সম্প্রতি কুমিল্লা মুরাদনগরে এক নারী ধর্ষণের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এতে করে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য: প্রতিনিয়ত নারীরা ধর্ষন আর যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, এমনকি কর্মক্ষেত্রে ও সাধীন ভাবে কাজ করতে পারছে না। এমন কি জনসম্মুখে নারীকে ছাড় দিচ্ছে না। অন্যদিকে অনলাইনে নারীরা প্রায়শই যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সাধারন মানুষ এসব ঘটনার বিচার ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মার্চ ২০২৫ সালের পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী: সারা দেশে বর্তমানে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলার বিপরীতে ১০১টি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় যে, বিপুল সংখ্যক মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী: ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১,৪৪০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে (২৮ দিনে) প্রতিদিন গড়ে ১২টি করে ধর্ষণের মামলা হয়েছে। প্রকাশিত পরিসংখ্যান প্রায়শই প্রকৃত চিত্রের চেয়ে কম হয়, কারণ অনেক ধর্ষণের ঘটনাই সামাজিক কলঙ্ক বা আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতার।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া: ক্ষমতা বিস্তার ও ক্ষোভ থেকে নারীকে ব্যবহার করে এসব ধর্ষনের ঘটনা বাড়ছে, নারী ধর্ষণের ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, এতে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দিয়েছে।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ: ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা ধর্ষণের সুষ্ঠু তদন্ত, দ্রুত বিচার এবং অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায়। স্বরাষ্ট্র সচিবের পদত্যাগও দাবি করা হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য।
নিরাপত্তাহীনতা ও ভীতি: নারীরা দিনে বা রাতে একা হাঁটার ক্ষেত্রেও নিজেদের অনিরাপদ মনে করে। কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি ঘরেও নারীর প্রতি সহিংসতা ও হেনস্থার ঘটনা তাদের ভয় বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা: অনেক সময় ভুক্তভোগীরা সামাজিক অসম্মান বা আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতার ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করতে চায় না। এতে প্রকৃত সংখ্যা কম দেখা যায় এবং ধর্ষকদের দায়মুক্তি অব্যাহত থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা এবং আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় ধর্ষকদের উৎসাহিত করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। যদিও অনেক সময় গুজব বা পুরোনো খবরও ছড়িয়ে পড়ে, যা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগ: সাধারণ মানুষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা সরকারের কাছে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানায়।
কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য:
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ১ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ১৭টি এবং ধর্ষণের অভিযোগে ২১৬টি মামলা হয়েছে।
=মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪ হাজার ৭৮৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
=ন্যাশনাল গার্ল চাইল্ড অ্যাডভোকেসি ফোরামের ২০২৪ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকটের মধ্যে মিডিয়া কভারেজে নারী, কন্যা এবং সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠীর দুরবস্থা ঢাকা পড়ে গেছে।
=বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকাশিত পরিসংখ্যান প্রকৃত অবস্থার চিত্র নয়, কারণ অনেক ধর্ষণের ঘটনাই নথিভুক্ত হয় না।
এএস/