ঢাকা , সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে

বিশালাকৃতির বাঁওড় এখন রূপ নিয়েছে মরা খালে 

চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী সরকারি বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড় আজ ইতিহাস হতে চলেছে। অবৈধ দখল আর পলি জমায় বিশাল বাঁওড়টি এখন মরা খালের রূপ নিয়ে।
চৌগাছায় যে কয়টি বাঁওড় আছে তার মধ্যে অন্যতম বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়। উপজেলা সদর হতে দক্ষিণে ৩/৪ কিলোমিটার সড়ক গেলেই চোখে পড়বে বাঁওড়ের অস্তিত্ব। নানা কারণে বাঁওড়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে বাঁওড়ের জমি অবৈধ দখলদারদের গ্রাসে রয়েছে। কেউ বাঁওড়ের জমিতে বানিয়েছেন সুবিশাল পুকুর, কেউ বানিয়েছে হাঁস -মুরগির খামার। অন্যরা দখলে নিয়ে চাষ করছেন মাছ বা ফসল। মশ্মমপুর মোড় হতে বাঁওড়ের উৎপত্তি। ওই স্থান হতে বর্তমানে প্রায় দুই কিলোমিটারের বেশি স্থান হয়ে গেছে গোচারণ ভূমি। বছরের বেশির ভাগ সময় থাকে না পানি। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে যে যেমন ভাবে পেরেছে জমি দখলে মেতে উঠেছে। বাঁওড় পাড়ে যার জমি আছে তিনি আর একটু বাড়িয়ে বাঁওড়ের শুকিয়ে যাওয়া অংশ দখল করে নিয়েছেন।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে এক সময়ের বিশাল এ বাঁওড়টি। বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের প্রবেশ মুখে বাঁওড়ের ব্রিজের ওপর দাঁড়ালে দেখা যায়, পশ্চিমে উৎপত্তিস্থলে টিনের তৈরি ঘর, বাঁওড়ের বুকে চরে বেড়াচ্ছে গরু আর ছাগল। ব্রিজের পূর্বপাশেও একই দৃশ্য। বাঁওড় শুকিয়ে যেন মরুভূমি তৈরি হয়েছে।
কথা হয় বাঁওড়ের বুকে গরু চরাতে আসা ৭৫ বছর বয়সের বেড়গগোবিন্দপুর গ্রামের মৃত আবেদ আলী জমাদ্দারের ছেলে লাল চানের সাথে। তিনি স্মৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে যেন আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। এই বয়োবৃদ্ধ বলেন, বাঁওড়কে বাঁচান। বাঁচান মানুষ ও পরিবেশকে। এক সময়ের কাকচক্ষুর ন্যায় কালো পানির সুবিশাল বাঁওড় এখন গোচারণ ভূমি। দেখে খুব আফসোস লাগে। সরকারের সঠিক তদারকির অভাবে আজ এই করুণ পরিণতি।
তিনি বলেন, ছোট বেলাতে দেখেছি এই ব্রিজের স্থানে খেয়া পারপার হতো। দুই পাশেই অঢেল পানি। পানির দিকে তাকালে ভয় পেতাম। বছরের বার মাসই হরেক রকমের মাছের সমারোহ ছিল। আর বর্ষা মৌসুম এলে মাছে একাকার হতো। এ সবই আজ অতীত। বেড়গোবিন্দপুর জেলে পল্লীর বাসিন্দা তপন হালদার, কৃষ্ণ হালদার, অধির হালদার, আনন্দ হালদার, রতন হালদারসহ একাধিক জেলে বলেন, এই বাঁওড় ছিল আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্টে গেছে সবকিছু। বাঁওড় এখন ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেছে। ইচ্ছা করলেই যখন তখন বাঁওড়ে নামা সম্ভব হয় না। আর বাঁওড়ের বেশির ভাগই শুকিয়ে মরে গেছে।
বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ের মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী বলেন, বাঁওড়ে পলি জমে সংকুচিত হয়ে গেছে। পানি থাকে না। বর্তমান তাপে মাছ মারা যাচ্ছে। খনন করলে বাঁওড়ে পানি থাকবে।
চৌগাছা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মৎস্য চাষি আবুল কাশেম বলেন, কাগজে কলমে বাঁওড়ের জলকার হচ্ছে ৫৫৮ একর। কিন্তু বাস্তবে জলকার ১শ একর আছে বলে মনে হয় না। নানা কারণে বাঁওড় তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
বাঁওড় ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সরকার বাঁওড়টি ব্যক্তি মালিকানায় ইজারা দিয়েছে। তারাই এখন দেখাশুনা করছেন। বাঁওড়ে আগের মত পানি না থাকায় মাছ চাষে এর প্রভাব পড়ছে।

অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে

বিশালাকৃতির বাঁওড় এখন রূপ নিয়েছে মরা খালে 

আপডেট সময় ০৫:১৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মে ২০২৪
চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী সরকারি বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড় আজ ইতিহাস হতে চলেছে। অবৈধ দখল আর পলি জমায় বিশাল বাঁওড়টি এখন মরা খালের রূপ নিয়ে।
চৌগাছায় যে কয়টি বাঁওড় আছে তার মধ্যে অন্যতম বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়। উপজেলা সদর হতে দক্ষিণে ৩/৪ কিলোমিটার সড়ক গেলেই চোখে পড়বে বাঁওড়ের অস্তিত্ব। নানা কারণে বাঁওড়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে বাঁওড়ের জমি অবৈধ দখলদারদের গ্রাসে রয়েছে। কেউ বাঁওড়ের জমিতে বানিয়েছেন সুবিশাল পুকুর, কেউ বানিয়েছে হাঁস -মুরগির খামার। অন্যরা দখলে নিয়ে চাষ করছেন মাছ বা ফসল। মশ্মমপুর মোড় হতে বাঁওড়ের উৎপত্তি। ওই স্থান হতে বর্তমানে প্রায় দুই কিলোমিটারের বেশি স্থান হয়ে গেছে গোচারণ ভূমি। বছরের বেশির ভাগ সময় থাকে না পানি। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে যে যেমন ভাবে পেরেছে জমি দখলে মেতে উঠেছে। বাঁওড় পাড়ে যার জমি আছে তিনি আর একটু বাড়িয়ে বাঁওড়ের শুকিয়ে যাওয়া অংশ দখল করে নিয়েছেন।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে এক সময়ের বিশাল এ বাঁওড়টি। বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের প্রবেশ মুখে বাঁওড়ের ব্রিজের ওপর দাঁড়ালে দেখা যায়, পশ্চিমে উৎপত্তিস্থলে টিনের তৈরি ঘর, বাঁওড়ের বুকে চরে বেড়াচ্ছে গরু আর ছাগল। ব্রিজের পূর্বপাশেও একই দৃশ্য। বাঁওড় শুকিয়ে যেন মরুভূমি তৈরি হয়েছে।
কথা হয় বাঁওড়ের বুকে গরু চরাতে আসা ৭৫ বছর বয়সের বেড়গগোবিন্দপুর গ্রামের মৃত আবেদ আলী জমাদ্দারের ছেলে লাল চানের সাথে। তিনি স্মৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে যেন আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। এই বয়োবৃদ্ধ বলেন, বাঁওড়কে বাঁচান। বাঁচান মানুষ ও পরিবেশকে। এক সময়ের কাকচক্ষুর ন্যায় কালো পানির সুবিশাল বাঁওড় এখন গোচারণ ভূমি। দেখে খুব আফসোস লাগে। সরকারের সঠিক তদারকির অভাবে আজ এই করুণ পরিণতি।
তিনি বলেন, ছোট বেলাতে দেখেছি এই ব্রিজের স্থানে খেয়া পারপার হতো। দুই পাশেই অঢেল পানি। পানির দিকে তাকালে ভয় পেতাম। বছরের বার মাসই হরেক রকমের মাছের সমারোহ ছিল। আর বর্ষা মৌসুম এলে মাছে একাকার হতো। এ সবই আজ অতীত। বেড়গোবিন্দপুর জেলে পল্লীর বাসিন্দা তপন হালদার, কৃষ্ণ হালদার, অধির হালদার, আনন্দ হালদার, রতন হালদারসহ একাধিক জেলে বলেন, এই বাঁওড় ছিল আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্টে গেছে সবকিছু। বাঁওড় এখন ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেছে। ইচ্ছা করলেই যখন তখন বাঁওড়ে নামা সম্ভব হয় না। আর বাঁওড়ের বেশির ভাগই শুকিয়ে মরে গেছে।
বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ের মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী বলেন, বাঁওড়ে পলি জমে সংকুচিত হয়ে গেছে। পানি থাকে না। বর্তমান তাপে মাছ মারা যাচ্ছে। খনন করলে বাঁওড়ে পানি থাকবে।
চৌগাছা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মৎস্য চাষি আবুল কাশেম বলেন, কাগজে কলমে বাঁওড়ের জলকার হচ্ছে ৫৫৮ একর। কিন্তু বাস্তবে জলকার ১শ একর আছে বলে মনে হয় না। নানা কারণে বাঁওড় তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
বাঁওড় ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সরকার বাঁওড়টি ব্যক্তি মালিকানায় ইজারা দিয়েছে। তারাই এখন দেখাশুনা করছেন। বাঁওড়ে আগের মত পানি না থাকায় মাছ চাষে এর প্রভাব পড়ছে।