ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিলীনের পথে 'শুভ সন্ধ্যা'

সমুদ্র সৈকত এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বিস্তীর্ণ জলরাশি শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত। বাতাসের ঝিরিঝিরি শব্দে দোল খায় সবুজ ঝাউবন। বালুময় দীর্ঘ সৈকত আর ঝাউবনের সবুজ সমীকরণের এ দৃশ্যটি যেন প্রাকৃতি প্রেমের একটি উদাহরণ।

উপকূলীয় জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলায় অবস্থিত এই শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারণে বিলুপ্তির পথে শুভ সন্ধ্যার সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ৮ বছর আগেও যেখানে হাজার হাজার ঝাউবন দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে নামে মাত্র কিছু গাছের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। যা আছে তাও বিলুপ্তির পথে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪/১৫ সালে সৈকতের ১০ হেক্টর ও ২০২০/২১ সালে ০৭ হেক্টর জমিতে তারা ঝাউ গাছের চারা রোপন করেছেন। এতে সৈকতে সবুজ বেষ্টনী তৈরী হয়। সবুজের সমারোহে সৈকতে এক মনোরম দৃশ্য ফুটে ওঠে। কিন্তু ২০১৮/১৯ সাল থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় শুরু হয় বালুক্ষয়। আর এ অব্যাহত বালুক্ষয়ে ভাঙতে শুরু করে ঝাউবন। এখন নামে মাত্র কিছু ঝাউগাছ আছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের গাফিলতি, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির‌ অব্যবস্থাপনা, সৈকত থেকে বিভিন্ন সময়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ঝাউবন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে সৈকতে ঝাউ গাছের অস্তিত্বই থাকবে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যে ঝাউ গাছ গুলোকে কেন্দ্র করে এই সৈকত গড়ে  উঠেছে সেই গাছগুলোই অস্তিত্ব বিলীনের পথে। সমুদ্রের অস্বাভাবিক ঢেউয়ের কারণে অধিকাংশ ঝাউগাছের শিকর থেকে মাটি সরে গিয়ে হেলে পড়ছে। এতে সৈকত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে না পরলে আগামী এক বছরের মধ্যে সৈকতের পুরো ঝাউবন সমুদ্রে বিলীনের আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

পর্যটকরা জানান, এখানে উপমহাদেশের সব চেয়ে বড় জোছনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসব ঘিরে হাজার হাজার  মানুষের সমাগম ঘটে। তা ছাড়া প্রতিদিন শতশত পর্যটক আসতো। সমুদ্রের মূল আকর্ষণ ছিল ঝাউবন। বিভিন্ন দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে বিলুপ্তির পথে ঝাউবন।

স্থানীয়রা ইউপি সদস্য  জানান, পর্যটকদের অবহেলা ও সমুদ্র থেকে বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাগর পাড়ের উদ্ভিদ ও সাগরের জীব বৈচিত্র্য। সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাউবন সংরক্ষণের দায়িত্ব না নিলে উপকূলীয় এলাকা ও সৈকত বিপন্ন হতে পারে।

যশোর থেকে আসা পর্যটক শরীফ জানান, সৈকতটি দেখতে খুবই মনমুগ্ধ এখানে এসে আমার খুবই ভালো লেগেছিল। তবে সৈকতে সারি সারি ঝাউগাছ পড়ে আছে। যেটা দেখতে আমাদের মোটেও ভালো লাগেনি। দেখে মনে হয়েছে এটি একটি ধ্বংসস্তূপ।

ঝাউবন ও সৈকত এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বলেন, ৮ বছর আগে এখান থেকে প্রায় আরো ১ কিলোমিটার ঝাউবন ছিল পর্যটকরা হেঁটে সৈকতের ঢেউ উপভোগ করতে যেত। এখানে বিশাল ঝাউবন ছিল। কিন্তু এখন ভাঙতে ভাঙতে সমুদ্র বলতে গেলে একেবারে বেড়িবাঁধের কাছে চলে এসেছে।

তালতলী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, ভাঙন প্রতিরোধের জন্য উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে  সি আইপি-২ প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া আছে, এটি বাস্তবায়িত হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে। আশা করছি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

