ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বক্তব্য

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণে বক্তব্য দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (আইন) মোহা. আব্দুল মাজিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বক্তব্য দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও কয়েকজন পরিলক নূর এ হাফজা, ফৌজিয়া কামরুন আনিয়া, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কো., শাফিয়া সোবহান চৌধুরী ও শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েলের কাছ থেকে কোনো টাকা গ্রহণ না করেই তাদের নামে প্রতিটি ১০ টাকা হারে মোট ৯,১৬,৫০,০০০ টাকার শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে। অন্যদিকে মায়া রাণী রায়, আহমেদ রাজীব সামদানী ও হোদা আলী সেলিমের কাছ থেকে শেয়ার প্রতি ২০ টাকা মূল্য গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও বলা হয়, কোম্পানির এফডিআর-এর বিপরীতে সাউথ বাংলা ব্যাংকে বিনা প্রয়োজনে এসওডি হিসাব খুলে ৮,৯৫,০০,০০০ টাকা উত্তোলন করে ও একই ব্যাংকে কোম্পানির সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ১,৫৫,০০০০০ টাকাসহ মোট ১০,৫০,০০০০০ টাকা উত্তোলন করে। পরে একই ব্যাংকে কোম্পানির হিসাবে জমা করা হয় যা পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের মূল্য হিসাবে প্রদর্শন করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দস তার ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান ও মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার কাছ থেকে ২৬,৮০,০০০টি শেয়ার, মোস্তফা কামরুস সোবহান স্ত্রী শাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছ থেকে ৩০০,০০০টি শেয়ার, তাসনিয়া কামরুন অনিকা স্বামী শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েলের নিকট থেকে ১২,০০,০০০টি এবং ফজিলাতুননেসা রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ৬,২৫,০০০টি শেয়ার লাভ করে পরিচালক হন। পরবর্তীতে মোস্তফা গোলাম কুদ্দস ১৪,৮০,০০০টি শেয়ার তার মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়াকে ও ২,৩০,০০০ টি শেয়ার স্ত্রী ফজিলাতুননেসাকে এবং শাফিয়া সোবহান চৌধুরী তার স্বামী মোস্তফা কামরুস সোবহানকে ৬,৫০,০০০টি শেয়ার হস্তান্তর করে কোম্পানির আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শেয়ার বজায় রাখেন। এর মাধ্যমে পরিবারের ৭ জন সদস্য কোম্পানির বোর্ডে পরিচালক রেখে পারিবারিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে অনিয়মের সুযোগ তৈরি করে।

২০২৩ সালে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩,০০,০০,০০০ টাকা হিসাবে মোট ১৮ কোটি টাকা কোম্পানির জনতা ব্যাংকের রামপুরা শাখা থেকে সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটারের অনুকূলে জনতা ব্যাংকের মতিঝিল কর্পোরেট শাখার হিসাবে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে প্রদান করা হয়েছে। এই অর্থ পরিশোধের ব্যাংক অ্যাডভাইজ/চেক যৌথভাবে স্বাক্ষর করেছেন ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ও মীর রাশেদ বিন আমান, নুর এ হাফজা ও মীর রাশেদ বিন আমান, শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েল ও মীর রাশেদ বিন আমান, ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ও মীর রাশেদ বিন আমান এবং শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েল ও মীর রাশেদ বিন আমান। যাদের মধ্যে নুর এ হাফজা বাদে সকলেই গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সদস্য। এ শখ মোহম্মদ ড্যানিয়েল তার আগেই (১৮ এপ্রিল ২০২২) পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন অর্থাৎ পরিচালক না হয়েও ব্যাংক অ্যাডভাইজ/চেক স্বাক্ষর করেছেন যা প্রতারণামূলক ও বেআইনি।

