ঢাকা , সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুন্সীগঞ্জে দুই হাজার মিনি গার্মেন্টসে ৩০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট

পোশাক তৈরির গ্রাম মুন্সীগঞ্জের সিপাহিপাড়ায় ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে মিনি গার্মেন্টস। এখানে রয়েছে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি পোশাক তৈরির ক্ষুদ্র কারখানা। এ বছর রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে ৩০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট এই পল্লিতে। পোশাক তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সেখানকার কারিগররা। রাজধানীর বড় বড় বিপণিবিতানে সরবরাহ করা হচ্ছে এখানকার তৈরি পোশাক।

ছোট ছোট ঘরেই সব হচ্ছে। রং-বেরঙের পোশাক তৈরি হচ্ছে রাতদিন। ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক সব প্রযুক্তি। কম্পিউটারাইজড অ্যামব্রয়ডারি মেশিন ব্যবহার করে চমৎকার সব ডিজাইন করা হচ্ছে। এরপর কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে পোশাক। কাপড় কাটা, সেলাই, ডিজাইন এবং প্যাকিংয়ের পর নামকরা বিপণিবিতানগুলোতে বাজারজাত করা হয়। অনেক পাইকার সরাসরি রেডিমেড পোশাক কেনার জন্যও এখানে আসেন। ঈদ ঘিরে এখানকার গার্মেন্টসগুলোতে এবারের ঈদে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট।

গার্মেন্টস মালিক সেলিম বেপারী বলেন, এখানে তৈরি পোশাকের হাটের ব্যবস্থা হলে এলাকার অর্থনীতি আরও সচল হবে। ঈদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার দুই সহস্রাধিক খুদে কলকারখানায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। রেডিমেড পোশাকপল্লী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে এলাকাটি। উন্নতমানের কাপড় দিয়ে নানা রঙ ও ডিজাইনের পোশাক তৈরি হচ্ছে এখানে। ঢাকার অদূরে রামপাল ইউনিয়নের সিপাহিপাড়াসহ কাঁঠালতলা, শাখারি বাজার, চৌগাড়ারপাড়, দালালপাড়া, সুখবাসপুর ও পঞ্চসার ইউনিয়নের তেলেরবিল, রামেরগাঁও, ভট্টাচার্যেরবাগ ও দেওয়ান বাজার এবং মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার গোয়ালঘুন্নী, দর্গাহবাড়ি, গ্রামে গড়ে উঠেছে এসব মিনি গার্মেন্টস।

এখানকার তৈরি পোশাক ঢাকার সদরঘাট, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বড় বড় পাইকারি মার্কেট হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপণিবিতানগুলোতে।

ভারত থেকে কিছু স্যাম্পল এনে কাটিং করে সেগুলো তৈরি করা হয়। অর্ডার নেওয়ার সময় প্রায় শেষের দিকে। ২৭ রোজা পর্যন্ত চলবে ঈদের এই কর্মব্যস্ততা। নায়রা, পার্টি জর্জেট, আলেয়া, বাদুর—এসব বাহারি পোশাকের চাহিদা বেশি। তিন-চার মাস ধরে পাইকাররা এসে এসব পোশাকের অর্ডার দেয়। এসব মালামালের জন্য পাইকার আসেন যশোর, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা থেকে। এসব পোশাকের এত চাহিদা যে, অনেক পাইকার এসে ফেরত গেছেন। ঢাকা থেকে কাপড় এনে বাহারি এসব পোশাক তৈরি করে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় নিয়ে পাইকারি দামে বিক্রি করেন অনেকে।

কারিগর শরিফ হোসেন জানান, রাজধানী ঢাকা থেকে কাপড় এনে পোশাক তৈরি করে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় নিয়ে পাইকারি দামে বিক্রি করছি। আর সেখান থেকে অনেক পাইকার নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়।

অপর শ্রমিক আরিফ হোসেন বলেন, আমি এই এলাকার তৈরি পোশাক ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশনের কাজ করি। প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কাজ করতে পারি। এ পেশায় পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন ভালো আছি।

