ঢাকা , সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের সাহারা আর ডেসটিনি কি এক?

ভারতের সাহারা গ্রুপ একটি সমবায় সমিতি বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের সাথে গ্রাহকদের ছিল সমন্নয়ের অভাব। তাদের মালিক সুব্রত রায়কে চিনতো না লগ্নিকারীরা। তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে ধারনা ছিল না সাহারার লগ্নিকারীদের। অথচ ডেসটিনির কর্মকান্ড ছিল স্বচ্ছতা। ডেসটিনির পরিচালকরা কোম্পানীর সম্পদ ক্রয় বিক্রয় সহ সব বিষয়ে গ্রাহকদের অবহিত করতেন। কোম্পানীর এম,ডি ও চেয়ারম্যান তাদের পরিকল্পনা সহ কোম্পানীর উন্নয়নে আগামী দিনের তাদের প্রতিষ্ঠানের কি করনীয় তা নিয়ে ক্রেতা পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীদের নিকট শেয়ার করতেন। প্রতিটি সেমিনারে ডেসটিনির এম,ডি মোঃ রফিকুল আমীন গ্রাহকদের অবহিত করতেন এবং নিতেন তাদের মতামত। ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কারনে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ডেসটিনি গত ১২ বছরে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ লাখের বেশী। গ্রাহকদের সাথে কোম্পানীর এম,ডি ও চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের সুসম্পর্কের কারনে ডেসটিনির প্রতি মানুষের আস্তা ও বিশ্বাস বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। অথচ ভারতের সাহারা গ্রুপের মালিক বা পরিচালকদের সাথে লগ্নিকারীদের সমন্নয়হীনতার কারনে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের ফলশ্রুতিতে সাহারার গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা ফেরৎ এর দাবিতে রাজপথে নামে আন্দোলন সহ মামলা করে আদালতে ।
২০১২ সালের আগস্টে সাহারা রিয়েল এস্টেট ও সাহারা হাউজিং সংস্থাকে সুদসহ প্রায় ২৪ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে না মানায় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (সেবি) আদালতে আবেদনের পর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
পরে ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লখনৌ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পর গ্রেফতার হন সুব্রত রায়। পরবর্তীতে নগদ ৫ হাজার কোটি রুপি জমা দিতে পারলে ও ৫ হাজার কোটি রুপির ব্যাংক গ্যারান্টি পেলে জামিন দেওয়া হবে বলে আদালত শর্ত দেন। সে অনুসারে জেলে থেকে বসেই সম্পত্তি বিক্রি করে নগদ ৫ হাজার ১২০ কোটি রুপি ফেরত দিতে পেরেছেন সুব্রত রায়।
অন্যদিকে ডেসটিনি বা এর শীর্ষ কর্মকর্তা সহ পরিচালকদের বিরুদ্ধে ৪৫ লাখ ক্রেতা পরিবেশক ও বিনিয়োগকারী আজ পর্যন্ত কোন অভিযোগ বা মামলা করেননি। বরং ডেসটিনির কার্ষক্রম বন্ধ থাকায়  তারা রাজপথে গত ১১ বছর,৫ মাস,১১ দিন, মিছিল, সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন সহ  নানান অহিংস আন্দোলন অব্যহত রেখেছেন। সাহারার সাথে ডেসটিনির পার্থক্য এখানে সুব্রত রায় হলেন, ভারতের সাহারা গ্রুপের মালিক। আর
লগ্নিকারীরা টাকা ফেরৎ এর দাবিতে  রাজপথে অবস্থান নেয়। ফলে সাহারার মালিক সুব্রত রায় জেলে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশমতো টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হন।
অন্যদিকে ডেসটিনির ৪৫ লাখ গ্রাহক তাদের আমানত ফেরৎ চাইনা। তারা চাই তাদের কর্মসংস্থানে ফিরে যেতে।
৩১ জুলাই ২০১৬ সালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির বেঞ্চ আবেদনের শুনানিতে আপিল বিভাগ ডেসটিনির আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,আপনি সুব্রত রায়কে চেনেন? আইনজীবী কোনো জবাব না দেওয়ার পর আদালত বলেন, সুব্রত রায় হলেন ভারতের সাহারা গ্রুপের মালিক। তাদের অনেক কিছু (ব্যবসা) আছে। এমনকি সাহারা গ্রুপ আমাদের ক্রিকেট দলের স্পন্সরও ছিলেন। তাদের মালিক জেলে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশমতো টাকা ফেরত  দিচ্ছেন। তাকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। এমনকি তার মায়ের অসুস্থতাও আমলে নেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন।