বোর্ড সভার কার্যবিবরণীর জাল উদ্ধৃতাংশ দাখিল করে কোম্পানির এফডিআর-এর বিপরীতে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দেখিয়ে সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৯৫,৪২,৮১,২০০ টাকা ঋণ গ্রহণ এবং তার মধ্যে ৮৩,৯৯,০০,০০০ টাকা কোম্পানির বিভিন্ন একাউন্টে কয়েকবার স্থানান্তরের পর মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হয়েছে। যা জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং ও অর্থ আত্মসাৎ এবং ব্যাংকের ঋণের সুদ পরিশোধের দ্বারা (ইতিমধ্যে ১৮, ২৯,০৭৪৯৮ টাকা) কোম্পানি/বীমা গ্রহীতাদের ক্ষতি সাধন হচ্ছে।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল ভবন কোম্পানি কর্তৃক ক্রয়ের জন্য স্বাক্ষরিত ২টি সমঝোতা চুক্তির ফটোকপি তদন্তকালে শাওয়া যায়। এর মধ্যে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত চুক্তিতে জমি ও ভবনের মূল্য ৩৫০ কোটি টাকা এবং ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তিতে মূল্য ১১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা মূল্য উল্লেখ আছে। উভয় চুক্তিই স্বাক্ষরকারী রাশেদ বিন আমান ( প্রথম পক্ষ) ও মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ (দ্বিতীয় পক্ষ) এবং সাক্ষী হলেন নূর এ হাফজা ও মোস্তফা কামরুস সোবহান। জমি/ভবনের ক্রয়ের উদ্দেশ্য, মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, ধার্যকৃত মূল্য ও অন্যান্য শর্ত নির্দিষ্ট করে সমঝোতা চুক্তি দুটির কোনোটির বিষয়েই বোর্ডের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

কোম্পানির বুক অব অ্যাকাউন্টস, লেজার, ইত্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়-মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লি:, ড্রাগন সোয়েটার লি., ইম্পেরিয়াল সোয়েটার লি. ও ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লি: বরাবর বিভিন্ন সময়ে ১৪১,৫৬,৯০,৫০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। অ্যাকাউন্ট হেডে ‘মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস (ল্যান্ড ওনার, পরিশোধ শুরু ০৮/০১/২৩)’, ‘অ্যাডভান্স এগেইন্সট ল্যান্ড (পরিশোধ শুরু ১৬/১১/২১)’, ও ‘সোনালী লাইফ টাওয়ার (পরিশোধ শুরু ১/১০/২১)’ লেখা আছে।

স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ের নিমিত্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পূর্বে (কথিত সমঝোতা চুক্তি তাং ১২/১২/২০২২ স্বাক্ষরের পূর্বে) অগ্রিম পরিশোধ অবৈধ। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির ১৪১,৫৬,৯০,৫০০ টাকা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে প্রদান করা হয়েছে এবং জমি/ভবন ক্রয়ের অগ্রিম হিসেবে বৈধতা দেওয়ার অপপ্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

ইম্পেরিয়াল ভবনের জমির মালিকানা/ভবন নির্মাণের অনুমতি যাচাইয়ের জন্য দলিল/দলিলের সই মুহরি নকলের ফটোকপি দাখিল করলেও চাহিদা মাফিক মূল দলিল, বায়া দলিল, খতিয়ান/নামজারি, ভূমিকর পরিশোধের রসিদ পাওয়া যায় নি এবং ৭ কাঠা জমির ওপর ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকের অনুমোদন পাওয়া গেলেও অবশিষ্ট ৫.৫০ কাঠার (প্লটনং ৬৮-৬৯, ব্লক-বি, খিলগাও পুনর্বাসন এলাকা) বরাদ্দপত্র, লীজ চুক্তি ও ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেই, ফলে জমির মালিকানা নিষ্কণ্টক নয় ও ভবনের বৈধতা প্রশ্নসাপেক্ষ।

কোম্পানির তহবিল থেকে ২০২১-২৩ মেয়াদে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছের মালিকানাধীন ড্রাগন সোয়েটার লি. কে সোয়েটার ক্রয় বাবদ ২,৬৫,০০,০০০ টাকা, ইম্পেরিয়াল স্যুটস অ্যান্ড কনভোকেশন সেন্টারকে আপ্যায়ন বাবদ ১,৭৮,৬২,৫৯২ টাকা এবং ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লি: কে ইআরপি মেইনটেনেন্স ও সোয়েটার ক্রয় বাবদ ৩,৪২,০৬,২২৫ টাকা অর্থাৎ মোট ৭,৮৫,৬৮,৮১৭ টাকা অবৈধভাবে প্রদান।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ নিজে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ও তার পরিবারের ৬ সদস্য যথা: ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া (কন্যা) প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, তাসনিয়া কামরুন অনিকা (কন্যা) প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, মোস্তফা কামরুস সোবহান (পুত্র) প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকা, শাফিয়া সোবহান চৌধুরী (পুত্রবধূ) প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা, ফজলুতুননেসা (স্ত্রী) প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ও শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল (মেয়ের জামাই) প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা এবং আরেকজন সাবেক চেয়ারম্যান নুর এ হাফজা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে মোট ৮ জন পরিচালক অবৈধভাবে বেতন হিসাবে এ পর্যন্ত মোট ২,২৪,০০,০০০ টাকা গ্রহণ করেছেন যা নগদ উত্তোলন করে তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছে।

