নিজস্ব মেধা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার মাধবদীর তরুণ উদ্ভাবক রাফি হোসাইন। প্রতিযোগিতার এই যুগে তিনি ও তার দল মিসাইল সিস্টেমযুক্ত একটি আধুনিক মিলিটারি ড্রোন উদ্ভাবন করে ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করেছেন।
এর আগে ২০২৩ সালে এআই এক্সিডেন্ট প্রিভেনশন সিস্টেম এবং ২০২৪ সালে জায়ান্ট মাল্টিপারপাস ড্রোন উদ্ভাবন করে রাফি জাতীয় পর্যায়ে প্রথমস্থান অধিকার করেন। এবারের মেলায় প্রদর্শিত মিসাইল সিস্টেম মিলিটারি ড্রোন’টি দুই ডানায় দুটি মিসাইল বহন করতে সক্ষম এবং প্রায় ৪০ হাজার মিটার রেঞ্জে সার্ভিল্যান্স ও টার্গেটেড অ্যাটাক পরিচালনা করতে পারে বলে দাবি করেন রাফি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ড্রোনটি পরিদর্শন করেন সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক, এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মুনীরা সুলতানাসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁরা উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করেন এবং তাদের উদ্ভাবনকে দেশের প্রযুক্তিখাতে বড় সম্ভাবনা হিসেবে উল্লেখ করেন। রাফি বর্তমানে গ্রীন ইউনিভার্সিটিতে ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত।
একই সঙ্গে তিনি নরসিংদী সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ল্যাব এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি গভীর আগ্রহ ও গবেষণামূলক মনোভাব তাকে একের পর এক সফল উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে নিয়েছে। তার অন্যতম উদ্ভাবনের তালিকায় রয়েছে: ভূমিকম্পে আগাম সতর্কীকরণ যন্ত্র সার্ভিল্যান্স ড্রোন ফায়ার ফাইটিং ড্রোন,রোবটিক্স আর্ম রোবটিক স্পাইডার,জেট ইঞ্জিন,আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাক্সিডেন্ট প্রিভেনশন সিস্টেম
মিসাইল সিস্টেম ড্রোন রাফির গবেষণা প্রতিষ্ঠান নরসিংদী সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ল্যাব ইতোমধ্যে জেলা, বিভাগীয় এবং উপজেলা পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছে। তার টিম মেম্বার সানজিম আন্তর্জাতিকভাবে নাসা’র কনরাড চ্যালেঞ্জ এবং মালয়েশিয়ার প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
রাফি বলেন, সরকারি সহায়তা পেলে আমাদের এই ড্রোন আরও আধুনিক করা সম্ভব এবং এটি স্বল্প খরচে তৈরি করে সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করা যেতে পারে। বর্তমানে যেখানে বিদেশ থেকে ড্রোন কিনতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়, সেখানে আমাদের উদ্ভাবিত ড্রোন মাত্র ১০ লাখ টাকায় তৈরি করা সম্ভব। তিনি জানান, ড্রোনটির কাঠামো, ফেব্রিকেশন, প্রোগ্রামিং সবই তাদের নিজস্ব তৈরি হওয়ায় খরচ অনেক কমেছে।
দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অবদান রাখতে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সহায়তা কামনা করেছেন। নেটিজেনদের অনেকে মনে করছেন, এই উদ্ভাবন শুধু একটি প্রযুক্তির গৌরব নয়, বরং দেশের আত্মনির্ভরশীলতার পথেও এক সাহসী পদক্ষেপ। তাঁরা রাফি ও তার দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
এএস