বিগত সরকারের আমলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য গৃহিত প্রকল্প বাস্তবায়নে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সেসব দুর্নীতির তদন্ত করতে মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হলেও আলোর মুখ দেখছে না সেই তদন্ত। কমিটি গঠনের ৭ মাস চলমান হলেও এখনো কোন মিটিং করতে পারেনি তদন্ত কমিটি।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে নানা সমালোচনা। নিছক ব্যস্ততা নাকি দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে কেউ কলকাঠি নাড়ছেন তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। দুর্নীতির সাথে জড়িতরা নানাভাবে তদবীর করছে বলেও বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অধিশাখা-২ এর উপসচিব এবং তদন্ত কমিটির সদস্য মো. নাজমুল আলম কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ ওঠেছে, টানা ১৬ বছর সরকার পরিচালনা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সেময়ে সরকারের ঘনিষ্ঠ হতে যে যেভাবে পারছে সেভাবেই তদবীর করছে। সেই তদবীর করতে গিয়ে অনৈতিকভাবে আয় করেছে বিপুল অর্থ আর সেই অর্থ দিয়ে কেনা হয়েছে পদ-পদবী। সিডিএ’র ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব বিষয় নিয়ে সিডিএ এর প্রধান প্রকৌশলী, বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৫ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কশিনে (দুদক) মামলা চলমান আছে। মামলা থাকার কারনে তাদের প্রমোশন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘনি, ফলে তারা অবসরে যাওয়ার সময় কোন আর্থিক সুবিধা না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
এসব জটিলতা কাটাতে ও দুর্নীতিবাজদের চিহ্নত করতে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কমিটির কার্যক্রম সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৩ এপ্রিল সেই কমিটি পূণর্গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে আহবায়ক করা হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগ-১ এর অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিনকে আর সদস্যসচিব করা হয়েছে চট্টগ্রাম উন্ননয় কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সচিব রবীন্দ্র চাকমাকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের মনিটরিং এন্ড অডিট সার্কেল ঢাকার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইদ মাহবুব মোরশেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অধিশাখা-২ এর উপসচিব মো. নাজমুল আলম, সিডিএর বোর্ড সদস্য স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসাইন ও সৈয়দ কুদরত আলী। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো. নুরুল আমিন এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
চট্টগ্রাম উন্ননয় কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব রবীন্দ্র চাকমার সাথে দেখা করতে চাইলে ব্যস্ততার অযুহাতে তিনি দেখা করেননি।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগ-১ এর অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিন অসুস্থ ও চিকিৎসাধীন আছেন বিধায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে কমিটির সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অধিশাখা-২ এর উপসচিব মো. নাজমুল আলম বলেন, পূর্বের কমিটি বাদ দিয়ে নতুনভাবে কমিটি পূণর্গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহবায়ক অসুস্থ থাকায় আমরা এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি, মিটিং করতে পারিনি।
অনিয়মের লাগাম টেনে ধরতে আগের দুর্নীতির বিচার জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটা হবে একটা রেফারেন্স, উপযুক্ত বিচার করতে পারলে অপরাধ কমবে আর করতে না পারলে অনিয়মের মাত্রা আরো বাড়বে।
এএস/