আইডিআরএ-এর সার্কুলার অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৮৫ লক্ষ টাকায় চেয়ারম্যানের জন্য ১ টি জিপ ও ৪৫ লক্ষ টাকায় সিইও-র জন্য কার কেনার বিধান থাকলেও তা অমান্য করে গত ২০১৮ সালের ৬ মে সালের ১.৭০ কোটি টাকায় একটি বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় করা হয় যা চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যগণ কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। ২০২১-২৩ মেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২১,৫২,৫০৫ টাকা ব্যয় করা হয়। গাড়ি ক্রয়ের বিষয়ে বোর্ড বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই এবং গাড়ির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কোম্পানির অর্ধ বার্ষিক সভায় আলোচনা ও এজিএম এ পেশ করার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি।

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কোম্পানির ডিভিডেন্ড যথাক্রমে ৫,১০,১০,১৫ ও ২০ শতাংশ প্রদান করা হয়। ডিভিডেন্ড পরিশোধ যথাযথভাবে যাচাইয়ের জন্য চাহিদা মাফিক ভাউচার ও কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়নি। কিন্তু এর অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড বাবদ বিবিধ খাত থেকে রূপালী ইন্স্যুরেন্স কো-কে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ৮১,৫০,০০০ টাকা, ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর ৭২,৮০,০০০ টাকা এবং নূর এ হাফজাকে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর ৫,৮০,০০০ টাকাসহ মোট ১,৬০,১০,৭৫০ টাকা পরিশোধ করা হয় যা অবৈধ।

কোম্পানির আর্থিক বিবরণী ও বিভিন্ন লেজার যাচাই করে দেখা যায় যে, চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের বিদেশে চিকিৎসার খরচবাবদ ১,০৮,৭৫,৮০০ টাকা, ভ্রমণ ও শপিং বাবদ ৩,৭৬,৪৮০ টাকা এবং মেয়ের বিদেশে পড়াশোনা ব্যয় বাবদ ৪৫,১৫,০০০ টাকাসহ মোট ১,৫৮,৬৭,২৮০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলেন করে পেটিক্যাশ খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে অর্থাৎ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অবৈধভাবে কোম্পানির তহবিল হতে টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

কোম্পানির বুকস অব অ্যাউন্টস থেকে দেখা যায় যে, পরিচালক, শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলকে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার ওনার অ্যাসোসিয়েশনের গ্রুপ বীমা পলিসি থেকে অবৈধভাবে ৯,০০,০০০ টাকা কমিশন প্রদান করা হয়েছে এবং আজেএসসি’তে বিভিন্ন তারিখে দাখিলকৃত ফর্ম-৩ ও বোর্ড সভার হাজিরা রেজিস্টার থেকে দেখা যায়।

যে, তিনি পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করে পরিচালক না থেকেও অবসর গ্রহণ করে পুনঃনির্বাচিত হন আবার পদত্যাগ করেন। তিনি পরিচালক না থাকাকালীন ১১ টি বোর্ড সভায় অবৈধভাবে অংশগ্রহণ ও ৮৮,০০০ টাকা সম্মানী গ্রহণ করেন এবং পরিচালক না হয়েও ব্যাংক হিসাবের সিগনেটরি থেকে কোম্পানির সিইও এর যৌথভাবে চেক স্বাক্ষর করেন যা সম্পূর্ণ অবৈধ, নমুনা হিসেবে বিভিন্ন তারিখের ১১টির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে যাতে জড়িত টাকার পরিমাণ ৩০,৮০,০০,০০০ টাকা এবং এ সকল অর্থই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে।