শেখ ব্রাদার্স এর মালিক মো. দুলাল হোসেন বলেন, সুতি জর্জেট সব ধরনের মাল এখানে আমরা সেলাই করি। জর্জেট সুতি দুইটা মালই এ বছর ভালো চলতেছে। তবে এ বছর মালের দামটা একটু বেশি। কাপড়ের দাম বেশি হওয়াতে মালের দাম বেশি পড়তেছে। বাধ্য হয়ে আমরা বেশি দামে বিক্রি করতেছি। আমরা মালগুলো ঢাকা নারায়ণগঞ্জে বিক্রি করি। ওখান থেকে সারা বাংলাদেশের খুচরা পাইকাররা এসে নিয়ে যায়। আমরা হোলসেল বিক্রি করি সারা বাংলাদেশে আমাদের মালটা যায়।

গার্মেন্টস মালিক আশরাফ আলী জানান, রোজায় কাজের চাপ বেশি। দিনে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। পোশাককে বর্ণিল করতে কারিগররা নিপুণ হাতে যুক্ত করছেন রঙ-বেরঙের লেইস ও পুঁতি। কাপড় কাটা, সেলাই, ডিজাইন নিয়ে এখন দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। পূর্বপুরুষরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত অর্ধশতাব্দী ধরে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নড়াইল, যশোর, খুলনা, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখানে এসে কাপড় কিনে নিয়ে যায়। এখানকার পোশাকের সুনাম দেশজুড়ে। এখন চলছে ঈদের শেষ সময়ের পোশাক তৈরির ব্যস্ততা। নায়রা, সুতি কটন, নেটসহ বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তৈরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ বিসিক কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক মো. আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, এই পোশাক পল্লীতে অন্তত ২০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ধারাটি অব্যাহত থাকলে এক সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট ছোট গার্মেন্টস। যেটাকে আমরা মিনি গার্মেন্টস বলে থাকি। নিজেদের পরিবারের বসবাসের জন্য ছোট ঘরের ভেতরে তারা ছোট পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সব মিলিয়ে অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার কারখানা রয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্যের যে গুণগত মান তা অত্যন্ত চমৎকার। বিশেষ করে বিভিন্ন মৌসুমে তারা এই পণ্যগুলো টার্গেট করে থাকে। দেশব্যাপী তাদের ব্যবসা রয়েছে। এই ঈদ মৌসুমে ৩০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট রয়েছে তাদের।

মুন্সীগঞ্জে দুই হাজার মিনি গার্মেন্টসে ৩০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট

আপডেট সময় ০৭:৩০:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪

পোশাক তৈরির গ্রাম মুন্সীগঞ্জের সিপাহিপাড়ায় ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে মিনি গার্মেন্টস। এখানে রয়েছে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি পোশাক তৈরির ক্ষুদ্র কারখানা। এ বছর রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে ৩০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট এই পল্লিতে। পোশাক তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সেখানকার কারিগররা। রাজধানীর বড় বড় বিপণিবিতানে সরবরাহ করা হচ্ছে এখানকার তৈরি পোশাক।

ছোট ছোট ঘরেই সব হচ্ছে। রং-বেরঙের পোশাক তৈরি হচ্ছে রাতদিন। ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক সব প্রযুক্তি। কম্পিউটারাইজড অ্যামব্রয়ডারি মেশিন ব্যবহার করে চমৎকার সব ডিজাইন করা হচ্ছে। এরপর কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে পোশাক। কাপড় কাটা, সেলাই, ডিজাইন এবং প্যাকিংয়ের পর নামকরা বিপণিবিতানগুলোতে বাজারজাত করা হয়। অনেক পাইকার সরাসরি রেডিমেড পোশাক কেনার জন্যও এখানে আসেন। ঈদ ঘিরে এখানকার গার্মেন্টসগুলোতে এবারের ঈদে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট।

গার্মেন্টস মালিক সেলিম বেপারী বলেন, এখানে তৈরি পোশাকের হাটের ব্যবস্থা হলে এলাকার অর্থনীতি আরও সচল হবে। ঈদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার দুই সহস্রাধিক খুদে কলকারখানায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। রেডিমেড পোশাকপল্লী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে এলাকাটি। উন্নতমানের কাপড় দিয়ে নানা রঙ ও ডিজাইনের পোশাক তৈরি হচ্ছে এখানে। ঢাকার অদূরে রামপাল ইউনিয়নের সিপাহিপাড়াসহ কাঁঠালতলা, শাখারি বাজার, চৌগাড়ারপাড়, দালালপাড়া, সুখবাসপুর ও পঞ্চসার ইউনিয়নের তেলেরবিল, রামেরগাঁও, ভট্টাচার্যেরবাগ ও দেওয়ান বাজার এবং মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার গোয়ালঘুন্নী, দর্গাহবাড়ি, গ্রামে গড়ে উঠেছে এসব মিনি গার্মেন্টস।

