লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানা থেকে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় থানায় হামলা-ভাঙচুরের সময় হাতীবান্ধা থানায় পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
এ জন্য সরকারি কাজে বাধা, অবরোধ ও হুমকির অভিযোগে হাতিবান্ধা থানায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে হাতীবান্ধা থানার এএসআই শাহেদুল ইসলাম বাদী হয়ে করা এই মামলায় আরও অজ্ঞাতনামা শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, বুধবার রাতে পাটগ্রাম থানায় সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের সময় পাশের হাতীবান্ধা থানা থেকে পুলিশ যাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে না পারে, সে জন্য বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা থানার ফটকে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।
সে সময় সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-বি) জয়ন্ত কুমার সেন ও হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন-নবী তিনটি গাড়ি নিয়ে উদ্ধার অভিযানে বের হয়েছিলেন।
তবে রাত সাড়ে ১১টার দিকে থানার ফটকের সামনে পৌঁছালে সেখানে ৭০-৮০টি মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়। অন্তত ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখা হয় পুলিশ সদস্যদের।
হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন-নবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা আমাদের যেতে দেবে না বলে হুমকি দেয়। গালাগাল করে, ধাক্কাধাক্কিও করেছে।
এ ঘটনায় করা মামলায় হাতীবান্ধা উপজেলা যুবদল সভাপতি ইউনুস আলী খন্দকার, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহ নুরন্নবী কাজল, ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল ইসলাম, কৃষক দলের আহ্বায়ক আমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।
পাটগ্রাম থানায় হামলা, ছিনিয়ে নেওয়া হল দুই আসামিকে তবে বিএনপি নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহ নুরন্নবী বলেন, “আমরা কোনো বাধা দিইনি। একটি মামলার বিষয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। উনি দুর্ব্যবহার করায় সেখানে কিছু বাকবিতণ্ডা হয়, কিন্তু পুলিশকে আটকে রাখার মতো কিছু ঘটেনি।”
এদিকে শুক্রবার পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান রাজীব প্রধান অভিযোগ করে বলেন, “পাথর ইজারাদারের দুই কর্মীকে পুলিশ অন্যায়ভাবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। এর প্রতিবাদে কিছু উত্তেজনা তৈরি হলেও বিএনপি কোনো হামলা বা সহিংসতায় জড়িত নয়।”
তিনি দাবি করেন, পাটগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পাথর উত্তোলন করে আসছে। বৈধ ইজারাদারদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
এদিকে পাটগ্রাম থানায় হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া পৃথক মামলায় পুলিশ শুক্রবার পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন হাবিবুল, মাইদুল, রফিক ও আবু কালাম। শুক্রবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “দুই থানায় হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা এবং আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণসহ তদন্ত কার্যক্রম চলছে।”
এপিবিএনের শতাধিক সদস্য বর্তমানে মাঠে রয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
এএস/