কোম্পানির বুক অব একাউন্টস্, সিস্টেম জেনারেটেড ভাউচার ইত্যাদি থেকে দেখা যায় যে, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ব্যক্তিগত ঋণ সমন্ব্যয় বাবদ ২০১৬-১৮ সালে ১১ টি ভাউচারে (৬টি পেটি ক্যাশ ও ২টি নগদ ঢেকে) ৬২,৫০,০০০ টাকা, বিজিএমইকে অনুদান (২ টি ভাউচার-পেটি ক্যাশ থেকে) ৫২,৫০০ টাকা, এসি (অনিকার জন্য) ক্রয় (২টি চেক) ১,৮১,৭৭৮ টাকা, বিবাহ বার্ষিকীর উপহার বাবদ (১ টি চেক)) ১৫,০০,০০০ টাকা, এমডির জন্মদিন উদযাপনের সাজসজ্জা, ডায়মন্ড রিং ইত্যাদি বাবদ (৪টি ভাউচার) ১১,৭৫,০০০ টাকা, অনুষ্ঠান, ২০২২ সালে চেয়ারম্যানের কোরবানির গরু ও ২০২৩ সালে ঈদে এতিমখানার জন্য গরু ক্রয় বাবদ ৯,২৭,০০০ টাকা, পারিবারিক বিনোদন, সোনারগাও হোটেলের বিল ও ফ্যান্টাসি কিংডম ভ্রমণ বায় ৩,৪২,২৪০ টাকা, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিদেশ (লন্ডন, দুবাই ইত্যাদি) ভ্রমণ ব্যয় ৪,৯৮,৯৪,৩৬১ টাকা, আইপিও খরচের নামে অতিরিক্ত (৪টি নগদ চেক) ১৯,০০,০০,০০০ টাকা, পলিসি নবায়ন উপহার বাবদ নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য ১,৫২,৬৭,২০০ টাকা। এরমধ্যে ড্রাগন আইটিকে (৫ টি ঢেক) ১,২৩,৪৪,৮০০ টাকা সর্বমোট ৮,২৬,৬৭,৮৫৯ টাকা প্রদান করা হয়েছে যা অবৈধ ও কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোম্পানির অফিসের জন্য মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল ভবনের ২০১৩ সালে ৫টি, ২০১৪ সালে ৭টি, ২০১৫ সালে ৯টি ও ২০১৬ সালে ১০টি এবং ২০১৭ সাল থেকে ১৬ টি ফ্লোর (যা কর্মচারী প্রতি ১,০০০ বর্গফুটের বেশি) ভাড়ার চুক্তি দেখিয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভাড়া বাবদ ১১,৯৪,২০,০১৭ টাকা ড্রাগন অবৈধভাবে আইটিকে প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩ প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি নতুন কোম্পানির জন্য অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় পরিমাণ ফ্লোর স্পেস ভাড়া দেখিয়ে অবৈধভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে।

কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ইম্পেরিয়াল ভবনে (১) ইম্পেরিয়াল ক্যাফে (গ্রাউন্ড ফ্লোর), (২) ন্যাশনাল ব্যাংক লি. (ফার্স্ট ফ্লোর), (৩) ইস্পেরিয়াল স্যুটস এন্ড কনভেনশন সেন্টার (৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ফ্লোর), (৪) স্টার্লিং স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লি. ইম্পেরিয়াল ক্যাফে (১১তম ফ্লোর), (৫) রূপালী ইন্স্যুরেন্স কো. (১১তম ফ্লোর), (৬) ইম্পেরিয়াল হেল্থ ক্লাব (জিম) আছে, ন্যাশনাল ব্যাংক লি. ছাড়া এদের ভাড়া সংক্রান্ত কোনো তথ্যাদি সরবরাহ করা হয়নি। অধিকন্তু পুরো ভবনের বিদ্যুৎ ও ওয়াসার সোনালী লাইফ কো. থেকে অবৈধভাবে পরিশোধ করা হয়েছে, ডিপিডিসির প্রাপ্ত ৩৪টি বিল ও ঢাকা ওয়াসার প্রাপ্ত মাত্র ২টি বিলের মাধ্যমে মোট ১,৭২,৪২,২২৩ টাকা পরিশোধ করে কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। কোম্পানির সিস্টেম জেনারেটেড ভাউচার থেকে দেখা যায় যে, ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লি.-এর ট্যাক্স বাবদ কোম্পানির বিবিধ খাত হতে ১৩,৭৫,০০০ টাকা উপকর কমিশনার,  পরিশোধ করা হয়েছে।

বীমাকারীর কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে ওই বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, বীমা আইন মোতাবেক এ বিষয়ে বোর্ডের কোনো বক্তব্য থাকলে তা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিলের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এছাড়া মৌখিক শুনানিতে ইচ্ছুক হলে আগামী ১৮ এপ্রিল সকাল ১১টার মধ্যে কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে উপস্থিত থাকার জন্য ওই বিজ্ঞপ্তি বলা হয়।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বক্তব্য

