কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চল জুড়ে বাদামের চাষ। বাদাম পরিপক্ক হওয়ায় উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাদাম চাষিরা।
তিস্তার চরাঞ্চালের উঁচু এলাকার বাদাম চাষিরা ফলনে খুশি হলেও নিচু এলাকার বাদাম চাষিরা লোকসানের সম্ভাবনায় চিন্তিত রয়েছেন।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ও পাহড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার চরের নিচু এলাকায় বাদামের ক্ষেত সহ তলিয়ে যায়। এতে করে বাদামের ব্যপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনায় অপরিপক্ক বাদাম উঠিয়ে নেন। ফলে বাদাম পঁচে লোকসানের মুখে পড়েছেন এসকল বাদাম চাষিরা। তারা জানান, আর মাত্র ক’দিন পার হলেই আমাদের লোকসানের মুখে পড়তে হতোনা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো প্রায় ৩’শ ৬০ হেক্টর। যা অর্জিত হয়েছে ৩’শ ৬৫ হেক্টর।। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৫হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭শ ৩৮ মেট্রিকটন।
তিস্তার চরাঞ্চলের নিচু এলাকা গুলোতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাদামের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটু সমস্যা হতে পারে বলে জানান তারা।
জানা যায়, দলদলিয়া, থেতরাই, গুনাইগাছ ও বজরা ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এ সকল ইউনিয়নে তিস্তা নদীতে ভেসে উঠেছে অসংখ্য চর। আর এ চর গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করা হয়। তার মধ্যে বাদাম চাষ অন্যতম।
কৃষকেরা জানান, গত বছর দফায় দফায় বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদা পানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখেছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
সরেজমিন এসব এলাকার অসংখ্য চরে গিয়ে দেখা যায়, চর গুলো যেনো নতুন করে সেজেছে। মাঠের পর মাঠ বাদামের সবুজ ক্ষেত। আর এ ক্ষেতকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। বাদাম পরিপক্ক হওয়ায় মাঠজুড়ে কৃষকেরা বাদাম উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব বাদাম ক্ষেতে ডাল ধরে টান দিলেই মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে থোকায় থোকায় বাদাম।
তিস্তার চরাঞ্চলের উঁচু এলাকার বাদাম চাষিরা ফলনে খুশি হলেও নিচু এলাকার চাষিরা অনেক চিন্তিত। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নিচু এলাকায় বাদামের ক্ষেত তলিয়ে যায়। এতে অনেক বাদাম নষ্ট হয়ে যায়। এসব এলাকার বাদাম চাষিরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়ে গেছেন।
তারা জানান বাদাম চাষাবাদ করতে যা খরচ হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও উঠবেনা। অসময়ে তিস্তায় পানি এসে আমাদের বাদামের ক্ষেত নষ্ট দিলো। তারা ঋণ ধার দেনা করে বাদাম চাষাবাদ করেছেন এ টাকা শোধ করবেন কিভাবে বলে জানান তারা।
গোড়াইপিয়ার চরের বাদাম চাষি খোয়াজ মন্ডল জানান, প্রায় দেড় একর জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। বাদামের ক্ষেত নিচু হওয়ায় তিস্তার পনিতে তলিয়ে যায়। এখন নিরুপায় হয়ে বাদাম উঠানো হচ্ছে। কিন্তু তেমন বাদাম নেই। অনে বাদামের ভিতরে দানা পর্যন্ত নেই। বাদাম উঠিয়ে বাড়িতে নেয়া পর্যন্ত খরচ হবে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। এখরচের টাকা উঠানো সম্ভব হবেনা বলে জানান তিনি।
দরিকিশোরপুর চর এলাকার বাদাম চাষি আলী আকবর জানান, এবারে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি চরাঞ্চলের উঁচু এলাকায় প্রায় ২ একর জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। বাদাম উঠানো ও ঘরে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত খরচ হবে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। তিনি বাদামের আসা করছেন ৭০ মণের। যার মূল্য বাজার দর হিসাবে হয় প্রায় ১লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। খরচ বাদেও তিনি ৭০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন।
এছাড়া চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার বাদাম চাষি বকুল মিয়া, চাঁদ মিয়া, জলিল মিয়া ও নুরু মিয়া সহ আরও অনেকে বলেন, তিস্তার চরাঞ্চল জুড়ে বাদামের চাষ হয়ে থাকে। তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষ বাদাম চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এ স্বপ্ন কখনো কখনো তিস্তার পানি ধুলিস্যাৎ করে দেয়। তারপরেও তারা দাবী করে বলেন, তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমাদের চাষাবাদ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবেনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন জানান,এবারে বাদামের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের কিছু নিচু এলাকায় তিস্তার পানিতে তলিয়ে বাদামের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। তাতে করে কিছু বাদাম চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলের উঁচু এলাকা গুলোতে বাদামের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাজারদর ভালো থাকলে বাদাম চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
ইউ