তালতলী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল গত জানুয়ারিতে।লক্ষ্য ছিল তিন মাসের মধ্যে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে তৃণমূল পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রম গতিশীল করা।কিন্তু প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সে কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি নেই।
এখন পর্যন্ত কোন ওয়ার্ড কিংবা ইউনিয়নের সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।বেশির ভাগ ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় দলীয় শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে।উপজেলার নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন,ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে, এই সময়ে সম্মেলন আয়োজন বেশ কঠিন। ফলে আগামী শুষ্ক মৌসুমের আগে এসব সম্মেলন সম্পন্ন করা যাবে কি না,তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
অন্যদিকে বরগুনা জেলা ও তালতলী উপজেলা বিএনপির মধ্যে কমিটি নিয়ে নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সম্মেলন আয়োজন নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৩ জানুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বরিশাল বিভাগের আটটি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।পৃথক দুটি চিঠিতে এসব কমিটির অনুমোদন দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান।এ লক্ষ্যে পাঁচজন তরুণ কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়ে জেলায় জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়।তাঁদের তিন মাসের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন সম্পন্ন করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
বরগুনার দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুকে।
দলীয় সূত্র জানায়,নেতারা দায়িত্ব পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট উপজেলায় ও ইউনিয়নে একাধিক সভা-সমাবেশ করলেও কোনো ইউনিটেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি।এমনকি প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমও চোখে পড়ার মতো নয়।এতে তৃণমূল পর্যায়ে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
ইউনিয়নের অন্তত সাতজন সাবেক নেতা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন,গত দেড় দশকে বিএনপি নানা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।প্রতিকূল পরিবেশে সাংগঠনিক দুর্বলতাও প্রকট হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়নে দলের নেতা কর্মীরা রাজপথে দাঁড়াতে পারেননি। মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে তাঁরা পরিবার ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন।গত বছরের ৫ আগস্টের পর নতুন বাস্তবতায় বিএনপির নেতা কর্মীরা আবার সক্রিয় হয়েছেন।তবে কমিটি না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছেন তাঁরা।উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর কোথাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় চেইন অব কমান্ড কার্যকর হচ্ছে না।
তালতলী উপজেলার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুল আলম মামুন ও তরুন বিএনপি নেতা আতিকুর রহমান অসিম বলেন,বরগুনা জেলা বিএনপির কমিটি না-থাকার কারণে তালতলী উপজেলা সহ সকল ইউনিটের কমিটি নেই এবং দলীয় কর্মীরা নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চলছে। আমরা আসা করি খুব দ্রুত জেলা কমিটি ও উপজেলা সহ সকল ইউনিটের কমিটি হলেই কর্মীরা নিয়ন্ত্রিত হবে ও আস্থার যায়গায় ফিরে আসবেন।
সাবেক সদস্য সচিব মিয়া মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন,কেন্দ্রীয় দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা তিনি খুব চেষ্টা করে যাচ্ছেন।কিন্তু বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে যারা রাজপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছি আজ তারা নিপিড়ীত,নিষ্পেশিত কিছু চাদাবাজ ও অনুপ্রবেশকারীদের কারনে। আশা করি জেলা এবং কেন্দ্রীয় নেতারা তা বিবেচনা করেই তৃনমূলের কমিটি করবেন।মিয়া রিয়াজুল ইসলাম ও যুগ্ম আহবায়ক শামিম মিয়ার নেতৃত্বে দল এখনো সংগঠিত আছে এবং তারা তৃনমূলে কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ শহিদুল হককে মুঠোফোনে কল দিলেও সে ফোন রিসিভ করেনি।
বরগুনা জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কাজী রওনাকুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন,আমরা উপজেলায় ইতিমধ্যে সভা করেছি।আশা করি,জুলাইয়ের মাসের মধ্যে উপজেলা,ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করতে পারব।রমজান,ঈদসহ নানা দলীয় কর্মসূচির কারণে সময়মতো সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির এই নেতা।
এএস/