আপডেট সময় ০৪:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণে বক্তব্য দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (আইন) মোহা. আব্দুল মাজিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বক্তব্য দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও কয়েকজন পরিলক নূর এ হাফজা, ফৌজিয়া কামরুন আনিয়া, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কো., শাফিয়া সোবহান চৌধুরী ও শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েলের কাছ থেকে কোনো টাকা গ্রহণ না করেই তাদের নামে প্রতিটি ১০ টাকা হারে মোট ৯,১৬,৫০,০০০ টাকার শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে। অন্যদিকে মায়া রাণী রায়, আহমেদ রাজীব সামদানী ও হোদা আলী সেলিমের কাছ থেকে শেয়ার প্রতি ২০ টাকা মূল্য গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও বলা হয়, কোম্পানির এফডিআর-এর বিপরীতে সাউথ বাংলা ব্যাংকে বিনা প্রয়োজনে এসওডি হিসাব খুলে ৮,৯৫,০০,০০০ টাকা উত্তোলন করে ও একই ব্যাংকে কোম্পানির সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ১,৫৫,০০০০০ টাকাসহ মোট ১০,৫০,০০০০০ টাকা উত্তোলন করে। পরে একই ব্যাংকে কোম্পানির হিসাবে জমা করা হয় যা পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের মূল্য হিসাবে প্রদর্শন করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দস তার ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান ও মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার কাছ থেকে ২৬,৮০,০০০টি শেয়ার, মোস্তফা কামরুস সোবহান স্ত্রী শাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছ থেকে ৩০০,০০০টি শেয়ার, তাসনিয়া কামরুন অনিকা স্বামী শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েলের নিকট থেকে ১২,০০,০০০টি এবং ফজিলাতুননেসা রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ৬,২৫,০০০টি শেয়ার লাভ করে পরিচালক হন। পরবর্তীতে মোস্তফা গোলাম কুদ্দস ১৪,৮০,০০০টি শেয়ার তার মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়াকে ও ২,৩০,০০০ টি শেয়ার স্ত্রী ফজিলাতুননেসাকে এবং শাফিয়া সোবহান চৌধুরী তার স্বামী মোস্তফা কামরুস সোবহানকে ৬,৫০,০০০টি শেয়ার হস্তান্তর করে কোম্পানির আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শেয়ার বজায় রাখেন। এর মাধ্যমে পরিবারের ৭ জন সদস্য কোম্পানির বোর্ডে পরিচালক রেখে পারিবারিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে অনিয়মের সুযোগ তৈরি করে।

২০২৩ সালে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩,০০,০০,০০০ টাকা হিসাবে মোট ১৮ কোটি টাকা কোম্পানির জনতা ব্যাংকের রামপুরা শাখা থেকে সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটারের অনুকূলে জনতা ব্যাংকের মতিঝিল কর্পোরেট শাখার হিসাবে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে প্রদান করা হয়েছে। এই অর্থ পরিশোধের ব্যাংক অ্যাডভাইজ/চেক যৌথভাবে স্বাক্ষর করেছেন ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ও মীর রাশেদ বিন আমান, নুর এ হাফজা ও মীর রাশেদ বিন আমান, শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েল ও মীর রাশেদ বিন আমান, ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ও মীর রাশেদ বিন আমান এবং শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েল ও মীর রাশেদ বিন আমান। যাদের মধ্যে নুর এ হাফজা বাদে সকলেই গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সদস্য। এ শখ মোহম্মদ ড্যানিয়েল তার আগেই (১৮ এপ্রিল ২০২২) পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন অর্থাৎ পরিচালক না হয়েও ব্যাংক অ্যাডভাইজ/চেক স্বাক্ষর করেছেন যা প্রতারণামূলক ও বেআইনি।