এখানকার তৈরি পোশাক ঢাকার সদরঘাট, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বড় বড় পাইকারি মার্কেট হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপণিবিতানগুলোতে।

ভারত থেকে কিছু স্যাম্পল এনে কাটিং করে সেগুলো তৈরি করা হয়। অর্ডার নেওয়ার সময় প্রায় শেষের দিকে। ২৭ রোজা পর্যন্ত চলবে ঈদের এই কর্মব্যস্ততা। নায়রা, পার্টি জর্জেট, আলেয়া, বাদুর—এসব বাহারি পোশাকের চাহিদা বেশি। তিন-চার মাস ধরে পাইকাররা এসে এসব পোশাকের অর্ডার দেয়। এসব মালামালের জন্য পাইকার আসেন যশোর, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা থেকে। এসব পোশাকের এত চাহিদা যে, অনেক পাইকার এসে ফেরত গেছেন। ঢাকা থেকে কাপড় এনে বাহারি এসব পোশাক তৈরি করে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় নিয়ে পাইকারি দামে বিক্রি করেন অনেকে।

কারিগর শরিফ হোসেন জানান, রাজধানী ঢাকা থেকে কাপড় এনে পোশাক তৈরি করে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় নিয়ে পাইকারি দামে বিক্রি করছি। আর সেখান থেকে অনেক পাইকার নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়।

অপর শ্রমিক আরিফ হোসেন বলেন, আমি এই এলাকার তৈরি পোশাক ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশনের কাজ করি। প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কাজ করতে পারি। এ পেশায় পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন ভালো আছি।

শেখ ব্রাদার্স এর মালিক মো. দুলাল হোসেন বলেন, সুতি জর্জেট সব ধরনের মাল এখানে আমরা সেলাই করি। জর্জেট সুতি দুইটা মালই এ বছর ভালো চলতেছে। তবে এ বছর মালের দামটা একটু বেশি। কাপড়ের দাম বেশি হওয়াতে মালের দাম বেশি পড়তেছে। বাধ্য হয়ে আমরা বেশি দামে বিক্রি করতেছি। আমরা মালগুলো ঢাকা নারায়ণগঞ্জে বিক্রি করি। ওখান থেকে সারা বাংলাদেশের খুচরা পাইকাররা এসে নিয়ে যায়। আমরা হোলসেল বিক্রি করি সারা বাংলাদেশে আমাদের মালটা যায়।

গার্মেন্টস মালিক আশরাফ আলী জানান, রোজায় কাজের চাপ বেশি। দিনে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। পোশাককে বর্ণিল করতে কারিগররা নিপুণ হাতে যুক্ত করছেন রঙ-বেরঙের লেইস ও পুঁতি। কাপড় কাটা, সেলাই, ডিজাইন নিয়ে এখন দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। পূর্বপুরুষরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত অর্ধশতাব্দী ধরে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নড়াইল, যশোর, খুলনা, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখানে এসে কাপড় কিনে নিয়ে যায়। এখানকার পোশাকের সুনাম দেশজুড়ে। এখন চলছে ঈদের শেষ সময়ের পোশাক তৈরির ব্যস্ততা। নায়রা, সুতি কটন, নেটসহ বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তৈরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ বিসিক কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক মো. আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, এই পোশাক পল্লীতে অন্তত ২০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ধারাটি অব্যাহত থাকলে এক সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট ছোট গার্মেন্টস। যেটাকে আমরা মিনি গার্মেন্টস বলে থাকি। নিজেদের পরিবারের বসবাসের জন্য ছোট ঘরের ভেতরে তারা ছোট পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সব মিলিয়ে অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার কারখানা রয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্যের যে গুণগত মান তা অত্যন্ত চমৎকার। বিশেষ করে বিভিন্ন মৌসুমে তারা এই পণ্যগুলো টার্গেট করে থাকে। দেশব্যাপী তাদের ব্যবসা রয়েছে। এই ঈদ মৌসুমে ৩০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট রয়েছে তাদের।