চলতি আমন মৌসুমি ধান কাটা শুরু হয়েছে। আশানুরূপ ফলন না হওয়াই উঠছে না উৎপাদন খরচ, ফলে বর্গাচাষিদের মাথায় হাত। কৃষকদের লোকসান গুণতে হচ্ছে বিঘাপ্রতি ৫ হাজার টাকা।
সোমবার (৬ নভেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। কেউ ধান কাটছেন, আবার কেউ ধান বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউবা জমিতে ও বাড়ির উঠানে ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মাসেই চৌগাছা উপজেলায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে শুরু হবে ধান কাটার মহোৎসব। ব্যস্ততম সময় কাটবে কৃষক-কৃষাণীদের।
ধানের দাম ভালো না থাকায় চাষিদের মন খারাপ। কোনো কোনো এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে কৃষি শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে বাজার ঘুরে জানা গেছে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে। ধানের দাম ভালো না হওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় আগাম জাতসহ ব্রি-৫১, ব্রি-৪৯, ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭, রডমিনিকেট, বিনা -১৭, স্বর্ণা ও প্রতীক জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন।
উপজেলার বাঘারদাড়ি গ্রামের কৃষক নুরুনব্বী বলেন, সার-কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় আর্থিক সংকটের মধ্যেও ধান চাষ করেছি। গত বছর এক বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লেগেছে। পোকার আক্রমণ আর নানা রোগবালাইয়ের পর এবারও আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। এবার প্রায় দুই গুণ বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে তবুও শ্রমিক সংকট। কার্তিক মাসে আগাম ধান পেয়ে কৃষকরাও খুশি। তবে বর্তমানে ধানের দাম তুলনামূলক অনেক কম।
সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ করেছি। আগাম ধান ঘরে উঠাতে পেরে খুশি। এবার অনেক ধার দেনা করে ধান চাষ করেছিলাম। ধানের দাম ভালো না পাওয়ায় দেনা শোধ করতে পারছি না। তিনি বলেন, এক বিঘা আমন ধানে জমি লীজ, বীজতলা তৈরি, জমি তৈরি, রোপণ, সার, ওষুধ, নিড়ানী, সেচ, কাটা, মাড়াই ও বহন বাবদ খরচ হয় প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এক বিঘায় ধানের ফলন হয়েছে গড়ে ১৫/১৬ মণ। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০/১২০০ টাকা। নিজের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম বাদ দিলেও প্রতি বিঘায় প্রায় ৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। ফলে বর্গাচাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। ধান চাষে যে খরচ হয়েছে তাতে কম পক্ষে ১৫শ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করতে পারলে ভাল হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। ধানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া ভালো তাই ধানের ফলন ভালো হবে।জ ইতোমধ্যে কৃষকরা ধান কাটতে শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি অধিদফতরের পক্ষ থেকে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হবে। এতে শ্রমিক সংকট অনেকটা কমে আসবে।