বোর্ড সভার কার্যবিবরণীর জাল উদ্ধৃতাংশ দাখিল করে কোম্পানির এফডিআর-এর বিপরীতে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দেখিয়ে সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৯৫,৪২,৮১,২০০ টাকা ঋণ গ্রহণ এবং তার মধ্যে ৮৩,৯৯,০০,০০০ টাকা কোম্পানির বিভিন্ন একাউন্টে কয়েকবার স্থানান্তরের পর মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হয়েছে। যা জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং ও অর্থ আত্মসাৎ এবং ব্যাংকের ঋণের সুদ পরিশোধের দ্বারা (ইতিমধ্যে ১৮, ২৯,০৭৪৯৮ টাকা) কোম্পানি/বীমা গ্রহীতাদের ক্ষতি সাধন হচ্ছে।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল ভবন কোম্পানি কর্তৃক ক্রয়ের জন্য স্বাক্ষরিত ২টি সমঝোতা চুক্তির ফটোকপি তদন্তকালে শাওয়া যায়। এর মধ্যে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত চুক্তিতে জমি ও ভবনের মূল্য ৩৫০ কোটি টাকা এবং ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তিতে মূল্য ১১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা মূল্য উল্লেখ আছে। উভয় চুক্তিই স্বাক্ষরকারী রাশেদ বিন আমান ( প্রথম পক্ষ) ও মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ (দ্বিতীয় পক্ষ) এবং সাক্ষী হলেন নূর এ হাফজা ও মোস্তফা কামরুস সোবহান। জমি/ভবনের ক্রয়ের উদ্দেশ্য, মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, ধার্যকৃত মূল্য ও অন্যান্য শর্ত নির্দিষ্ট করে সমঝোতা চুক্তি দুটির কোনোটির বিষয়েই বোর্ডের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

কোম্পানির বুক অব অ্যাকাউন্টস, লেজার, ইত্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়-মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লি:, ড্রাগন সোয়েটার লি., ইম্পেরিয়াল সোয়েটার লি. ও ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লি: বরাবর বিভিন্ন সময়ে ১৪১,৫৬,৯০,৫০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। অ্যাকাউন্ট হেডে ‘মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস (ল্যান্ড ওনার, পরিশোধ শুরু ০৮/০১/২৩)’, ‘অ্যাডভান্স এগেইন্সট ল্যান্ড (পরিশোধ শুরু ১৬/১১/২১)’, ও ‘সোনালী লাইফ টাওয়ার (পরিশোধ শুরু ১/১০/২১)’ লেখা আছে।

স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ের নিমিত্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পূর্বে (কথিত সমঝোতা চুক্তি তাং ১২/১২/২০২২ স্বাক্ষরের পূর্বে) অগ্রিম পরিশোধ অবৈধ। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির ১৪১,৫৬,৯০,৫০০ টাকা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে প্রদান করা হয়েছে এবং জমি/ভবন ক্রয়ের অগ্রিম হিসেবে বৈধতা দেওয়ার অপপ্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

ইম্পেরিয়াল ভবনের জমির মালিকানা/ভবন নির্মাণের অনুমতি যাচাইয়ের জন্য দলিল/দলিলের সই মুহরি নকলের ফটোকপি দাখিল করলেও চাহিদা মাফিক মূল দলিল, বায়া দলিল, খতিয়ান/নামজারি, ভূমিকর পরিশোধের রসিদ পাওয়া যায় নি এবং ৭ কাঠা জমির ওপর ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকের অনুমোদন পাওয়া গেলেও অবশিষ্ট ৫.৫০ কাঠার (প্লটনং ৬৮-৬৯, ব্লক-বি, খিলগাও পুনর্বাসন এলাকা) বরাদ্দপত্র, লীজ চুক্তি ও ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেই, ফলে জমির মালিকানা নিষ্কণ্টক নয় ও ভবনের বৈধতা প্রশ্নসাপেক্ষ।

কোম্পানির তহবিল থেকে ২০২১-২৩ মেয়াদে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছের মালিকানাধীন ড্রাগন সোয়েটার লি. কে সোয়েটার ক্রয় বাবদ ২,৬৫,০০,০০০ টাকা, ইম্পেরিয়াল স্যুটস অ্যান্ড কনভোকেশন সেন্টারকে আপ্যায়ন বাবদ ১,৭৮,৬২,৫৯২ টাকা এবং ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লি: কে ইআরপি মেইনটেনেন্স ও সোয়েটার ক্রয় বাবদ ৩,৪২,০৬,২২৫ টাকা অর্থাৎ মোট ৭,৮৫,৬৮,৮১৭ টাকা অবৈধভাবে প্রদান।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছ নিজে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ও তার পরিবারের ৬ সদস্য যথা: ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া (কন্যা) প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, তাসনিয়া কামরুন অনিকা (কন্যা) প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, মোস্তফা কামরুস সোবহান (পুত্র) প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকা, শাফিয়া সোবহান চৌধুরী (পুত্রবধূ) প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা, ফজলুতুননেসা (স্ত্রী) প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা ও শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল (মেয়ের জামাই) প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা এবং আরেকজন সাবেক চেয়ারম্যান নুর এ হাফজা প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে মোট ৮ জন পরিচালক অবৈধভাবে বেতন হিসাবে এ পর্যন্ত মোট ২,২৪,০০,০০০ টাকা গ্রহণ করেছেন যা নগদ উত্তোলন করে তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছে।

আইডিআরএ-এর সার্কুলার অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৮৫ লক্ষ টাকায় চেয়ারম্যানের জন্য ১ টি জিপ ও ৪৫ লক্ষ টাকায় সিইও-র জন্য কার কেনার বিধান থাকলেও তা অমান্য করে গত ২০১৮ সালের ৬ মে সালের ১.৭০ কোটি টাকায় একটি বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় করা হয় যা চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যগণ কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। ২০২১-২৩ মেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২১,৫২,৫০৫ টাকা ব্যয় করা হয়। গাড়ি ক্রয়ের বিষয়ে বোর্ড বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই এবং গাড়ির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কোম্পানির অর্ধ বার্ষিক সভায় আলোচনা ও এজিএম এ পেশ করার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি।

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কোম্পানির ডিভিডেন্ড যথাক্রমে ৫,১০,১০,১৫ ও ২০ শতাংশ প্রদান করা হয়। ডিভিডেন্ড পরিশোধ যথাযথভাবে যাচাইয়ের জন্য চাহিদা মাফিক ভাউচার ও কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়নি। কিন্তু এর অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড বাবদ বিবিধ খাত থেকে রূপালী ইন্স্যুরেন্স কো-কে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ৮১,৫০,০০০ টাকা, ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর ৭২,৮০,০০০ টাকা এবং নূর এ হাফজাকে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর ৫,৮০,০০০ টাকাসহ মোট ১,৬০,১০,৭৫০ টাকা পরিশোধ করা হয় যা অবৈধ।

কোম্পানির আর্থিক বিবরণী ও বিভিন্ন লেজার যাচাই করে দেখা যায় যে, চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের বিদেশে চিকিৎসার খরচবাবদ ১,০৮,৭৫,৮০০ টাকা, ভ্রমণ ও শপিং বাবদ ৩,৭৬,৪৮০ টাকা এবং মেয়ের বিদেশে পড়াশোনা ব্যয় বাবদ ৪৫,১৫,০০০ টাকাসহ মোট ১,৫৮,৬৭,২৮০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলেন করে পেটিক্যাশ খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে অর্থাৎ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অবৈধভাবে কোম্পানির তহবিল হতে টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

কোম্পানির বুকস অব অ্যাউন্টস থেকে দেখা যায় যে, পরিচালক, শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলকে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার ওনার অ্যাসোসিয়েশনের গ্রুপ বীমা পলিসি থেকে অবৈধভাবে ৯,০০,০০০ টাকা কমিশন প্রদান করা হয়েছে এবং আজেএসসি’তে বিভিন্ন তারিখে দাখিলকৃত ফর্ম-৩ ও বোর্ড সভার হাজিরা রেজিস্টার থেকে দেখা যায়।

যে, তিনি পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করে পরিচালক না থেকেও অবসর গ্রহণ করে পুনঃনির্বাচিত হন আবার পদত্যাগ করেন। তিনি পরিচালক না থাকাকালীন ১১ টি বোর্ড সভায় অবৈধভাবে অংশগ্রহণ ও ৮৮,০০০ টাকা সম্মানী গ্রহণ করেন এবং পরিচালক না হয়েও ব্যাংক হিসাবের সিগনেটরি থেকে কোম্পানির সিইও এর যৌথভাবে চেক স্বাক্ষর করেন যা সম্পূর্ণ অবৈধ, নমুনা হিসেবে বিভিন্ন তারিখের ১১টির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে যাতে জড়িত টাকার পরিমাণ ৩০,৮০,০০,০০০ টাকা এবং এ সকল অর্থই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে।

