ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই অস্বাভাবিক পাসপোর্ট পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ

ডেসটিনি নিউজঃ

ঢাকাসহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসসমূহে পূর্বের মতো গ্রাহক হয়রানি, ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা আর নাই বলিলেই চলে। আমাদের দেশে পাসপোর্ট-সেবার মানোন্নয়ন ঘটিয়াছে গত কয়েক বৎসরে। দেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও মিলিতেছে এবং বিভিন্ন বিমানবন্দরে ই-গেট সেবা চালু হওয়ায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হইতেছে। এই জন্য গড়িয়া তোলা হইয়াছে একাধিক ই-পাসপোর্ট কাউন্টার। গাজীপুরের মতো আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও এখন দালালদের দৌরাত্ম্য অনেকটা কমিয়া গিয়াছে বলিয়া জানা যায়। ডেলিভারি কাউন্টার ও ছবি তুলিবার বুথ বৃদ্ধি এবং পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগায় এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হইয়াছে। অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পাসপোর্টে অনিয়ম-দুর্নীতিও কমিয়াছে। হ্রাস পাইয়াছে জনসাধারণের ভোগান্তি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের আচরণেও পরিবর্তন আসিয়াছে। তাহারা সমস্যা সমাধানে অনেক সময় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেছেন। ইহাতে সরকারের রাজস্বও বাড়িতেছে। এমনকি রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস হইতে চাপ কমাইতে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী পাসপোর্ট অফিসসমূহের সীমানা বা এলাকা পুনর্নির্ধারণ করিয়া পরিপত্র জারি করিয়াছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সকল পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক ও সাধুবাদযোগ্য; কিন্তু এখনো পাসপোর্ট-সংক্রান্ত এমন কিছু জটিল বিষয় রহিয়াছে, যাহার আশু সমাধান একান্ত কাম্য।

একটি সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে যে, আড়াই লক্ষ পাসপোর্ট মালিকের হদিস মিলিতেছে না। পাসপোর্ট করিবার সময় যেই নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হইয়াছে সেইগুলির এখন মালিক না পাওয়া যাওয়াটা কি দুঃখজনক নহে? ইহার অর্থ হইল পাসপোর্টে যেই নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হইয়াছে, তাহার অধিকাংশই ভুয়া। আবার একই নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহারের ঘটনাও ঘটিয়াছে। অবশ্য পাসপোর্ট অধিদপ্তর সকল জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করিয়া চিঠি প্রদান করিয়াছে এবং ইহাতে অনেকের নিকট পাসপোর্ট হস্তান্তর করা সম্ভব হইতেছে; কিন্তু এইখানে একটি বড় প্রশ্ন হইল, এতত্সংখ্যক ব্যক্তির পাসপোর্ট মালিকের অনুসন্ধান পাওয়া যাইবে না কেন? ভুয়া পাসপোর্টের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। কেননা, এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলে ভুল বার্তা যাইতে পারে। এমনিতেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট লইয়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাইবার বহু নজির রহিয়াছে। তাহারা সেই সকল দেশে বিভিন্ন অপরাধের সহিত যখন জড়াইয়া পড়ে এবং সেইখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়, তখন বাংলাদেশেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এই জন্য কেহ ভুল নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর লইয়া পাসপোর্ট লাভ করুক, তাহা আমাদের মোটেও প্রত্যাশিত নহে। বলা হইতেছে, দালালদের কারণেই এই সমস্যা তৈরি হইয়াছে। তাহারা অনেক সময় চাহিদামতো পাসপোর্ট তৈরি করাইয়া লইলেও তাহা লওয়া হয় না বা আসল ব্যক্তিদের নিকট পৌঁছায় না। আবার সাধারণ ভুলভ্রান্তি হইতেও এই সমস্যার সৃষ্টি হইতে পারে। আমাদের বক্তব্য হইল—বিশেষ করিয়া নূতন পাসপোর্ট তৈরির পূর্বেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করিবার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা রহিয়াছে। তাহার পরও কীভাবে এইরূপ ভুল হইতে পারে?

পাসপোর্ট প্রক্রিয়া বর্তমানে অনেক সহজীকরণ হইয়াছে। এই সহজীকরণের অর্থ এই নহে যে, ইহাতে ভুয়া পাসপোর্টধারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাইবে। এই সংক্রান্ত বড় সমস্যাসমূহ কেন্দ্রীয় অফিসের সহিত আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। রিইস্যু আবেদনসমূহও যাহাতে দ্রুত সমাধান করা যায়, তাহার প্রচেষ্টা থাকা উচিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৃশ্যত দালালদের না দেখা গেলেও অদৃশ্যভাবে তাহাদের আনাগোনা বন্ধ হয় নাই। এই ক্ষেত্রে পাসপোর্ট প্রশাসনকে যেমন সতর্ক থাকিতে হইবে, তেমনি গ্রাহকদেরও সচেতন হইতে হইবে। কেহ যাহাতে পাসপোর্ট অফিসের কোনো কর্মকর্তার নাম ভাঙাইয়া কোনো প্রকার আর্থিক সুবিধা না লইতে পারে, সেই দিকে খেয়াল রাখিতে হইবে। বহিরাগত ও দালালদের চক্রব্যূহ ভাঙিয়া দিয়া পাসপোর্ট-সেবার আরো উন্নতি সাধন করিতে হইবে। কোনো প্রকার অভিযোগ উঠিলে প্রয়োজনে লইতে হইবে আইনগত ব্যবস্থা।