সূত্রমতে জানা যায়, সাহারা গ্রপের প্রধান সুব্রত রায় চিট ফান্ড বা প্রতারনার মাধ্যমে সাধারন মানুষের অর্থ লোপাটের কারনে জেল খাটেন। সুব্রত রায় বাংলাদেশে এসে সাহারা লোগো লাগানো জার্সি উদ্বোধন করেছিলেন। বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেট অনুরাগী বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের গায়ে ভারতীয় এই প্রতারক সংস্থার জার্সি গায়ে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও  বিসিবি গ্রামীন ফোনের চেয়ে বেশি অর্থ পাওয়ার আশায় সাহারাকে বেছে নিয়েছিলো।
মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ মাস আগেই ভারতের ‘সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আম্বি ভ্যালি’র সঙ্গে
শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। এতে করে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে ‘সাহারা’ শব্দটি মুছে যায়। অন্যদিকে দুদকের কথিত মামলার শিকার হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মাল্টিলেভেল মাকেটিং কোম্পানী ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড। আজ ১১ বছর,৫ মাস,১১ দিন, ডেসটিনি আইনের জালে বন্দি। ডেসটিনির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর সাথে জড়িত দেশের ৪৫ লাখ ক্রেতা পরিবেশক ও বিনিয়োগকারী সহ সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩ মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ভারতের সাহারা আর ডেসটিনি কি এক?

আপডেট সময় ০২:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩
ভারতের সাহারা গ্রুপ একটি সমবায় সমিতি বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের সাথে গ্রাহকদের ছিল সমন্নয়ের অভাব। তাদের মালিক সুব্রত রায়কে চিনতো না লগ্নিকারীরা। তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে ধারনা ছিল না সাহারার লগ্নিকারীদের। অথচ ডেসটিনির কর্মকান্ড ছিল স্বচ্ছতা। ডেসটিনির পরিচালকরা কোম্পানীর সম্পদ ক্রয় বিক্রয় সহ সব বিষয়ে গ্রাহকদের অবহিত করতেন। কোম্পানীর এম,ডি ও চেয়ারম্যান তাদের পরিকল্পনা সহ কোম্পানীর উন্নয়নে আগামী দিনের তাদের প্রতিষ্ঠানের কি করনীয় তা নিয়ে ক্রেতা পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীদের নিকট শেয়ার করতেন। প্রতিটি সেমিনারে ডেসটিনির এম,ডি মোঃ রফিকুল আমীন গ্রাহকদের অবহিত করতেন এবং নিতেন তাদের মতামত। ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কারনে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ডেসটিনি গত ১২ বছরে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ লাখের বেশী। গ্রাহকদের সাথে কোম্পানীর এম,ডি ও চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের সুসম্পর্কের কারনে ডেসটিনির প্রতি মানুষের আস্তা ও বিশ্বাস বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। অথচ ভারতের সাহারা গ্রুপের মালিক বা পরিচালকদের সাথে লগ্নিকারীদের সমন্নয়হীনতার কারনে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের ফলশ্রুতিতে সাহারার গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা ফেরৎ এর দাবিতে রাজপথে নামে আন্দোলন সহ মামলা করে আদালতে ।