কোম্পানির বুক অব একাউন্টস্, সিস্টেম জেনারেটেড ভাউচার ইত্যাদি থেকে দেখা যায় যে, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ব্যক্তিগত ঋণ সমন্ব্যয় বাবদ ২০১৬-১৮ সালে ১১ টি ভাউচারে (৬টি পেটি ক্যাশ ও ২টি নগদ ঢেকে) ৬২,৫০,০০০ টাকা, বিজিএমইকে অনুদান (২ টি ভাউচার-পেটি ক্যাশ থেকে) ৫২,৫০০ টাকা, এসি (অনিকার জন্য) ক্রয় (২টি চেক) ১,৮১,৭৭৮ টাকা, বিবাহ বার্ষিকীর উপহার বাবদ (১ টি চেক)) ১৫,০০,০০০ টাকা, এমডির জন্মদিন উদযাপনের সাজসজ্জা, ডায়মন্ড রিং ইত্যাদি বাবদ (৪টি ভাউচার) ১১,৭৫,০০০ টাকা, অনুষ্ঠান, ২০২২ সালে চেয়ারম্যানের কোরবানির গরু ও ২০২৩ সালে ঈদে এতিমখানার জন্য গরু ক্রয় বাবদ ৯,২৭,০০০ টাকা, পারিবারিক বিনোদন, সোনারগাও হোটেলের বিল ও ফ্যান্টাসি কিংডম ভ্রমণ বায় ৩,৪২,২৪০ টাকা, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিদেশ (লন্ডন, দুবাই ইত্যাদি) ভ্রমণ ব্যয় ৪,৯৮,৯৪,৩৬১ টাকা, আইপিও খরচের নামে অতিরিক্ত (৪টি নগদ চেক) ১৯,০০,০০,০০০ টাকা, পলিসি নবায়ন উপহার বাবদ নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য ১,৫২,৬৭,২০০ টাকা। এরমধ্যে ড্রাগন আইটিকে (৫ টি ঢেক) ১,২৩,৪৪,৮০০ টাকা সর্বমোট ৮,২৬,৬৭,৮৫৯ টাকা প্রদান করা হয়েছে যা অবৈধ ও কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোম্পানির অফিসের জন্য মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল ভবনের ২০১৩ সালে ৫টি, ২০১৪ সালে ৭টি, ২০১৫ সালে ৯টি ও ২০১৬ সালে ১০টি এবং ২০১৭ সাল থেকে ১৬ টি ফ্লোর (যা কর্মচারী প্রতি ১,০০০ বর্গফুটের বেশি) ভাড়ার চুক্তি দেখিয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভাড়া বাবদ ১১,৯৪,২০,০১৭ টাকা ড্রাগন অবৈধভাবে আইটিকে প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩ প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি নতুন কোম্পানির জন্য অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় পরিমাণ ফ্লোর স্পেস ভাড়া দেখিয়ে অবৈধভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে।

কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ইম্পেরিয়াল ভবনে (১) ইম্পেরিয়াল ক্যাফে (গ্রাউন্ড ফ্লোর), (২) ন্যাশনাল ব্যাংক লি. (ফার্স্ট ফ্লোর), (৩) ইস্পেরিয়াল স্যুটস এন্ড কনভেনশন সেন্টার (৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ফ্লোর), (৪) স্টার্লিং স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লি. ইম্পেরিয়াল ক্যাফে (১১তম ফ্লোর), (৫) রূপালী ইন্স্যুরেন্স কো. (১১তম ফ্লোর), (৬) ইম্পেরিয়াল হেল্থ ক্লাব (জিম) আছে, ন্যাশনাল ব্যাংক লি. ছাড়া এদের ভাড়া সংক্রান্ত কোনো তথ্যাদি সরবরাহ করা হয়নি। অধিকন্তু পুরো ভবনের বিদ্যুৎ ও ওয়াসার সোনালী লাইফ কো. থেকে অবৈধভাবে পরিশোধ করা হয়েছে, ডিপিডিসির প্রাপ্ত ৩৪টি বিল ও ঢাকা ওয়াসার প্রাপ্ত মাত্র ২টি বিলের মাধ্যমে মোট ১,৭২,৪২,২২৩ টাকা পরিশোধ করে কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। কোম্পানির সিস্টেম জেনারেটেড ভাউচার থেকে দেখা যায় যে, ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লি.-এর ট্যাক্স বাবদ কোম্পানির বিবিধ খাত হতে ১৩,৭৫,০০০ টাকা উপকর কমিশনার,  পরিশোধ করা হয়েছে।

বীমাকারীর কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে ওই বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, বীমা আইন মোতাবেক এ বিষয়ে বোর্ডের কোনো বক্তব্য থাকলে তা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিলের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এছাড়া মৌখিক শুনানিতে ইচ্ছুক হলে আগামী ১৮ এপ্রিল সকাল ১১টার মধ্যে কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে উপস্থিত থাকার জন্য ওই বিজ্ঞপ্তি বলা হয়।