এই অস্বাভাবিক পাসপোর্ট পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ

আপডেট সময় ০৯:৩৬:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩

ডেসটিনি নিউজঃ

ঢাকাসহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসসমূহে পূর্বের মতো গ্রাহক হয়রানি, ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা আর নাই বলিলেই চলে। আমাদের দেশে পাসপোর্ট-সেবার মানোন্নয়ন ঘটিয়াছে গত কয়েক বৎসরে। দেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও মিলিতেছে এবং বিভিন্ন বিমানবন্দরে ই-গেট সেবা চালু হওয়ায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হইতেছে। এই জন্য গড়িয়া তোলা হইয়াছে একাধিক ই-পাসপোর্ট কাউন্টার। গাজীপুরের মতো আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও এখন দালালদের দৌরাত্ম্য অনেকটা কমিয়া গিয়াছে বলিয়া জানা যায়। ডেলিভারি কাউন্টার ও ছবি তুলিবার বুথ বৃদ্ধি এবং পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগায় এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হইয়াছে। অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পাসপোর্টে অনিয়ম-দুর্নীতিও কমিয়াছে। হ্রাস পাইয়াছে জনসাধারণের ভোগান্তি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের আচরণেও পরিবর্তন আসিয়াছে। তাহারা সমস্যা সমাধানে অনেক সময় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেছেন। ইহাতে সরকারের রাজস্বও বাড়িতেছে। এমনকি রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস হইতে চাপ কমাইতে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী পাসপোর্ট অফিসসমূহের সীমানা বা এলাকা পুনর্নির্ধারণ করিয়া পরিপত্র জারি করিয়াছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সকল পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক ও সাধুবাদযোগ্য; কিন্তু এখনো পাসপোর্ট-সংক্রান্ত এমন কিছু জটিল বিষয় রহিয়াছে, যাহার আশু সমাধান একান্ত কাম্য।

একটি সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে যে, আড়াই লক্ষ পাসপোর্ট মালিকের হদিস মিলিতেছে না। পাসপোর্ট করিবার সময় যেই নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হইয়াছে সেইগুলির এখন মালিক না পাওয়া যাওয়াটা কি দুঃখজনক নহে? ইহার অর্থ হইল পাসপোর্টে যেই নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হইয়াছে, তাহার অধিকাংশই ভুয়া। আবার একই নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহারের ঘটনাও ঘটিয়াছে। অবশ্য পাসপোর্ট অধিদপ্তর সকল জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করিয়া চিঠি প্রদান করিয়াছে এবং ইহাতে অনেকের নিকট পাসপোর্ট হস্তান্তর করা সম্ভব হইতেছে; কিন্তু এইখানে একটি বড় প্রশ্ন হইল, এতত্সংখ্যক ব্যক্তির পাসপোর্ট মালিকের অনুসন্ধান পাওয়া যাইবে না কেন? ভুয়া পাসপোর্টের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। কেননা, এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলে ভুল বার্তা যাইতে পারে। এমনিতেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট লইয়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাইবার বহু নজির রহিয়াছে। তাহারা সেই সকল দেশে বিভিন্ন অপরাধের সহিত যখন জড়াইয়া পড়ে এবং সেইখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়, তখন বাংলাদেশেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এই জন্য কেহ ভুল নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর লইয়া পাসপোর্ট লাভ করুক, তাহা আমাদের মোটেও প্রত্যাশিত নহে। বলা হইতেছে, দালালদের কারণেই এই সমস্যা তৈরি হইয়াছে। তাহারা অনেক সময় চাহিদামতো পাসপোর্ট তৈরি করাইয়া লইলেও তাহা লওয়া হয় না বা আসল ব্যক্তিদের নিকট পৌঁছায় না। আবার সাধারণ ভুলভ্রান্তি হইতেও এই সমস্যার সৃষ্টি হইতে পারে। আমাদের বক্তব্য হইল—বিশেষ করিয়া নূতন পাসপোর্ট তৈরির পূর্বেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করিবার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা রহিয়াছে। তাহার পরও কীভাবে এইরূপ ভুল হইতে পারে?

পাসপোর্ট প্রক্রিয়া বর্তমানে অনেক সহজীকরণ হইয়াছে। এই সহজীকরণের অর্থ এই নহে যে, ইহাতে ভুয়া পাসপোর্টধারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাইবে। এই সংক্রান্ত বড় সমস্যাসমূহ কেন্দ্রীয় অফিসের সহিত আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। রিইস্যু আবেদনসমূহও যাহাতে দ্রুত সমাধান করা যায়, তাহার প্রচেষ্টা থাকা উচিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৃশ্যত দালালদের না দেখা গেলেও অদৃশ্যভাবে তাহাদের আনাগোনা বন্ধ হয় নাই। এই ক্ষেত্রে পাসপোর্ট প্রশাসনকে যেমন সতর্ক থাকিতে হইবে, তেমনি গ্রাহকদেরও সচেতন হইতে হইবে। কেহ যাহাতে পাসপোর্ট অফিসের কোনো কর্মকর্তার নাম ভাঙাইয়া কোনো প্রকার আর্থিক সুবিধা না লইতে পারে, সেই দিকে খেয়াল রাখিতে হইবে। বহিরাগত ও দালালদের চক্রব্যূহ ভাঙিয়া দিয়া পাসপোর্ট-সেবার আরো উন্নতি সাধন করিতে হইবে। কোনো প্রকার অভিযোগ উঠিলে প্রয়োজনে লইতে হইবে আইনগত ব্যবস্থা।