২০১২ সালের আগস্টে সাহারা রিয়েল এস্টেট ও সাহারা হাউজিং সংস্থাকে সুদসহ প্রায় ২৪ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে না মানায় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (সেবি) আদালতে আবেদনের পর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
পরে ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লখনৌ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পর গ্রেফতার হন সুব্রত রায়। পরবর্তীতে নগদ ৫ হাজার কোটি রুপি জমা দিতে পারলে ও ৫ হাজার কোটি রুপির ব্যাংক গ্যারান্টি পেলে জামিন দেওয়া হবে বলে আদালত শর্ত দেন। সে অনুসারে জেলে থেকে বসেই সম্পত্তি বিক্রি করে নগদ ৫ হাজার ১২০ কোটি রুপি ফেরত দিতে পেরেছেন সুব্রত রায়।
অন্যদিকে ডেসটিনি বা এর শীর্ষ কর্মকর্তা সহ পরিচালকদের বিরুদ্ধে ৪৫ লাখ ক্রেতা পরিবেশক ও বিনিয়োগকারী আজ পর্যন্ত কোন অভিযোগ বা মামলা করেননি। বরং ডেসটিনির কার্ষক্রম বন্ধ থাকায়  তারা রাজপথে গত ১১ বছর,৫ মাস,১১ দিন, মিছিল, সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন সহ  নানান অহিংস আন্দোলন অব্যহত রেখেছেন। সাহারার সাথে ডেসটিনির পার্থক্য এখানে সুব্রত রায় হলেন, ভারতের সাহারা গ্রুপের মালিক। আর
লগ্নিকারীরা টাকা ফেরৎ এর দাবিতে  রাজপথে অবস্থান নেয়। ফলে সাহারার মালিক সুব্রত রায় জেলে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশমতো টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হন।
অন্যদিকে ডেসটিনির ৪৫ লাখ গ্রাহক তাদের আমানত ফেরৎ চাইনা। তারা চাই তাদের কর্মসংস্থানে ফিরে যেতে।
৩১ জুলাই ২০১৬ সালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির বেঞ্চ আবেদনের শুনানিতে আপিল বিভাগ ডেসটিনির আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,আপনি সুব্রত রায়কে চেনেন? আইনজীবী কোনো জবাব না দেওয়ার পর আদালত বলেন, সুব্রত রায় হলেন ভারতের সাহারা গ্রুপের মালিক। তাদের অনেক কিছু (ব্যবসা) আছে। এমনকি সাহারা গ্রুপ আমাদের ক্রিকেট দলের স্পন্সরও ছিলেন। তাদের মালিক জেলে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশমতো টাকা ফেরত  দিচ্ছেন। তাকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। এমনকি তার মায়ের অসুস্থতাও আমলে নেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন।
সূত্রমতে জানা যায়, সাহারা গ্রপের প্রধান সুব্রত রায় চিট ফান্ড বা প্রতারনার মাধ্যমে সাধারন মানুষের অর্থ লোপাটের কারনে জেল খাটেন। সুব্রত রায় বাংলাদেশে এসে সাহারা লোগো লাগানো জার্সি উদ্বোধন করেছিলেন। বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেট অনুরাগী বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের গায়ে ভারতীয় এই প্রতারক সংস্থার জার্সি গায়ে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও  বিসিবি গ্রামীন ফোনের চেয়ে বেশি অর্থ পাওয়ার আশায় সাহারাকে বেছে নিয়েছিলো।
মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ মাস আগেই ভারতের ‘সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আম্বি ভ্যালি’র সঙ্গে
শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। এতে করে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে ‘সাহারা’ শব্দটি মুছে যায়। অন্যদিকে দুদকের কথিত মামলার শিকার হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মাল্টিলেভেল মাকেটিং কোম্পানী ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড। আজ ১১ বছর,৫ মাস,১১ দিন, ডেসটিনি আইনের জালে বন্দি। ডেসটিনির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর সাথে জড়িত দেশের ৪৫ লাখ ক্রেতা পরিবেশক ও বিনিয়োগকারী সহ সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩ মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছে।