ঢাকা , সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন চাপের সুযোগ নিতে পারে চীন

  • ডেসটিনি ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:৫২:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৩
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনা সরকারের ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করছে। এতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে পারে। আর এর সুযোগ নিতে পারে চীন। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট করেছে ভারত।

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে- আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে বাড়তি চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশে চরমপন্থী শক্তি আরও শক্তিশালী হতে পারে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নয়াদিল্লি বিশ্বাস করে যে- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ইস্যুতে মার্কিন চাপ বাংলাদেশকে চীনের কাছাকাছি ঠেলে দিতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র বলছে, ভারতীয় পক্ষ সম্প্রতি বেশ কয়েক দফা আলাপ-আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা আরও জানায়, নয়াদিল্লি আরও বিশ্বাস করে যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ইস্যুতে মার্কিন চাপ বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এইপরিস্থিতি এই অঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারতীয় পক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে, তারাও বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া চায়। তারা মার্কিন নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছে, এই বিষয়ে খুব বেশি চাপ দিলে তা শুধুমাত্র চরমপন্থী ও মৌলবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করবে, শেখ হাসিনা সরকার যাদেরকে সফলভাবে দমিয়ে রেখেছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের আধা-সামরিক বাহিনী র‌্যাব ও এর বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়াও বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ উঠবে তাদের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের মে মাসে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন চাপের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে চীন। ভারতের এ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। ২৩ আগস্ট জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের এক ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের মন্তব্যের পরে ভারতের উদ্বেগ বেশ মাথাচারা দিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, শি হাসিনাকে বলেছেন যে চীন “বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতায়” বাংলাদেশকে সমর্থন করে এবং বেইজিং তাদের মূল স্বার্থে একে অপরকে সমর্থন করার জন্য ঢাকার সাথে কাজ করবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে আরও বলেছে, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক “পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার” ভিত্তিতে চলে।

প্রতিবেশী অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন হিসাবে দেখা হয় শেখ হাসিনাকে। তার শাসনামলে ভারত-বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে দমন করার পাশাপাশি, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে পণ্য পরিবহনের জন্য মূল বন্দরগুলি ব্যবহারের সুযোগসহ শক্তি এবং বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের সাথে সংযোগ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ।

একটি সূত্র বলেছে, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে হাসিনার সরকারের উপর চাপের ফলে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একের পর এক বড় সমাবেশ করছে। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসন জিতেছিল। বিএনপি এবারের আসন্ন নির্বাচনে কয়েক ডজন আসন জিতবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত-ই-ইসলাম সবসময় ভারত বিরোধী এবং পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। গত ১০ জুন ঢাকায় ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশাল সমাবেশ করে জামায়াত। জামায়াতের এই পুনরুজ্জীবন নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগের।

ভারতীয় পক্ষ এও বিশ্বাস করে, জামায়াতের শক্তিশালীকরণ চরমপন্থীদের উত্সাহিত করতে পারে এবং ভারতের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশের সাথে এ রাজ্যগুলোর সীমান্ত রয়েছে।

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে এই মাসের শুরুতে নয়াদিল্লি সফরকারী হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বিজেপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ইউনিয়নমন্ত্রী সহ বেশ কয়েকজন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন চাপের সুযোগ নিতে পারে চীন

আপডেট সময় ০১:৫২:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৩

বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনা সরকারের ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করছে। এতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে পারে। আর এর সুযোগ নিতে পারে চীন। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট করেছে ভারত।

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে- আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে বাড়তি চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশে চরমপন্থী শক্তি আরও শক্তিশালী হতে পারে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নয়াদিল্লি বিশ্বাস করে যে- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ইস্যুতে মার্কিন চাপ বাংলাদেশকে চীনের কাছাকাছি ঠেলে দিতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র বলছে, ভারতীয় পক্ষ সম্প্রতি বেশ কয়েক দফা আলাপ-আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা আরও জানায়, নয়াদিল্লি আরও বিশ্বাস করে যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ইস্যুতে মার্কিন চাপ বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এইপরিস্থিতি এই অঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারতীয় পক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে, তারাও বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া চায়। তারা মার্কিন নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছে, এই বিষয়ে খুব বেশি চাপ দিলে তা শুধুমাত্র চরমপন্থী ও মৌলবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করবে, শেখ হাসিনা সরকার যাদেরকে সফলভাবে দমিয়ে রেখেছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের আধা-সামরিক বাহিনী র‌্যাব ও এর বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়াও বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ উঠবে তাদের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের মে মাসে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন চাপের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে চীন। ভারতের এ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। ২৩ আগস্ট জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের এক ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের মন্তব্যের পরে ভারতের উদ্বেগ বেশ মাথাচারা দিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, শি হাসিনাকে বলেছেন যে চীন “বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতায়” বাংলাদেশকে সমর্থন করে এবং বেইজিং তাদের মূল স্বার্থে একে অপরকে সমর্থন করার জন্য ঢাকার সাথে কাজ করবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে আরও বলেছে, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক “পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার” ভিত্তিতে চলে।

প্রতিবেশী অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন হিসাবে দেখা হয় শেখ হাসিনাকে। তার শাসনামলে ভারত-বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে দমন করার পাশাপাশি, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে পণ্য পরিবহনের জন্য মূল বন্দরগুলি ব্যবহারের সুযোগসহ শক্তি এবং বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের সাথে সংযোগ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ।

একটি সূত্র বলেছে, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে হাসিনার সরকারের উপর চাপের ফলে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একের পর এক বড় সমাবেশ করছে। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসন জিতেছিল। বিএনপি এবারের আসন্ন নির্বাচনে কয়েক ডজন আসন জিতবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত-ই-ইসলাম সবসময় ভারত বিরোধী এবং পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। গত ১০ জুন ঢাকায় ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশাল সমাবেশ করে জামায়াত। জামায়াতের এই পুনরুজ্জীবন নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগের।

ভারতীয় পক্ষ এও বিশ্বাস করে, জামায়াতের শক্তিশালীকরণ চরমপন্থীদের উত্সাহিত করতে পারে এবং ভারতের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশের সাথে এ রাজ্যগুলোর সীমান্ত রয়েছে।

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে এই মাসের শুরুতে নয়াদিল্লি সফরকারী হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বিজেপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ইউনিয়নমন্ত্রী সহ বেশ কয়েকজন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।