বিলীনের পথে 'শুভ সন্ধ্যা'

সমুদ্র সৈকত এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

আপডেট সময় ০৮:০১:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বিস্তীর্ণ জলরাশি শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত। বাতাসের ঝিরিঝিরি শব্দে দোল খায় সবুজ ঝাউবন। বালুময় দীর্ঘ সৈকত আর ঝাউবনের সবুজ সমীকরণের এ দৃশ্যটি যেন প্রাকৃতি প্রেমের একটি উদাহরণ।

উপকূলীয় জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলায় অবস্থিত এই শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারণে বিলুপ্তির পথে শুভ সন্ধ্যার সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ৮ বছর আগেও যেখানে হাজার হাজার ঝাউবন দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে নামে মাত্র কিছু গাছের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। যা আছে তাও বিলুপ্তির পথে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪/১৫ সালে সৈকতের ১০ হেক্টর ও ২০২০/২১ সালে ০৭ হেক্টর জমিতে তারা ঝাউ গাছের চারা রোপন করেছেন। এতে সৈকতে সবুজ বেষ্টনী তৈরী হয়। সবুজের সমারোহে সৈকতে এক মনোরম দৃশ্য ফুটে ওঠে। কিন্তু ২০১৮/১৯ সাল থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় শুরু হয় বালুক্ষয়। আর এ অব্যাহত বালুক্ষয়ে ভাঙতে শুরু করে ঝাউবন। এখন নামে মাত্র কিছু ঝাউগাছ আছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের গাফিলতি, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির‌ অব্যবস্থাপনা, সৈকত থেকে বিভিন্ন সময়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ঝাউবন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে সৈকতে ঝাউ গাছের অস্তিত্বই থাকবে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যে ঝাউ গাছ গুলোকে কেন্দ্র করে এই সৈকত গড়ে  উঠেছে সেই গাছগুলোই অস্তিত্ব বিলীনের পথে। সমুদ্রের অস্বাভাবিক ঢেউয়ের কারণে অধিকাংশ ঝাউগাছের শিকর থেকে মাটি সরে গিয়ে হেলে পড়ছে। এতে সৈকত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে না পরলে আগামী এক বছরের মধ্যে সৈকতের পুরো ঝাউবন সমুদ্রে বিলীনের আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

পর্যটকরা জানান, এখানে উপমহাদেশের সব চেয়ে বড় জোছনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসব ঘিরে হাজার হাজার  মানুষের সমাগম ঘটে। তা ছাড়া প্রতিদিন শতশত পর্যটক আসতো। সমুদ্রের মূল আকর্ষণ ছিল ঝাউবন। বিভিন্ন দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে বিলুপ্তির পথে ঝাউবন।

স্থানীয়রা ইউপি সদস্য  জানান, পর্যটকদের অবহেলা ও সমুদ্র থেকে বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাগর পাড়ের উদ্ভিদ ও সাগরের জীব বৈচিত্র্য। সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাউবন সংরক্ষণের দায়িত্ব না নিলে উপকূলীয় এলাকা ও সৈকত বিপন্ন হতে পারে।

যশোর থেকে আসা পর্যটক শরীফ জানান, সৈকতটি দেখতে খুবই মনমুগ্ধ এখানে এসে আমার খুবই ভালো লেগেছিল। তবে সৈকতে সারি সারি ঝাউগাছ পড়ে আছে। যেটা দেখতে আমাদের মোটেও ভালো লাগেনি। দেখে মনে হয়েছে এটি একটি ধ্বংসস্তূপ।

ঝাউবন ও সৈকত এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বলেন, ৮ বছর আগে এখান থেকে প্রায় আরো ১ কিলোমিটার ঝাউবন ছিল পর্যটকরা হেঁটে সৈকতের ঢেউ উপভোগ করতে যেত। এখানে বিশাল ঝাউবন ছিল। কিন্তু এখন ভাঙতে ভাঙতে সমুদ্র বলতে গেলে একেবারে বেড়িবাঁধের কাছে চলে এসেছে।

তালতলী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, ভাঙন প্রতিরোধের জন্য উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে  সি আইপি-২ প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া আছে, এটি বাস্তবায়িত হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে। আশা করছি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।