেখ বলেন, প্রতিদিন আমরা ৫-৭ টন আম বেলতলা বাজার থেকে ক্রয় করি। বাজারটি যদি কোনো একটি মাঠে বসানো যেতো তাহলে নিরাপদে চাষিরা আম বিক্রি করতে পারতেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের আম একটু আগে পাকে। এখান থেকে আম নিয়ে বাজারজাত করলে ভালো লাভ পাওয়া যায়।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বাজারটি যদি কোনো একটি মাঠে বসানো যেত তাহলে নিরাপদে চাষিরা আম বিক্রি করতে পারতেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও ধীরে আম গুছিয়ে কার্টনে করে পরিবহন করতে পারতেন।
বাসচালক মফিজুল ইসলাম ও ট্রাকচালক মো. ওয়াসকুরুনি বলেন, বাজারটি খোলাস্থানে হলে ভালো হতো। মহাসড়ক ঘিরে বাজারের কারণে যানজট লেগেই থাকে। ফলে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রচার সম্পাদক মন্টু মিয়া বলেন, এখানে আড়ৎদাররা শতকরা ৩ টাকা কমিশনে আম বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন। চাষিদের এখানে শতকরা ৫ টাকা খাজনা দিতে হয়।
বাজার কমিটির সভাপতি মাহমুদ হোসেন বলেন, এটি স্থানীয় আমচাষিদের পরিশ্রম, অপেক্ষা আর স্বপ্নের প্রতিফলন। বহু কৃষকের সারাবছরের যত্নে গড়া ফল এখন পৌঁছে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান বলেন, বেলতলা বাজারের আমে অসাদু ব্যবসায়ীরা যেন ফরমালিন মেশাতে না পারে সেজন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয়।