টানা তিন দিনের ছুটিতে রাঙামাটির সাজেক, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় হয়েছে। এর মধ্যে সাজেকে রিসোর্ট-কটেজে রুম না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন পর্যটকরা। এ বিষয়ে প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট
সাজেক (রাঙামাটি)
টানা তিন দিনের সরকারি ছুটিতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকে পর্যটকের ভিড় জমেছে। ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি ও শুক্রবার-শনিবার সরকারি ছুটিতে বুকিং হয়ে গেছে শতভাগ রিসোর্ট ও কটেজ। যারা রুম পেয়েছেন তাদের অনেকেই এক মাস আগে রিসোর্ট ও কটেজ বুকিং দিয়েছেন।
এদিকে পর্যটকের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন খাবার হোটেল ও রিসোর্ট মালিকরা। রিসোর্ট ও কটেজে রুম না পাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেক পর্যটককে।
সাজেক কুড়েঘর রিসোর্টের ম্যানেজার জোথেন ত্রিপুরা জানান, সাজেকে বর্তমানে সব রিসোর্টে শতভাগ বুকিং রয়েছে। তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে।
সাজেকের রিসোর্ট ব্যবসায়ী মো. মামুন বলেন, সাজেকে বর্তমানে দেড় শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। প্রতিটি কটেজে কমপক্ষে ৪০ জন করে ট্যুরিস্ট রাত্রিযাপন করতে পারেন। এতে করে সাজেকে প্রায় ৬ হাজার ট্যুরিস্ট রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে এর চেয়ে বেশি পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব পর্যটক সাজেকে বেড়াতে আসেন তারা যদি সাজেকের রিসোর্ট বা কটেজে অগ্রিম বুকিং দিয়ে আসেন তাহলে কাউকে কষ্ট করতে হয় না।
কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার
টানা ছুটিতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত মৌলভীবাজার। জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার টিলাঘেরা সবুজ চা-বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে যেন পা ফেলার ঠাঁই নেই।
এদিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কাউন্টার থেকে জানা যায়, শুধু শুক্রবার কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৭১ হাজার টাকা। অন্যদিকে ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কমলগঞ্জ থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় টহল দিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে মাধবপুর লেক ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা মিলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার লোকজনের উপস্থিতি ছিল অন্য বছরের তুলনায় বেশি।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, অন্য সময়ের তুলনায় এবার বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটেছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
তিন দিনের ছুটি আর পর্যটন মেলাকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ভিড় জমিয়েছেন হাজারও পর্যটক। কুয়াকাটায় সব পর্যটকের আগমন ঘটে। পর্যটকরা সৈকতের বালিয়াড়িতে আনন্দ-উন্মাদনায় মেতেছেন। অনেকে আবার সমুদ্রের নোনা জলে গা ভাসাচ্ছেন। কেউবা আবার প্রিয়জনদের সঙ্গে তুলছেন সেলফি। কেউবা আবার সৈকতের বেঞ্চে বসে উপভোগ করছেন সাগরের গর্জন। মোটকথা সৈকতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বাড়তি পর্যটকদের ভিড়ে বিক্রি বেড়েছে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বুকিং রয়েছে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল। আগতদের সার্বিক নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
হোটেল-মোটেল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণত সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ জানান, একদিকে তিন দিনের ছুটি অন্যদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে বিগত দিনের চেয়ে অনেক পর্যটক বেড়েছে। অনেক পর্যটক আসছেন।
কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কানসাই হোটেলের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দীন বিপ্লব বলেন, আমার হোটেলে বিশটি রুম আজকে বুক হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের ওসি হাসনাইন পারভেজ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রস্তুত আছি।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পৌরসভা, উপজেলা প্রশাসন ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা মিলে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।